Durga Puja 2024: ঘটের ঘনঘটা, ঘটের ইতিকথা...বাঙালির পুজো পার্বণ অসম্পূর্ণ মঙ্গল ঘট ছাড়া

Last Updated:

ঘটকে কিন্তু আবার যেমন তেমন ভাবে বসানো যাবে না! নরম মাটির তালের মধ্যে পঞ্চ শস্য দিয়ে, তারউপর বসাতে হবে তাকে

মঙ্গল ঘট
মঙ্গল ঘট
কলকাতা: সমুদ্রমন্থণ! চলছে দেব-আসুরে দ্বন্দ! সমুদ্র থেকে একে একে উথ্থিত হচ্ছে নানা রত্ন, অয়ষ্কান্ত মণি! উঠলেন মহালক্ষ্মী। তারপর সফেন সমুদ্র থেকে উঠল চরাচরের বিষ–হলাহল। সৃষ্টি এসে পড়ল মহাপ্রলয়ের প্রান্তে। মহাদেব ছাড়া কে’ই বা সে আশীবিষকে ধারণ করবেন? তখন বিশ্বকর্মা সেই বিষ রাখার জন্য নির্মান করলেন এক পানপাত্র। আমাদের অতি পরিচিত ঘট। যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে মাস্ট!
পেটমোটা বলে, তাকে নিয়ে মজা করে লাভ নেই! ঘটের পোজিশন কিন্তু ঠাকুরের মূর্তিরও উপরে! মূর্তি খালি শো! যতই সুন্দরী প্রতিমা হোক না কেন, ঘটস্থাপন করতেই হবে এবং পুজোটা হবে ওই ঘটের উপরেই! কারণ, মূর্তি বানান মূর্তিকার। সেই মূর্তির মধ্যে শিল্পীর নিজস্ব চেতনা মিশে থাকে! ফলে, দেব-দেবীর পৌরাণিক ‘লুক’ নষ্ট হয়ে যেতেই পারে বইকী! তাই রিস্ক নিয়ে কাজ নেই! পুরোহিতরা বিধান দিলেন- শিল্পীর শিল্পচেতনাকে পূর্ণ সম্মান দিয়ে, একটি পৃথক ঘটস্থাপন করাটাই শাস্ত্র-নির্দিষ্ট পন্থা!
advertisement
শুধু তাই নয়, প্রতিমার ‘প্রক্সি’-ও দিতে পারে ঘট। পুজোর লগ্ন যায় যায়, অথচ মূর্তি এখনও আসেনি? কোনও সমস্যা নেই! শুধু ঘটস্থাপন করে, ঘটের উপরেই দেবতার আবাহন করা যায়! ঘটের মধ্যে দেবতার আবাহন হবে বলেই সে আর এমনি ঘট থাকে না, হয়ে যায় ‘মঙ্গল’ ঘট।
advertisement
দেখতে বেঢপ হলে কী হয়েছে? ঘট-কে কোনও অংশে সুন্দরী প্রতিমার থেকে কম করে দেখেননি পুরোহিতরা। খালি মূর্তিই সেজেগুজে থাকেন না! সাজানো হয় ঘটকেও! ঘটের মধ্যে পঞ্চরত্ন কিংবা নবরত্ন দিতে হয়, ঘটের মুখে পঞ্চপল্লব, তার ওপরে ফুল! গায়ে সিঁদুর দিয়ে আঁকা হয় স্বস্তিক, তার উপর থাকে নববস্ত্র!
advertisement
‘প্রাণা ইহ প্রাণাঃ’ মন্ত্র জপে দেবতার মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়, কিন্তু ঘটের নিয়ম অন্য। ঘটের ভিতর তো দেবতা আছেনই! এবার তাঁকে সেখানেই চুপচাপ স্থির হয়ে বসে থাকতে হবে। কিন্তু দেবতা বলে কি শুধু অক্সিজেন-এই কাজ চালিয়ে নেবেন? আরে বাবা, তাঁরও তো জল দরকার! আর তাই যাতে জলের খোঁজে দেবতাকে ঘটের বাইরে আসতে না হয়, তাই ঘটের ভিতরেই জল ভরে দেওয়া হয়। আফটার অল, জলই প্রাণের প্রতীক, জলই জীবন। এবং এই জলভর্তি ঘটটা কিন্তু অন্তত একদিন নাড়ানো যাবে না! ঘট নাড়িয়ে দিয়েছেন কী ধরে নিন ঠাকুর বিসর্জন হয়ে গেল।
