হোম /খবর /শিলিগুড়ি /
জামাই আদরে সরগরম শিলিগুড়ির বাজার! কেমন গেল কোভিডময় জামাইষষ্ঠী

জামাই আদরে সরগরম শিলিগুড়ির বাজার! কেমন গেল কোভিডময় জামাইষষ্ঠী

  • Share this:

#শিলিগুড়ি: বছরভরের অপেক্ষা তারপর আষাঢ়ে পাতপেড়ে খাওয়া!  জামাইষষ্ঠী পালনে করোনার চোখরাঙানি ভুলল উত্‍‌সবমুখর মনে বাঙালি। বাজারে হামলে পড়ল মানুষের ভিড়। সবজির বাজারে ঠেলাঠেলি করে কেনাকাটা করতে দেখা গেল উত্‍‌সাহী মানুষকে। ফলের বাজারেও সামাজিক দূরত্ব শিকেয়। এদিকে জিনিসপত্রের আগুন দামে পকেটে টান পড়ায় থলে ভরতে হিমশিম খেতে হল অনেককেই।

বাঙালির আরেক উৎসব জামাইষষ্ঠী। মেয়ে-জামাইয়ের শুভকামনায় বাংলার ঘরে ঘরে হয় ষষ্ঠী পুজো। আর তারপর জামাই বাবাজীবনের আদরে ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় মহাভোজের। কিন্তু সেই ভোজের আয়োজন করতে রে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাঙালিকে। শহরের বিভিন্ন বাজারে মঙ্গলবার-বুধবারের ভিড় দেখে মনেই হবে না লকডাউন চলছে। দূরত্ব ভুলে জটলা করে বাজার করতে ব্যস্ত মানুষ। এনজেপি, ফুলেশ্বরী, বিধান মার্কেট-সহ বিভিন্ন বাজারে দেখা গেল বাজার কমিটির তরফে মাইকিং। চলল বারবার মানুষকে সতর্ক বার্তা।

একে জামাইষষ্ঠী, তার উপর লকডাউনের কারণে বাজার আগুন। পাকুড়তলা মোড়ের বাসিন্দা সুপর্ণা ঘোষ বাজার করতে গিয়ে বললেন, \'জামাই নেই তবে সন্তানের মঙ্গল কামনায় আমি প্রতিবছরই ষষ্ঠী পুজো করে থাকি।  কিন্তু বাজারে এসে যা দেখতে পাচ্ছি তাতে চোখ কপালে ওঠার মতো। আম, জাম, কাঁঠালের পাশাপাশি লিচু হল জামাইষষ্ঠীর প্রধান ফল। সেখানে লিচু বিকোচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা কিলো! এখন সামর্থের বাইরে চলে গিয়েছে। খাসির মাংসের দাম কেজি প্রতি ৭০০-৯০০ টাকা। মুরগির মাংসের কেজি প্রায় ৩০০।\'

অন্যদিকে, জামাইদেরও পকেটেও টান পড়েছে বেশ। বিভিন্ন রকমের ফল, মিষ্টি, দই, নতুন জামা-কাপড়ে যেন হিমশিম খেতে হল জামাইবাবা জীবনদের। এদিন রসগোল্লা ১৫-২০ টাকা গোটা, সন্দেশ ১৫-২০ টাকা গোটা, কাজু বরফি ১৭-২৫ টাকা গোটা। ক্ষীর দই ২৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিকিয়েছে। দীপাঞ্জন সেন বলে এক জামাই বললেন, \'গতবছর নতুন দুটি শব্দ রপ্ত করেছি। কোভিড আর লকডাউন। চারিদিকের পরিস্থিতি দেখে মন বিষাদময়। তবুও বছর ফিরে দেখা। করোনার জন্য লকডাউনে যখন সকলে নিজ নিজ ঘরে বন্দী, সেখানে এবারের জামাইষষ্ঠী আমার কাছে নিছক উপলক্ষ্য মাত্র। আদতে তো সকলে মিলে একসঙ্গে একটু সময় কাটানো একটু আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া।\' দেশবন্ধুপাড়ার ছেলে শুভ্রজিত ব্যানার্জী লেকটাউনে জামাইষষ্ঠী করতে গিয়ে তো কবিতা তৈরি ফেললেন। তিনি বলেন, \'উভয়পক্ষের পকেটে টান, তবুও কী ছাড়া যায় জামাইষষ্ঠীর মান?\'

