#কলকাতা : হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একের পর এক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বের আচমকা অসময়ে চলে যাওয়া যেন বার বার থমকে দিচ্ছে। মেনে নিতে পারছে না কেউ। 'আচমকাই কি বেড়ে যাচ্ছে এই প্রবণতা?' 'পেশাগত চাপ থেকেই কী বাড়ছে মৃত্যু? 'সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছলেই কি বাঁচিয়ে নেওয়া যেত প্রিয় মানুষটিকে?' কিম্বা 'ঠিক কোন কোন ধরণের উপসর্গ দেখে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত?' 'শুধু কী চল্লিশোর্ধরাই এই ধরণের আকস্মিক মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন?' বারবারই উঠছে এইসব নানা প্রশ্ন। সাম্প্রতিকতম যে মৃত্যু গোটা দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে সেই জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কেকে-র হঠাৎ প্রয়াণে এই প্রশ্নগুলি যেন আরও জোরালো হয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে গৃহস্থের লিভিং রুমে। উত্তর খুঁজতে নিউজ 18 বাংলা কথা বলেছিল বিশিষ্ট চিকিৎসক ডঃ শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কী পরামর্শ দিলেন তিনি?
প্রশ্ন: গায়ক কেকের মৃত্যু ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন। নজরুল মঞ্চের ব্যবস্থাপনা থেকে, অপ্রত্যাশিত ভিড়, শিল্পীদের কাছে শ্রোতাদের 'অবিবেচক মাত্রাছাড়া' প্রত্যাশা বেশ কিছু বিষয়ের দিকেই উঠছে আঙুল। আপনি কী বলবেন এই বিষয়ে?
উত্তর: এই ধরণের আকস্মিক মৃত্যুর কারণ কিন্তু অনেক কিছু হতে পারে। এমন হতেই পারে যে উনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। যার ওপর সেদিনের পরিবেশের আদ্রতার তীব্রতা থেকে আড়াই হাজার ক্যাপাসিটির হলে সাত হাজার মানুষের ভিড়, শ্রোতাদের উন্মাদনা, জোরালো আলো বা স্পটলাইটের উত্তাপ এবং একইসঙ্গে এমন একজন পারফর্মিং আর্টিস্টের সেই মুহূর্তের নিজের ভেতরের উত্তেজনা সবকিছু মিলিয়েই কিন্তু তাঁর শারীরিক অবনতি ঘটতে পারে। তা মারাত্মক আকার নিতে পারে যদি তাঁর শরীর আগে থেকেই অসুস্থ থেকে থাকে। জানতে হবে, তাঁর কোনও শারীরিক দুর্বলতা ছিল কিনা, তাঁর পরিবারে এমন আকস্মিক হৃদরোগ আক্রান্তের ইতিহাস আছে কিনা। শুধু তাই নয়, জানা দরকার আগের দিনের অনুষ্ঠানে তিনি অসুস্থ বোধ করার পরে তাঁর সেভাবে কোনও চেক আপ করানো হয়েছিল কিনা। তাই এইসব কিছু না জেনে কোনও একটি বিষয়কে তাঁর শারীরিক অবনতির কারণ হিসেবে ভাবা হলে তা একেবারেই ভুল হবে।
প্রশ্ন: কোনওভাবে কি এড়ানো যেত এমন অঘটন? এমন কোনও উপসর্গ কী বলা যায় যা দেখে হয়তো সচেতন হওয়া সম্ভব?
