হোম /খবর /পশ্চিম বর্ধমান /
ইঞ্জিনিয়ার চায়েওয়ালা! ২ ভাইয়ের চায়ের ভাঁড়ের জাদুতে বুঁদ দুর্গাপুর

Exclusive| West Bardhaman News|| ইঞ্জিনিয়ার চায়েওয়ালা! কলকব্জা ছেড়ে, ২ ভাইয়ের চায়ের ভাঁড়ের জাদুতে বুঁদ দুর্গাপুর

দু'নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে চায়ের দোকান।

দু'নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে চায়ের দোকান।

Bangla News: দু'নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ছোট্ট একটি দোকান। সেখানেই চায়ের কাপে জাদু দেখাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার পাস দুই ভাই।

  • Hyperlocal
  • Last Updated :
  • Share this:

#দুর্গাপুর: চা তো অনেক রকম খেয়েছেন। দিনে-রাতে, শীত-গ্রীষ্মে, রাস্তা-ঘাটে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দেওয়ার অভ্যাস নেই, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম। চা নিয়ে বহু মানুষের মধ্যে রয়েছে সৌখিনতা। তবে ইঞ্জিনিয়ার ব্রাদার্সের চা খেয়েছেন কখনও?

ইঞ্জিনিয়ার ব্রাদার্সের চায়ের স্বাদ নিতে হলে আপনাকে আসতে হবে দুর্গাপুরে। দু'নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ছোট্ট একটি দোকান। সেখানেই চায়ের কাপে জাদু দেখাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার পাস দুই ভাই। অটোমোবাইল, মেকানিক্যালের কলকব্জার নাড়াচাড়া ছেড়ে, তারা মন দিয়েছেন চা তৈরিতে। ইঞ্জিনিয়ার হাতের তৈরি চা ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্থানীয় এলাকায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে আনাগোনা লেগে রয়েছে চাপ্রেমী মানুষের।

বেসরকারি সংস্থা থেকে বহু টাকা ব্যয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা পাশ করেছেন দুই ভাই। সরকারি, বেসরকারি সংস্থায় কাজের চেষ্টাও করেছেন। তবে এখন তারা সফল চা ব্যবসায়ী। আগামী দিনে রাজ্যজুড়ে তাদের এই চায়ের ব্যবসা বিস্তার করতে চান। ইঞ্জিনিয়ার ব্রাদার্সের চায়ের স্বাদ যেমন অনন্য, তেমনি বাহারি চায়ের ভাঁড়। এই দুইয়ের আকর্ষনে, লাগাতার দোকানে আনাগোনা করছেন চা প্রেমী মানুষজন।

ইঞ্জিনিয়ার্স ব্রাদার্সের প্রথম উদ্যোক্তা সুমন কর। তিনি অটোমোবাইলে ডিপ্লোমা করেছেন। তারপর ভিন রাজ্যে গিয়েছিলেন পেশার তাগিদে। কিন্তু সেখানে বিভিন্ন সমস্যার জেরে রাজ্যে ফিরে আসেন। তারপর একটি গাড়ির শোরুমে কাজ শুরু করেন। কিন্তু মাইনে পর্যাপ্ত না হওয়ার ফলে, নিজের ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। অটোমোবাইলের স্পেয়ার-পার্টসের ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রথমে।

তবে তার জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি ছিলনা সুমন বাবুর কাছে। এরপরই কাহিনী মোড় নয় অন্যদিকে। স্পেয়ার-পার্টস এর দোকান করার জন্য কেনা জায়গায় শুরু করেন চায়ের দোকান। চা তৈরির পদ্ধতি বেছে নেন অন্যরকম। শুরুতে এক থেকে দেড় লিটার চা বিক্রি করতেন তিনি। এখন প্রতিদিন ছোট দোকান থেকে সারাদিনে বিক্রি হয় ৪০ লিটার চা। চায়ের স্বাদে কোনওরকম ভিন্নতা নেই এখানে। তবে চা পরিবেশনের ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা শুরু করেন সুমিত কর। ব্যবসা একটু বাড়তে শুরু করলে, এই নিয়ে ভাবনা শুরু করেন তিনি।

পরিবেশনের ক্ষেত্রে বদল আনতে গিয়ে নিয়ে আসেন বাহারি চায়ের ভাঁড়। তারপরেই আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের হাতের তৈরি চা।

