পঞ্জিকার পাঁচালি

Last Updated:

পঞ্জিকার পাঁচালি

#কলকাতা: এমনিতে সে খুব একটা পাত্তা পায় না। কিন্তু যে কোনও পালা পার্ব্বন, বিয়ে, অন্নপ্রাশন কী শ্রাদ্ধ... বাঙালির যে কোনও অনুষ্ঠানের আগে তার খোঁজ পড়বেই! পঞ্জিকা! প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের দিনই মেলে নতুন পঞ্জিকা অথবা তার ক্ষুদ্র সংস্করণ-- বাংলা ক্যালেন্ডার।
পঞ্জিকা যুগের শুরু থেকে রাজা-জমিদারেরা বছরের শুরুতে বাড়িতে পণ্ডিত ডাকিয়ে বছরের বর্ষফল ও পুজো-পার্ব্বনের দিনক্ষণ জেনে নিতেন। এখনও পুরনো বনেদি বাড়িতে নববর্ষের দিন পঞ্জিকা পাঠে রেওয়াজ আছে।
বাংলা ক্যালেন্ডার কিন্তু বেশ গোলমেলে। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের বছর বা অব্দকে যেমন বলা হয় খ্রিষ্টাব্দ, বাংলা ক্যালেন্ডারে অব্দকে বলা হয় বঙ্গাব্দ। বঙ্গাব্দেও রয়েছে ১২টা মাস। কিন্তু ইংরেজি ক্যালেন্ডারের মতো নির্দিষ্ট নয়। বাংলায় বিভিন্ন মাসের দিন, সংখ্যা, তিথি, নক্ষত্রের সময়কাল অনুযায়ী পালটাতে থাকে। তাই দিনের সংখ্যাও এক-এক মাসে এক-এক রকম। কখনও ২৯, কখনও ৩০ বা ৩১! ৩২-ও হতে পারে!
এই ক্যালেন্ডারের বার তিথি, তারিখ নক্ষত্র ঠিক হয় পঞ্জিকা বা পাঁজি দেখে।
advertisement
advertisement
প্রাচীনকালে জ্যোতিষীরা চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রের অবস্থান, দিন-রাতের হিসেব ও আরও বেশ কিছু তথ্যের উপর নির্ভর করে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত লিখে রাখতেন। প্রধানত, সেখান থেকেই পঞ্জিকার ধারনা তৈরি হয়েছে। পরবর্তীকালে, জ্যোতির্বিদ্যার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পঞ্জিকার গণনা পদ্ধতির পরিবর্তন হতে থাকে এবং পঞ্জিকা ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
advertisement
পুরনো দিনে ছিল একাধিক জাতিগোষ্ঠী। বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্নরকম পঞ্জিকা বা বর্ষপঞ্জি তৈরি করে। কিন্তু কালের নিয়মে, সেগুলির অধিকাংশই এখন আর নেই! তবে এখনও সারা ভারত জুড়ে বঙ্গাব্দ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বর্ষপঞ্জি ব্যবহারের চল রয়েছে। যেমন-- বুদ্ধাব্দ, মহাবীর নির্বাণ-মহাবীরাব্দ, বার্হস্পত্যবর্ষ, চৈতন্যাব্দ, কল্যব্দ, ভাস্করাব্দ, শঙ্করাব্দ, হিজরি সন, মুসলমানী মাস, ভারতের জাতীয় বর্ষপঞ্জী, অর্থবর্ষ।
advertisement
কিন্তু বাংলা সন বঙ্গাব্দ ঠিক কে প্রবর্তন করেছিলেন? এই নিয়ে নানা মুণির নানা মত। অনেকে বলেন, পরাক্রমশালী রাজা-সম্রাটদের রাজ্যাভিষেকের তারিখ থেকে, বা সেই রাজার কোনও উল্লেখযোগ্য রাজ্য জয়ের সময় বা কোনও ধর্মীয় নেতার জন্ম বা তাঁর কোনও উল্লেখযোগ্য কাজকে স্মরণীয় করে রাখতেই সন বা অব্দের প্রচলন হয়।
কিন্তু বঙ্গাব্দের সূচনা কী করে হল, তা খুব স্পষ্ট নয়। কারও মতে, মুঘল সম্রাট আকবর এর প্রচলন করেছিলেন, কেউ বা বলেন রাজা শশাঙ্ক!
advertisement
ইংরেজি ক্যালেন্ডারের মতো, বাংলা পঞ্জিকাতেও রয়েছে ১২টা মাস। এই মাসের নামগুলো এসেছে নানান নক্ষত্রর নাম থেকে।
বিশাখা নক্ষত্র থেকে এসেছে বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রর নামে জৈষ্ঠ, উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্রের নামে আষাঢ়, শ্রবণা নক্ষত্রের নামে শ্রাবণ, উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নামে ভাদ্র, অশ্বিনী নক্ষত্রের নামে আশ্বিন, কৃত্তিকা নক্ষত্রের নামে কার্তিক, মৃগশিরা নক্ষত্রের নামে অগ্রহায়ন, পুষ্যা নক্ষত্রের নামে পৌষ, মঘা নক্ষত্রের নামে মাঘ, উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নামে ফাল্গুন আর চিত্রা নক্ষত্রের নামে চৈত্র।