এদিকে, ফুলেশ্বরী খুচরা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সমীর দাস বলেন, \'জামাইষষ্ঠীর দিনেও বাজার আশানুরূপ নেই। গঙ্গার মাছ না আসায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এদিকে যোগানে প্রবল ঘাটতির কারণে এত দাম। যদিও আগের থেকে চাহিদা কম, তবু চাহিদা ও যোগানের বিস্তর ফারাকের কারণেই মাছের দাম এতটা বেড়ে গিয়েছে। মাছের দাম কেজি প্রতি ২০০-১০০০ টাকা বেড়ে গিয়েছে, চলতি মরসুমে এটা সর্বাধিক। কিন্তু আমাদের লাভের অঙ্কও কমে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে এমন সংকট আগে আসেনি। এক কেজির নীচে ইলিশ বিকিয়েছে ১০০০-১৩০০ টাকা এমনকি ১৫০০ টাকা কেজি দরে। সেদিকে রুই ১৬০-৪০০ টাকা কেজি, কাতল ৩০০-৫০০ টাকা কেজি, গলদা চিংড়ি ৫০০-৭০০ টাকা কেজি, কুঁচো চিংড়ি ৩০০ টাকা কেজি, পাবদা (বড়) ৫৫০-৭০০ টাকা কেজি দরে বিকিয়েছে।\'

পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সবজির দামও। চম্পাসরি সবজি মার্কেট কমিটির সম্পাদক বাপি সাহা বলেন, \'বর্ষার কারণে ফলন হলেও গাড়ি না চলায় মার খেতে হচ্ছে খুচরা থেকে পাইকারদের। ফলে কিছুটা দাম বেড়েছে বটে। তবে সবমিলিয়ে সবজির দাম সাধারণের নাগালেই রয়েছে।\' এদিন বিন ৮০ টাকা কেজি, আলু (সাদা) ৩০-৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ২৮-৩০ টাকা কেজি, কাঁঠাল ১০০ টাকা কেজি, ক্যাপসিকাম ২০০ টাকা কেজি, টমেটো, বেগুন, লঙ্কা, করলা, পটল ৩০-৬০ টাকা কেজি দরে বিকিয়েছে।

এদিকে, জামাই আদর পাওয়ার পর এখন বাড়ি ফেরার পালা। কোভিডময় জামাইষষ্ঠীর পর্ব কাটলেও খুশি জামাই বাবাজীবনরা। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার বাসিন্দা সজল রায়ের কথায়, \'জামাইষষ্ঠীর দিন শুধু খাওয়া দাওয়া না, বরং প্রচুর মজা হয়। এই অবস্থায় খুব একটা বেরোতে পারি না কেউই। তাই এই একটা দিন প্রাণভরে আনন্দ করলাম সবাই মিলে।\'

ছোট্ট অন্বেশ্বা আবার মামাবাড়ি গিয়ে খুব খুশি। ভাইবোনদের সঙ্গে সারাদিন হৈ-হুল্লোড়ের পর একগাল হেসে বলল, \'অনেকদিন পর সবার সঙ্গে দেখা হল। খুব মজা করেছি। অনেক সেলফি তুলেছি।\'

অন্যদিকে মন খারাপ মানালি সরকারের। তাঁর বাপের বাড়ি কলকাতায়। কোভিড বিধিনিষেধের জেরে যাওয়া বাতিল এবার। তাই বাড়িতেই ইলিশের মাথা দিয়ে মুগডাল ও কচি পাঠা দিয়ে দুপুরের খাবার সাড়ল সরকার দম্পতি।

এভাবেই কাটল \'করোনা স্পেশাল\' জামাইষষ্ঠী। এবার অপেক্ষা পরের বছরের। তখনও কী ভাইরাস বাবাজীবন থাকবেন? নাকি সবাই আবার উন্মুক্ত আকাশের নীচে মজা করবেন। সময়ের অপেক্ষা!

Vaskar Chakraborty

Published by:Pooja Basu
First published:

Tags: Bengali Cuisine, Market, Son In Law