হোম /খবর /দেশ /
‘ভালবাসা নয়, সবাই শুধু আমার শরীরটাকেই চাইত’

#377: ‘ভালবাসা নয়, সবাই শুধু আমার শরীরটাকেই চাইত’

  • Last Updated :
  • Share this:

#নয়াদিল্লি: এটাই ছিল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের প্রথম কথা ৷ শরীরে ২৬ বছরের তরতাজা এক তরুণ, কিন্তু মনেপ্রাণে সে এক যুবতী ৷ জীবন নিয়ে অনেক রঙিন স্বপ্ন ছিল তাঁর ৷ কিন্তু চলার পথ গেল পাল্টে ৷

নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে রূপান্তরকামী জেরি শুরুতেই বলেন, ‘বিশ্বাস করুন, প্রথমেই এই রাস্তায় পা বাড়ানোর কথা কখনই ভাবিনি ৷ ভালবাসার কথা শুনে অনেক ঠকেছি ৷ ভালবাসা নয়, লোকে তখন শুধু আমার নরম শরীরটাকেই চাইত ৷’ আসল এই কথাটাই বুঝতেই পাল্টে গেল আমার জীবনকে দেখার ভঙ্গি ৷

Feature-4-2

১২ জুন, ১৯৯২ আজমগড়ের এক মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম হয়েছিল জেরির ৷ আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মতো বাবা, মা, পিসি, ভাই, বোন সকলের সঙ্গেই বড় হচ্ছিল জেরি ৷ বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেই বদলে যেতে লাগল চেনা দুনিয়াটা ৷ বদলে গেল চেনা মানুষগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ৷

‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে ছোট করে কাটিয়ে দেওয়া হত চুল ৷ ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলার থেকে ঘরের মধ্যে বোন আর দিদির সঙ্গে খেলতে আমার বেশি ভাল লাগত ৷ তবু জোর করে চড় থাপ্পড় মেরে বিকেলবেলা পাঠানো হত ফুটবল মাঠে ৷’ বলে জেরি ৷ এমনি এক ডিসেম্বরের বিকেলে জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন জেরি ৷

Feature-1-2

সন্ধে নামার মুখে আধা অন্ধকার স্কুলের মাঠে তাঁকে ঘিরে ধরে বেশ কয়েকজন সিনিয়র ৷ সে আসলে ছেলে না মেয়ে দেখার জন্য জোর করে খোলা মাঝে খুলে দেওয়া হয় তাঁর পরনের জামাকাপড় ৷ নগ্ন করে নিশ্চিত করা হয় তাঁর শরীরের নিম্নাঙ্গ বহন করছে কোন লিঙ্গের চিহ্ন ৷ জেরির পুরুষাঙ্গ দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁকে ছেড়ে দেয় ছেলেগুলো ৷ ঘটনার কথা বাড়িতে জানাতে পারেনি সে ৷

কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কমনীয় হতে থাকে জেরির আচরণ ৷ বাইরের পুরুষালি শরীরের ভেতর ফুলের কুঁড়ির মতো বেড়ে উঠছিল এক তরুণী ৷ এমন সময়েই জেরির জীবনে আসে প্রথম প্রেম ৷ প্রথম ভালবাসার অভিঘাতে ভেসে যেতে বেশি সময় লাগেনি ৷ সে প্রেম ধীরে ধীরে হাত রেখেছিল জেরির শরীরে ৷ জাগিয়ে তোলে তাঁর নারীসত্ত্বাকে ৷ কিন্তু সে প্রেমের মেয়াদ খুব দীর্ঘ হয়নি ৷ জেরির কথায়, ‘সম্পর্কে যখন মনের চেয়ে শরীর বেশি দামী হয়ে ওঠে, তখন সে সম্পর্ক প্রাণ ত্যাগ করে ৷’

আরও পড়ুন ওজন কমাতে প্রাণ ভরে খান চুমু

এযাবৎকাল পর্যন্ত জেরির মোট ৯ জন বয়ফ্রেন্ড ছিল ৷ এই মিঠে-কড়া-তিক্ত সম্পর্কগুলিই বদলে দিয়েছে তাঁর জীবনের মানে, তাঁর জীবন দর্শন ৷ ‘একটার পর একটা সম্পর্কের ভাঙাগড়া অভিজ্ঞতা থেকে বুঝি শরীরটাই সব ৷ শরীরী তৃপ্তির মিললেও মেলেনি মনের আশ্রয় ৷ প্রত্যেকে এসেছে আমার শরীরকে ছুঁয়েছে, সম্ভোগ করেছে কিন্তু মনটাকে বোঝার চেষ্টা কেউ করেনি ৷ কোমরে হাত রেখেছে কিন্তু মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়নি কেউ ৷ ভালবাসার সম্পর্কের জালে জড়িয়ে শুধু ফ্রিতে পেতে চেয়েছে আমার শরীরকে ৷ শারীরিক ফায়দা তোলার অভিযোগ, অপমান, দুঃখ জানাব কাকে? কোথায়? ’

আরও পড়ুন

‘মাছ ধরতে গেলে লাগে কন্ডোম’! নিরোধের এমন অভিনব ব্যবহার আগে জানতেন?

এই সারসত্ত বুঝতেই সব থেকে বড় পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে জেরি ৷ সিদ্ধান্ত নেয়, ‘শরীরটাই যদি দিতে হয়, তবে বিনা পয়সায় দেব কেন! ভালবাসার নাম করে মিথ্যাচারের কোনও প্রয়োজন আর নেই ৷ তাই ঠিক করি শারীরিক তৃপ্তি দিতে হলে টাকা নিয়েই দেব ৷ টাকা নিলে আর সেখানে আমার মন আশ্রয় খুঁজতে যাবে না ৷’

এরপরই বদলে যায় জেরির জীবন ৷ রূপান্তরকামী প্রেমিকার রূপ থেকে জন্ম নেয় এক যৌনকর্মী ৷ তবে পেশা যাই হোক না কেন, মানুষ হিসেবে এদিনের পর স্বীকৃতি পাবে জেরি এবং জেরির মতো আরও লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী ৷ সুপ্রিম রায়ে আজই হয়েছে ৩৭৭ ধারার অবসান ৷

Published by:Elina Datta
First published:

Tags: 377 Verdict, Biography, Transgender