advertisement
পঞ্জিকা কথাটা এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'পঞ্চাব্দ' থেকে। বার-তিথি-নক্ষত্র-যোগ-করণ-- এই পাঁচ 'অঙ্গ' হল 'পঞ্চাব্দ'। বাংলায় কবে থেকে পঞ্জিকা গণনা আরম্ভ হয়েছিল, তা সঠিক বলা যায় না। অনেকে বলেন, এদেশে হাতে লেখা পঞ্জিকার চল ছিল বহুকাল আগে থেকেই।
সবথেকে প্রাচীন বেদাঙ্গ জ্যোতিষ পঞ্জিকা নাকি সংকলিত হয়েছিল ১৮৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। রাজা-জমিদার ও অভিজাত শ্রেণিই কেবল ব্যবহার করতেন সেই সব হাতে লেখা পঞ্জিকা। আমজনতা প্রধানত নির্ভর করত সূর্যের উদয়-অস্তের সময়কালে। অনুমান করা হয়, খ্রিষ্টিও ষোড়শ শতকে স্মার্ত পণ্ডিত রঘুনন্দন ও রাঘবানন্দ প্রথম বাংলা পঞ্জিকা তৈরি করেছিলেন। সেটি পরে নবদ্বীপ পঞ্জিকা নামে পরিচিত হয়। তখনও পর্যন্ত বঙ্গদেশে মুদ্রণ ব্যবস্থা শুরু হয়নি, তাই রঘুনন্দনের ওই পঞ্জিকা ছিল পুঁথি আকারে।
advertisement
বলা হয়, রঘুনন্দনের পঞ্জিকার ধাঁচই নানাভাবে পরিবর্তিত হয়ে আজকের পঞ্জিকার রূপ নিয়েছে।
নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ রামরুদ্র বিদ্যানিধি পঞ্জিকার সংস্করণ করেন। তারই একটি প্রতিলিপি থেকে নাকি দুর্গাচরণ গুপ্ত ১২৭৬ বঙ্গাব্দে (১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দ) 'গুপ্তপ্রেস' পঞ্জিকার সূচনা করেন। বাংলায় ছাপার মেশিন আসে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে।
যত দূর জানা যায়, ছাপার আকারে প্রথম বাংলা পঞ্জিকার নাম 'রামহরি পঞ্জিকা'। প্রকাশ হয়েছিল ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। আবার অনেকে বলেন, শ্রীরামপুরের গণক কালীদাস ভট্টাচার্যের গণনা করা সূর্য-পঞ্জিকাই প্রথম বাংলা মু্দ্রিত পঞ্জিকা। ছাপা হয়েছিল কৃষ্ণচন্দ্র কর্মকারের চন্দ্রোদয় প্রেসে। দু'বছর পর বের হয় 'বিশ্বম্ভর দেবের পঞ্জিকা'। ১৮১২-এ শোভাবাজার থেকে একটি পঞ্জিকা প্রকাশ হত, যার সংকলক ছিলেন গৌরচন্দ্র বিদ্যালঙ্কার। সাপ্তাহিক সমাচার চন্দ্রিকা প্রেস থেকে ১৮২৭ থেকে বেরতে আরম্ভ করে সেকালের অন্যতম জনপ্রিয় 'নবপঞ্জিকা'। শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশ হত 'শ্রীরামপুর পঞ্জিকা'। এগুলির কোনওটাই এখন আর নেই। বর্তমানে জীবিত পঞ্জিকাগুলির মধ্যে 'গুপ্তপ্রেস' পঞ্জিকাই সবথেকে পুরনো।
বলা বাহুল্য পঞ্জিকার পাতায় যেগুলো ছাপা থাকে সেগুলো সবই 'গ্যারান্টেড', মানে 'কিনলে ঠকবেন না' টাইপস। এর সঙ্গে আরেকটা জিনিস 'গ্যারান্টি' দিয়ে বলা যেতে পারে-- পঞ্জিকার মতো নির্মল হাস্যরসের ভাণ্ডার বাংলা সাহিত্যে খুব কমই আছে।
আরও পড়ুন- পয়লা বৈশাখের সঙ্গে বাঙালির কোনও সম্পর্ক নেই, এর সৌজন্যে মহামতী আকবর
view comments
বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
পঞ্জিকার পাঁচালি
Next Article
advertisement
Rhino rescue: বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
  • ১৩ দিনের অপারেশন রাইনোতে ১০টি গন্ডার উদ্ধার করেছেন বনকর্মীরা

  • বিপর্যয়ের সময় জলদাপাড়া থেকে ভেসে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি গন্ডার

  • অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বনকর্মীরা গন্ডারগুলোকে জঙ্গলে ফেরাতে সক্ষম হন

VIEW MORE
advertisement
advertisement