advertisement
ঘটকে কিন্তু আবার যেমন তেমন ভাবে বসানো যাবে না! নরম মাটির তালের মধ্যে পঞ্চ শস্য দিয়ে, তারউপর বসাতে হবে তাকে। এর মানে হল– এই গাছ গাছালিতে ভরা পৃথিবীর মধ্যে, আমার অভীষ্ট দেবতাকে অধিষ্ঠিত করছি।
ঘট বানানো সহজ নয়। কুম্ভকার যতই এক্সপার্ট হন না কেন, ঘটের একেবারে তলার জায়গাটা থেকে মাঝখানে পেট-মোটা হয়ে আবার ওপরে সরু হয়ে যাওয়াটা যদি-বা একটানে সম্ভব, এক্কেবারে ওপরের চওড়া মোড়ানো অংশটা একবারে তেরি করা যায় না। সেটা আলাদা তৈরি করে নিচের অংশের সঙ্গে জোড়া দিতে হয়। তবে, শাস্ত্রকাররা এই কঠিন কাজটার ক্রেডিট মোটে কুম্ভকারদের দেন না। শাস্ত্র মতে, ঘটের উপরের অংশের সঙ্গে নিচের সংযোগ ঘটান সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা। এমনও বলেন, ব্রহ্মা নাকী ব্রহ্মাণ্ডটাকেও তৈরি করেছেন ঘটের আদলে।
advertisement
সত্যি, একটা ঘট নিয়ে কত ঘনঘটা! এবার একটা সাধারণ কথা মনে করুন! ছোটবেলায় বড়দের কাছে ‘‘বুদ্ধির ঘটটা একটু নাড়া’’– এই বকুনিটা শুনেছেন তো? এর মানেটা কী?
ঘট আসলে কিছুই না! মানুষের বুদ্ধির আধার। অর্থাৎ, মানুষের মাথা। আর মানুষের ‘মস্তক-ঘট’ থেকে চলকে পড়া বুদ্ধিটাই হল সেই অমৃত, যা দিয়ে পৃথিবী চলছে। নিউটনের আপেল থেকে জোবস-এর অ্যাপেল…সবই এই মস্তকঘটের প্রসাদ! আর তাই কলার উঁচিয়ে এত হাই ডিম্যান্ডে থাকেন ঘট মহাশয়!
advertisement
বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
Durga Puja 2024: ঘটের ঘনঘটা, ঘটের ইতিকথা...বাঙালির পুজো পার্বণ অসম্পূর্ণ মঙ্গল ঘট ছাড়া
Next Article
advertisement
ছোট্ট প্রতিমা, বর্ধমানের শিল্পীর তৈরি দুর্গা মূর্তি পাড়ি দিল কানাডায়!
ছোট্ট প্রতিমা, বর্ধমানের শিল্পীর তৈরি দুর্গা মূর্তি পাড়ি দিল কানাডায়!
  • বর্ধমানের শিল্পীর তৈরি দুর্গা প্রতিমা পাড়ি জমালো সুদূর কানাডায়। ফাইবার দিয়ে তৈরি ছোট্ট সাবেকি  একচালার দুর্গা প্রতিমা। পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশে। এর আগে শিল্পী নরওয়েতে লক্ষ্মী ও সরস্বতী এবং আমেরিকায় শিবের মূর্তি পাঠিয়েছিলেন। এই প্রথম বিদেশে দুর্গা প্রতিমা পাঠালেন তিনি।

VIEW MORE
advertisement
advertisement