উত্তর: ওভাবে ঠিক বলা যায় না। কারণ একটা মানুষ যখন জিম করছেন তখন তিনি দরদর করে ঘামবেন এটাই কিন্তু স্বাভাবিক। এই যে বার বার বলা হচ্ছে উনি ঘামছিলেন, ঘাম মুছছিলেন এগুলো কিন্তু কোনওটাকেই হৃদরোগের উপসর্গ হিসেবে সেভাবে বলা যায় না। কারণ উনি যেভাবে মঞ্চে নেচে গেয়ে পারফরমেন্স করছিলেন, এবং এসি বন্ধ থাকা, গুমোট গরম, হলভর্তি মানুষের উত্তাপ ইত্যাদি সব মিলিয়ে উনি ঘামাবেন এটাই কিন্তু স্বাভাবিক। সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয় একজন মানুষ অসুস্থ। এতটাই অসুস্থ যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটা বোঝার একমাত্র উপায় নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা। পূর্বেই তাঁর কোনও শারীরিক দুর্বলতা ছিল কিনা সেটা শুধুমাত্র মেডিকেল টেস্টেই ধরা পরে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা করার সুযোগও পাওয়া যায়। না জেনে বলা সম্ভব নয়, তবে ওনার আগেই অসুস্থতার সূত্রপাত হয়েছিল বলেই মনে হয়ে। যার ওপর সেদিনের পরিস্থিতি হয়তো আগুনে ঘৃতাহুতির কাজটি করেছে। যেগুলোকে কারণ বলা হচ্ছে সেগুলো বড় জোর অনুঘটকের কাজ করেছে এই চরম পরিণতি ঘটার ক্ষেত্রে। তার বেশি নয়।
প্রশ্ন: ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাইতে আর নাচতে গিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজনায় তার হার্টের ব্লকেজ বেড়ে গিয়ে আচমকাই বন্ধ হয়ে যায় রক্ত চলাচল। ফলে তার কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। এই ধরণের 'ব্লকেজ' কি আগাম টের পাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে কিছু কি সাবধানতা নেওয়া যেত?
উত্তর: সেক্ষেত্রে ব্লকেজ কোথায় ছিল। আর্টারিতে ছিল, না অন্য কোথাও। সেগুলো জানা দরকার। ব্লকেজের পিছনে অন্য কারণ, পারিবারিক হিস্ট্রি বা অন্য কিছু অসুস্থতা ছিল কিনা তা না জানলে ব্লকেজের কারণ স্পষ্ট বলা সম্ভব নয়। তবে এই ক্ষেত্রে একটাই উপায় তা হল নিয়মিত শরীরের পরীক্ষা করানো। বিভিন্ন কোম্পানিগুলি তাদের কর্মীদের জন্য এমন ব্যবস্থা রাখে। যাতে শরীরে কোনোরকম অসুস্থতা হয়ে থাকলে তা আগাম জানা যায়। সেক্ষেত্রে সতর্কতা নেওয়া যায় বৈকি।
প্রশ্ন: একথা বলা হচ্ছে সাম্প্রতিকালে এই ধরণের অকস্মাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রবণতা বাড়ছে। আপনি কি এতে সহমত?
উত্তর: দেখুন গত কয়েকমাসের মধ্যে টলিউড, বলিউডে বেশ কিছু এমন মৃত্যু ঘটেছে সেকথা যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমন এটাও অস্বীকার করা যায় না যে 'সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে' মৃত্যুর প্রবণতা নতুন নয়। অনেকসময় দেখা যায় বাহ্যিকভাবে সুস্থ-সবল একজন মানুষেরও হৃদযন্ত্রে কোনও ব্লকেজ থাকতে পারে যেটা তাঁর অগোচর। যার থেকে মারাত্মক কিছু ঘটে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। যদি না সে বিষয়ে তিনি আগাম সতর্ক হন। আমরা দেখেছি অতীতে এমন ঘটনা বার বার ঘটেছে। মাইকেল জ্যাকসনের মতো কিংবদন্তিও এইভাবে অত্যন্ত কম বয়সে মারা যান। ইদানিং যে নতুন করে সেই প্রবণতা বেড়েছে এমনটা আমি মনে করি না।
তবে একটা কথা বলতে চাই, যে কোনও 'আকস্মিক' মৃত্যুতেই আমাদের মধ্যে সেই মৃত্যুর কারণ খোঁজার জন্য একটা গোয়েন্দাগিরি করার প্রবণতা শুরু হয়ে যায়। যেটা মোটেও কাম্য নয়। কাজটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা চিকিৎসক মণ্ডলীর উপর ছেড়ে দেওয়াই কাম্য। আমরা বরং নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতাটা আরেকটু বাড়াই, শরীর স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয় খেয়াল রাখি, তাতেই হয়তো এই ধরণের অঘটন এড়ানো যেতে পারে।
সংযুক্তা সরকারনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।