এ বিষয়ে সুমন কর জানিয়েছেন, পেশাদারি ডিগ্রি থেকে অন্য পেশায় আসার শুরুতে কোথাও গিয়ে উৎকণ্ঠা ছিল। বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী এবং পরিচিতদের কাছেও ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চায়ের দোকান খোলার জন্য কথা শুনতে হয়েছে। তবে তিনি কোন কাজকে ছোট বলে মনে করেন না। তাই উপার্জনের তাগিদে শুরু করেছিলেন চা ব্যবসা। লোকের কথায় কান না দিয়ে, ধীরে ধীরে ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সচেষ্ট হন। এখন তার হাতের তৈরি চা, দোকান থেকে ৫০ কিলোমিটার এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগামী দিনে সুমন করের পরিকল্পনা, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তার চা দোকানের শাখা বিস্তার করা। একইসঙ্গে তিনি তার তৈরি চায়ের গুণগতমান বজায় রাখতে চান।

এই দোকানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়, বিভিন্ন বিস্কুটের কালেকশন। এই দোকানে, চায়ের সঙ্গে পেয়ে যাবেন নানান স্বাদের, নানান রকমের বিস্কুট। বহু পরিমাণে বিস্কুট বিক্রি হয় এই ছোট্ট দোকান থেকে। এখানে চায়ের দাম শুরু ১০ টাকা থেকে। বিভিন্ন ভাঁড়ের আকার আকৃতি অনুযায়ী, বিভিন্ন দামের চাওয়া পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দামের চা পাওয়া যায় এই দোকানে।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন সুমন বাবুর ভাই সুমিত কর। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন। তবে শিকে ছেঁড়েনি। তারপরেই দাদার দোকানে সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে দাদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনিও ব্যবসায় মন দিয়েছেন। দাদার সঙ্গে সহযোগিতা করে ব্যবসার বিস্তার করা আগামী দিনে তারও লক্ষ্য।

আরও পড়ুন: টাওয়ার বসাবেন? ভুলে পুলিশের কাছে এল ফোন! বিধাননগরে বিরাট পর্দাফাঁস

এ বিষয়ে সুমিত কর বলেছেন, কোনও কাজই ছোট নয়। তাই তিনিও এই ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন। আগামী দিনে আরও বহু মানুষের কাছে তাদের তৈরি চায়ের স্বাদ নিয়ে পৌছে যেতে চান। দাদার সঙ্গে সহযোগিতা করে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান ব্যবসা

আরও পড়ুন:  দিলীপ ঘোষের কাছে 'ভিক্ষা', সুকান্ত মজুমদারের 'স্বাগত'! সব নজর দিল্লিতে

ইঞ্জিনিয়ার ব্রাদার্সের তৈরি চা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এলাকায়। ক্রেতারা দুই ভাইয়ের পেশাদারি ডিগ্রির কথা না জানলেও, তাদের তৈরি চায়ের স্বাদ মনে রাখেন। বাহারি চায়ের চুমুক দিতে চলে আসেন এখানে। পানাগড়, বিধানগর সহ দুর্গাপুর সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে চা খেতে আসেন। সকলেই একযোগে বলছেন, এই দোকানের চায়ের স্বাদ কিছুটা অন্যরকম। পাশাপাশি বাহারি ভাঁড়ে চা খেতে বেশ ভালো লাগে। তাই প্রত্যেক দিন না হলেও, নিয়ম করে তারা এই দোকানে চা খেতে আসেন।

ইঞ্জিনিয়ার ব্রাদার্স সুমন এবং সুমিত, ছেড়েছেন কলকব্জার মায়া। মানুষের মুখে বাহারি ভাঁড়ে তুলে দিচ্ছেন চা। ক্রেতাদের ভালোবাসাতেই তারা সন্তুষ্টি খুঁজে পাচ্ছেন। পেশাদারি ডিগ্রির কথা ভুলে, বর্তমান ব্যবসাকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তারা। দুর্গাপুরবাসীর কাছেও ইঞ্জিনিয়ার ব্রাদার্সের চা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সবমিলিয়ে এমএ পাস চায়েওয়ালির মত, প্রথা ভেঙ্গে অন্যরকম কিছু করে দেখাতে লক্ষ্য স্থির করেছেন দুই ভাই।

নয়ন ঘোষ

Published by:Shubhagata Dey
First published:

Tags: Durgapur, Tea Shop