Bizarre Food: কুরকুট বা পিঁপড়ের ডিম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর! চাটনি বানিয়ে বা শালপাতায় মুড়ে ঝলসে খাওয়াই রীতি
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
- hyperlocal
- Written by:Bangla Digital Desk
Last Updated:
Bizarre Food: শীতকালে শীতের মোকাবিলায় কুরকুটের ঝোল বিশেষ সহায়ক বলে বিশ্বাস করে শবর জনগোষ্ঠীর লোকেরা
মৈনাক দেবনাথ, নদিয়া: পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর তথা জঙ্গলমহলের মানুষ প্রিয় খাদ্য হল কুরকুট। এই কুরকুট হল এক ধরণের পিঁপড়ের ডিম। সাঁওতালি ভাষায় ডাকা হয় ‘হাও’ বা ‘হাউ’ নামে। কমলা রঙের এই পিঁপড়ে লক্ষ করা যায় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, সমস্ত ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার জঙ্গলেও। এই পিঁপড়েরা স্বভাবে বেশ সতর্ক এবং দ্রুতগামী। বিপদ বুঝলে আক্রমণকারীকে জবাবে পাল্টা ধাওয়া করতে আসে। ক্ষিপ্র গতিতে বড় বড় গাচের উপর থেকে নীচে যাওয়া আসা করতে পারে এই পিঁপড়েরা। বড় গাছের মগডালে পাতার সাথে পাতার নিপুণ সেলাই করে ঘর বেঁধে বসবাস করে এরা।
‘উইভার অ্যান্ট’ নামেও পরিচিত এই পিঁপড়ের দল। মগডালে বাসা বাঁধতে এদের লার্ভা থেকে নিঃসৃত হয় এক প্রকার সিল্ক, তা দিয়েই তিন চারটে পাতাকে মুড়ে একটি থলির আকারে সেলাই করে ঘর বানিয়ে নেয় এরা। এই থলি দেখতে যেমন সুন্দর আর মজবুতও হয় তেমনি। এদের খাবার হল পাকা ফল। এ ছাড়াও উইপোকা এবং ওই জাতীয় কীট পতঙ্গ থেকেও খাবার রস সংগ্রহ করে এরা। পিঁপড়ের বাসাতে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে রাখে ‘ইকোফাইলা’ রা।
advertisement
এই পিঁপড়েদের ভিতর রয়েছে দুই ধরনের শ্রম বিভাজন। একদল পিঁপড়ের সুদক্ষ কাজের মাধ্যমে এরা খাদ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি বসতি বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা রাখে, সৈনিক ‘ইকোফাইলার’ বলা হয় এদের। আর একদল পিঁপড়ে যারা বাসা তৈরি করে,খাদ্য সংগ্রহ করে, রানি ও লার্ভার দেখভাল করে তাদের বলা হয় শ্রমিক ‘ইকোফাইলা’। পিঁপড়ে দলের রানি তাদের বাসার ভিতরেই অবস্থান করে অন্যান্য পিঁপড়ে দলের মতোই।
advertisement
advertisement
শীত-বর্ষার আগে আগে গাছের উঁচু ডালে সাদা চালের মত দেখতে অগণিত ডিম পেড়ে রাখে পিঁপড়েরা। এই পিঁপড়ের ডিমের চাটনি বা কুরকুটের চাটনি অত্যন্ত জনপ্রিয় বাঁকুড়া -পুরুলিয়া এলাকায়। কুরকুট-এর চাটনি তৈরির নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। চার চামচ কুরকুটের সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা, পুদিনা পাতা, অল্প পিঁয়াজ, রসুন টুকরো বেটে কাঁচা সরষের তেল আর প্রয়োজন মতো নুন মিশিয়ে তৈরি হয় কুরকুটের চাটনি। এই চাটনি অনেকে শাল পাতায় মুড়িয়ে আগুনে ঝলসে খেতে ভালবাসেন। অনেকে এই ঝলসে খাওয়ার ধরণকেই বেশি সুস্বাদু বলেন। অনেকে আবার এই মিশ্রণের সঙ্গে একটু সরষে বেটে খেতে পছন্দ করেন।
advertisement
স্থানীয় এক চিকিৎসকের থেকে জানা যায় “খাদ্যগুণের পাশাপাশি কুরকুটের রয়েছে ওষধি গুণ। ভিটামিন সি-তে ভরপুর কুরকুটে আছে, সঙ্গে রয়েছে ক্যালসিয়াম। সাধারণ সর্দি কাশি এবং শিশুদের কাশিতে খুব উপাদেয় এই দুটি উপাদান। শীতকালে ঠান্ডার মোকাবিলায় কুরকুটের ঝোল বিশেষ সহায়ক বলে বিশ্বাস করে শবর জনগোষ্ঠীর লোকেরা। প্রকৃতির একদম কাছাকাছি যাদের বেড়ে ওঠা প্রকৃতিই তাদের টিকে থাকার রসদ জোগায়। কুরকুট এমনি একধরণের আদিবাসীদের ওষুধ। আয়ুর্বেদিক-সহ নানা অ্যালোপ্যাথি ওষুধের উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হয় অরণ্যের নানা উপাদান। অরণ্যবাসী বা সংশ্লিষ্ট বসবাসকারীরা বনের পথে এই সব সংগ্রহ করে বিক্রি করে হাটবাজারে। শীতকালে জঙ্গলমহলে প্রতিটি হাটেই বিক্রি হয় কুরকুট। গ্রাম থেকে গ্রাম ফেরি করেও বিক্রি করে অনেকে। স্থানীয়দের কাছে চাল ডাল অন্যান্য নিয়মিত আনাজের সঙ্গে খুব একটা পার্থ্যক্য নেই কুরকুটের। পছন্দের আরও একটি খাবার হিসেবেই তাঁরা কিনে নেন এই খাবারটি।”
advertisement
স্থানীয় এক বাসিন্দা কমল ফকির জানান, “কুরকুট ব্যবহার করা যায় তিনটি উপায়ে – খাবারের পাশাপাশি ভেষজ ওষুধ এবং মাছের খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হয় কুরকুট। মাছ ধরার সময় চার তৈরি করা যায় কুরকুট দিয়ে। স্থানীয় বাজারে কুরকুট বিক্রি হয় কেজি প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। কিন্তু ফড়েদের হাত ঘুরে দুর্গাপুর, আসানসোল, বারাসাত, দমদম এলাকায় আড়তে রেখে দেওয়া কুরকুটের মূল্য দাঁড়ায় কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা চায় প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে এই বহুমুখী সুবিধাজনক ‘কুরকুট’ কে সরাসরি আর্থিক স্রোতে এক করতে। সুনির্দিষ্ট উদ্যোগে ‘কুরকুট’ এর বাজার একদিন স্বীকৃত সামগ্রী হিসেবে উঠে আসবে এমনটাই আশা জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের।
advertisement
তবে নদিয়া সহ অন্যান্য জেলায়, খাদ্যে ব্যবহার না দেখতে পাওয়া গেলেও, মাছ ধরার টোপ হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ডিম। কিছুটা স্বচ্ছ এই ডিম জলে পড়ে আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং অদ্ভুত এক গন্ধে মাছেরা তার হদিশ পায়।”
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
May 08, 2023 5:09 PM IST