Bhangar: চৌবাচ্চায় জিওল মাছ চাষ করে লাখপতি, পথ দেখাচ্ছেন ভাঙড়ের গৃহবধু
- Published by:Simli Raha
Last Updated:
এক কেজি কই বা শিঙি মাছ চাষ করতে তিরিশ থেকে চল্লিশ টাকা খরচ হয়। সেটাই বাজারে বিক্রি হয় তিনশো থেকে চারশো টাকায়। অর্থাৎ দশগুণ বেশি লাভ পাওয়া সম্ভব।
রুদ্র নারায়ন রায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বড় পুকুর কিংবা ভেড়ি নয় ছোট চৌবাচ্চাতেই মাছ চাষ করে হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। কই, শিঙি, মাগুরের মত জিওল মাছের পাশাপাশি পাবদা, তেলাপিয়া, রুই, কাতলাও চাষ করা যায় অনায়াসে। ফুল টাইমার নয় বাড়ির কাজের ফাঁকেও গৃহবধূরা এই মাছ চাষ করতে পারেন। আপনজনেদের পাতে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি বাড়তি আয় যোগাচ্ছে সংসারে। ভাঙড়ের কুল্বেড়িয়া গ্রামের এক গৃহবধূ চৌবাচ্চায় জিওল মাছের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সকলকে। তার এই কাজে খুশি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। জেলার মধ্যে সর্বপ্রথম অভিনব এই উদ্যোগ নেওয়ায় প্রশাসনের তরফে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভাঙড় দু নম্বর ব্লকের বিডিও কৌশিক কুমার মাইতি বলেন, ‘বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার জন্য সবরকম সাহায্য ও সহযোগিতা করছে সরকার। ওই গৃহবধূকে আট লক্ষ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। যার ৬০ শতাংশ ঋণ সাবসিডি হিসাবে দেওয়া হয়েছে।‘
পুকুর কিংবা ভেড়িতে যেমন স্বাভাবিক নিয়মে মাছ চাষ হয় তার থেকে সামান্য আলাদা এই মাছ চাষের পদ্ধতি। প্রমাণ মাপের একটি বড় চৌবাচ্চায় ভূগর্ভস্থ জল ভরতে হয় প্রথমে। তারপরে রাসায়নিক দিয়ে সেই জলের অমলত্ব ও ক্ষারত্ব ঠিক করতে হয়। এরপর ওই জলে বিভিন্ন প্রকার ছোট মাছ ছাড়তে হয়। একই সাথে অক্সিজেনের ব্যবস্থাও করতে হয়। যেহেতু অল্প জলে বিপুল সংখ্যক মাছ থাকে তাই ওই জলে যন্ত্রের সাহায্যে অক্সিজেন দিতে হয়। যেটা মাছেদের বাঁচতে এবং বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। পাশাপাশি কয়েক ঘণ্টা অন্তর খাবার দিতে হয়। নিয়মিত খাবার ও অক্সিজেন পেয়ে মাত্র দু মাসের মধ্যেই একটি জিওল মাছ পাঁচ গ্রাম থেকে আশি বা একশো গ্রাম ওজনের হয়ে ওঠে। সেটা বাজারে বিক্রি করলেই মোটা টাকা আয় হয়। এই পদ্ধতির নাম বায়ো ফ্লক ফিস কালচার। বায়ো ফ্লক চাষীরা জানাচ্ছেন, এক কেজি কই বা শিঙি মাছ চাষ করতে তিরিশ থেকে চল্লিশ টাকা খরচ হয়। সেটাই বাজারে বিক্রি হয় তিনশো থেকে চারশো টাকায়। অর্থাৎ দশগুণ বেশি লাভ পাওয়া সম্ভব।
advertisement
কলকাতা বিমানবন্দরের চাকরি ছেড়ে এমনই মাছ চাষ করছেন ভাঙড় দু নম্বর ব্লকের কুলবেড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ পায়েল মৃধা। পায়েল জানালেন, ‘ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই বায়ো ফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ভিডিও দেখি। আমার স্বামী সুমন মৃধাও এটা নিয়ে আগ্রহী হন। দু’জনে নদীয়ার শান্তিপুরে চলে যাই। ওখানে হাতে কলমে এই মাছ চাষের পাঠ নিই। স্বামী বেসরকারি চাকরিতে ব্যস্ত থাকায় শ্বশুর, শাশুড়ির সহযোগিতায় আমি এই চাষ করছি গত আট মাস ধরে। পায়েলের দাবি, ‘যেহেতু এটা সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ হয়, তাই এই মাছের স্বাদ খুব সুস্বাদু এবং এটা স্বাস্থ্যপ্রদ। গৃহস্থালির হাজারো একটা কাজের মাঝে যে কোন ব্যক্তি বা গৃহবধূ এই চাষ করেই বছর খানেকের মধ্যে লাখপতি হতে পারেন বলে দাবি মাছ চাষীদের।
advertisement
advertisement
ভাঙড় দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রানী সম্পদ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গতানুগতিক মাছ চাষের বাইরে এখন এই ধরনের মাছ চাষে উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। বায়ো ফ্লক মাছ চাষ পদ্ধতি সম্প্রতি মৎস্য দফতরের অধীনে আনা হয়েছে। কোনও মহিলা এই চাষ করলে ৬০ শতাংশ এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী চাষ করলে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সাবসিডি পেতে পারে। পায়েল মৃধা শুধু ভাঙড় নয় গোটা জেলার পথ প্রদর্শক বায়ো ফ্লক ফিস কালচারের।‘
view commentsLocation :
First Published :
July 27, 2021 2:08 PM IST

