মালদহ: তাহলে কি পড়ুয়াদের আর শাসন করতে পারবে না শিক্ষক- শিক্ষিকারা। পড়ুয়ারা অন্যায় কিছু করলেও তা মেনে নিতে হবে? মালদহের মানিকচকে প্রাথমিক স্কুলের এক ঘটনা এমনটাই ইঙ্গিত করছে। খুদে এক পড়ুয়া টাকা চুরি করেছিল। সেই অন্যায়ের শাসন করেছিলেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। শাসন করতে ওই পড়ুয়াকে থাপ্পড় মারেন শিক্ষক। এই বিষয়টি জানতে পেরেই স্কুলে চড়াও হন অভিযুক্ত পড়ুয়ার অভিবাবক সহ প্রতিবেশি কয়েকজন মহিলা। স্কুল চত্বরে প্রকাশ্যে চুলের মুঠি ধরে শিক্ষিকাকে পেটানোর অভিযোগ উঠল ছাত্রের অভিভাবকদের বিরুদ্ধে।
ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য মানিকচকের নাজিরপুর পশ্চিম পাড়া প্রাইমারি স্কুলে।গত মঙ্গলবার স্কুলের অফিস ঘরের ড্রয়ার থেকে চুরি যায় প্রায় ৭০০ টাকা। স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা সন্দেহ করে স্কুলের কেউ এই টাকা চুরি করেছে। শুরু হয় ছাত্রদের জিজ্ঞাসাবাদ। তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্র চেপে ধরতেই সে চুরির কথা স্বীকার করে। এরপর তাকে শাসন করে স্কুলের টিআইসি চন্দন মিত্র । ছাত্রটিকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সেই স্কুলের সহ শিক্ষিকা দেবপ্রিয়া রায়ও ছাত্রটিকে শাসন করে। আর এটাই তাঁর অপরাধ। তারই প্রতিবাদে ছাত্রটির মা এবং এলাকার কয়েকজন মহিলা স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকে বেধড়ক মারধর করেন এই শিক্ষিকাকে।অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ চুলের মুঠি ধরে মারধর করা হয় শিক্ষিকাকে অভিযোগ এমনই। যদিও শিক্ষিকাকে মারধর করার কথা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত পড়ুয়ার মা শম্পা ঘোষ। এদিন শম্পা ঘোষ বলেন, আমি শিক্ষিকাকে মারধর করিনি। আমার ছেলে চুরি করেছে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি।আমার ছেলেকে শিক্ষক মারধর করেছে। আমি আমার ছেলেকে মেরেছি। আমি শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানাবো।
আরও পড়ুন: বিকেলে মদের আসর বসায় কাকা-ভাইপো! আড্ডার ছলে ঘটলো ভয়াবহ ঘটনা!
বুধবার স্কুল চত্বরে এসে হাজির হয় সেই অভিযুক্ত ছাত্রটির বাবা-মা এবং বেশ কয়েকজন স্থানীয় মহিলা ও পুরুষরা। তারা এসেই প্রথমে চড়াও হন স্কুলের টিআইসি চন্দন মিত্রের উপর। তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালিগালাজ করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। আর এই ঘটনারই ভিডিও করছিলেন সহশিক্ষিকা দেবপ্রিয়া রায়। শিক্ষিকা দেবপ্রিয়া রায়ের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন দুইজন মহিলা। একেবারে চুলের মুঠি ধরে ক্লাসরুম থেকে বের করে চলে চড় থাপ্পড়। এমনকি শিক্ষিকা দেবপ্রিয়া রায়কে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। স্কুলের টিআইসি চন্দন মিত্রকেও পরে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। শিক্ষিকা দেবপ্রিয়া রায়কে মারধর করেই স্কুল চত্বর থেকে চম্পট দেন তারা। পরে ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনার সাথে ছুটে আসেন মানিকচক থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন:
সম্পূর্ণ ঘটনা তদন্ত করেন তারা।নির্যাতিতা শিক্ষিকা দেবপ্রিয়া রায় বলেন, চুরি করেছিল ছাত্রটি। তাই আমরা শাসন করেছিলাম। আমি ছাত্রটিকে মারধরও করিনি। আর এইজন্য আমাকে আমার সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীর সামনে চুলের মুঠি ধরে মারধর করল অভিযুক্ত ছাত্রটির মা ও স্থানীয় একজন মহিলা। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি মানিকচক থানায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করব।নাজিরপুর পশ্চিম পাড়া প্রাইমারি স্কুলের আরেকজন সহশিক্ষক তারিক আনোয়ার জানান, একেবারে বিনা কারণে আমাদের চোখের সামনে সহশিক্ষিকা দেবপ্রিয়া রায়কে মারধর করল দুজন মহিলা। চুলের মুঠি ধরে ব্যাপক মারধর। আমরা অনেক চেষ্টা করে শিক্ষিকা রায়কে তাদের হাত থেকে রক্ষা করি।
হরষিত সিংহ
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Malda News, School news, Viral News