#কলকাতা: মাথাঘোরা, কানে আওয়াজ আসা, হাঁটার সময় বেসালাম হয়ে যাওয়া সাধারণত ভার্টিগো (Vertigo)-র লক্ষণ। এটি খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও ভার্টিগোর সমস্যা খুবই ভোগাতে পারে। এই রোগের জন্য যে কোনও মুহূর্তে যে কেউ অসুস্থ বোধ করতে পারেন। ভার্টিগো হলে বমি বমি ভাব, ঘাম, মাথা সোজা করতে না পারা- এ সব সমস্যা হয়ে থাকে।
ভার্টিগো দু'ধরনের হয়। চিকিৎসার ভাষায় যাদের পেরিফেরাল (Peripheral) ও সেন্ট্রাল (Central) বলা হয়।
এই দুইয়ের মধ্যে সব চেয়ে বেশি কমন হল পেরিফেরাল। যা হয় সাধারণত - Benign Paroxysmal Positional Vertigo (BPPV)-র জন্য। এ ক্ষেত্রে মূলত কানের ভিতরের অংশে সমস্যা হয় এবং মাথা ঘোরে। এটি অনেকেরই হয়ে থাকে। খুব একটা গুরুত্বের কোনও বিষয় নয়। থাকেও খুব অল্প সময়ের জন্য। তবে, কানের সমস্যা ও মাথা ঘোরা এই দুই যদি অনেক দিন থাকে এবং তা কমতে না চায় তা হলে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
পেরিফেরাল (Peripheral) ভার্টিগোর আরেক কারণ Meniere's disease। যা কানের মধ্যে হয়। মূলত কানের ভিতরের অংশের ফ্লুইড জমে গিয়ে কানে তালা লেগে যাওয়া, কানে বোঁ-বোঁ শব্দ তৈরি করে। এটি অনেক বেশি সময় ধরে থাকে। প্রায় ২০ মিনিট মতো হয় এর স্থায়িত্ব। অনেকের এর জন্য কানে শুনতেও সমস্যা হয়।
এই ভার্টিগোর সর্বশেষ কারণ Vestibular Neuritis। যাকে Labyrinthitis-ও বলা হয়ে থাকে। কানের ভিতরের অংশে অর্থাৎ ইনার ইয়ার (Inner Ear)-এ ইনফেকশন হলে এটি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কানে জ্বালাভাব অনুভব হতে পারে এবং নার্ভাস সিস্টেমে এর প্রভাব পড়ে। যার ফলে বডি ব্যালেন্সে সমস্যা হয়।
পেরিফেরাল ভার্টিগো ছাড়াও রয়েছে সেন্ট্রাল ভার্টিগো। মাথায় কোনও ভাবে চোট পেলে বা কোনও অন্য রোগের জন্য মাথায় আঘাত পেলেব্রেন স্টেম (Brain Stem)-এ অস্বাভাবিক পরিবর্তন, ব্রেনের পিছন দিক (Cerebellum)-এ পরিবর্তন হতে পারে। যার ফলে এই সেন্ট্রাল ভার্টিগো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভার্টিগো হলে অনেক সময়ে বাড়িতে কিছু জিনিস মেনে চললে সেরে ওঠা যেতে পারে-
১. উঁচু কোনও জায়গা থেকে খুব নিচু জায়গা না দেখাই ভালো। মাথা সব সময়ে একটু উঁচু করে রাখলে উপশম মিলতে পারে।
২. বসা, দাঁড়ানো বা মাথা নাড়ানো- এগুলি একটু ধীরে ধীরে করা ভালো।
৩. মাথা খুব তাড়াতাড়ি নাড়ানো, ঝাঁকানো এ ক্ষেত্রে উচিৎ নয়।
৪. সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠা বা নিচে নামার ক্ষেত্রে রেলিং ব্যবহার করা জরুরি।
৫. খুব জোরে চলে এমন কোনও গাড়িতে না ওঠা ভালো।
৬. খালি পেটে না থাকা চেষ্টা করা এবং অবশ্যই ডায়েটে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
ভার্টিগো ছাড়াও অনেকেরই শারীরিক অনেক কারণে মাথা ঘোরা বা ডিজিনেস (Dizziness)-এর সমস্যা থাকে। যা ভার্টিগোর মতোই হয়। এই দুই সমস্যার মধ্যে খুব অল্প কিছু পার্থক্য থাকে। ভার্টিগোর সমস্যা খুব গুরুত্বর না হলেও ডিজিনেস কিন্তু গুরুত্বর। অর্থাৎ কারও যদি ডিজিনেসের সমস্যা হয়, বার বার হয়, তা হলে বুঝতে হবে যে সেটা কোনও বড় শারীরিক সমস্য়ার ইঙ্গিত।
ভার্টিগোর পাশাপাশি ডিজিনেসেরও জন্যও দায়ি থাকে এইগুলি-
১.ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া (Hypotension), ব্লাড সুগারে সমস্যা ( Hypoglycemia)।
২. অ্যারিথমিয়া (Arrhythmia), কার্ডিওমিওপ্যাথি (Cardiomyopathy), ইসেমিক হার্ট ডিজিস (Ischemic Heart Disease) ও হার্ট অ্যাটাকের মতো কিছু হৃদরোগ।
৩. ডিহাইড্রেশন (Dehydration), ট্রমার জন্য রক্ত কমে যাওয়া ( Loss Of Blood), ডায়ারিয়া (Diarrhea), অ্যানেমিয়া (Anemia)।
৪. অ্যাংজাইটি (Anxiety) বা প্যানিক অ্যাটাকের জন্যও অনেক সময় ডিজিনেসের সমস্যা হয়ে থাকে।
৫. বয়সজনিত সমস্যা, মাইগ্রেন, প্রেগনেন্সি বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্যও ডিজিনেস হয়ে থাকে।
৬. এ ছাড়াও, হঠাৎ কোনও ওষুধের প্রভাবেও মাথা ঘোরা বা ডিজিনেস হয়ে থাকে।
ডিজিনেস (Dizziness)-এর সমস্যা থেকে উপশম পাওয়ার উপায়-
ভার্টিগোর মতোই ডিজিনেস (Dizziness)-ও সারিয়ে তোলা যেতে পারে। প্রাথমিক ভাবে ডিজিনেস অনুভব করলেই বসে পড়া বা শুয়ে পড়া জরুরি। তাতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। একটু শরীর ঠিক হলে কাজ শুরু করা উচিৎ। তা ছাড়াও-
১. কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকা উচিৎ ।
২. হঠাৎ করে উঠে হাঁটা শুরু করা বা হঠাৎ করে একদিক থেকে আরেকদিকে ঘোরা উচিৎ নয়।
৩. শারীরিক ভারসাম্যের জন্য ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
৪. জল খাওয়া ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
৫. ঠিক সময় ঘুমোনো ও বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরি।
৬. ধীরে ধীরে হাঁটাচলা করা ও প্রয়োজনে লাঠির সাহায্য নেওয়া দরকার।
৭. সিঁড়ি দিয়ে উঠতে সমস্যা হলে লিফ্ট ব্যবহার করা।
এই দুই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আগে এই দুই রোগের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। বুঝতে হবে কোনটা ভার্টিগো আর কোনটা ডিজিনেস। প্রয়োজনে সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Corona health tips, Dizziness, Vertigo