১০০ দিনের কাজের মজুরের চোখে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন, সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপ থেকে পরীক্ষা দিতে হাজির কলকাতায়

Last Updated:

আমফানে ধূলিসাৎ বাড়ি ৷ শত আর্থিক অনটনেও চোখ থেকে মোছেনি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ৷ বন্যার জল পেরিয়ে হাজির পরীক্ষা কেন্দ্রে..

#কলকাতা: আর্থিক অনটন আছে পরিবারে। তারপরে আবার বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আমফান বাড়িটাকে ধ্বংস করেছে। শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করার জন্য আমফানের দিন কোনক্রমে স্কুলে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। গোটা রাজ্যের মধ্যে আমফানের প্রভাব সবথেকে বেশি হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপেই  । আর সেই ঘোড়ামারা দ্বীপের আমফানে ধূলিসাৎ হওয়া বাড়িতে বসেই ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখছেন তপন পারুয়া। আর্থিক অনটনের জেরে নদী বাঁধের কাজ করেন। অর্থাৎ পেটের টানে ১০০ দিনের দিনমজুরের কাজ করেন এই মেধাবী তপন।
সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে বাড়িতে জল ঢুকে এলাকা বন্যার পরিস্থিতি নিয়েছে। কিন্তু আর্থিক অনটন,আমফান এবং বন্যা কোনটাই তার উদ্যমকে দমিয়ে রাখতে পারিনি। ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখার জন্য করোনা পরিস্থিতিতেও সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপ থেকে দক্ষিণ কলকাতার ডিপিএস রুবি পার্ক স্কুল সর্বভারতীয় মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে এসেছিল এই মেধাবী ছাত্র। লকডাউনের কারণে দুদিন আগেই অর্থাৎ গত ১০ সেপ্টেম্বর বেহালায় তার জামাইবাবুর বাড়িতে এসেই আশ্রয় নিয়েছে।পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ কে হাতছানি করতে চায়নি গ্রামের একমাত্র ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা এই মেধাবী ছাত্র।
advertisement
রবিবার সাতসকালেই পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে পড়তে থাকা অবস্থাতেই জিজ্ঞাসা করা হলে তপন বলে " আমফান আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু এই সর্বভারতীয় মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্যই আমার বইপত্রগুলোকে তুলে রাখতে পেরেছিলাম শেষ মুহূর্তে। সেগুলোকে সম্বল করেই আমার আজকের পরীক্ষা দিতে আসা। আমার বাড়িতে আর্থিক অনটনের জেরে ভাইয়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি নদী বাঁধের কাজ করে অন্তত ডাক্তার হওয়ার জায়গাটা সহজ করতে চাই। তাই আমার এত পথ পেরিয়ে পরীক্ষা দিতে আসা।"
advertisement
advertisement
বাড়িতে আর্থিক অনটন অনেকদিন ধরেই। কিন্তু তবুও দমিয়ে রাখতে পারিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের এই মেধাবী ছাত্রকে। গ্রামে শুধুমাত্র মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে স্কুল ছিল না। আর তাই বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে গিয়েই কাকদ্বীপের নিশ্চিন্দপুর রাখালদাস হাই স্কুল থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে এই মেধাবী ছাত্র। তবে স্কুলের হোস্টেলে থেকেই উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনাটা শেষ করেছে। আর্থিক অনটনের জেরে কোন কোচিং সেন্টার বা কোন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের থেকে প্রাইভেট টিউশন নিয়ে পড়াশোনা করতে পারিনি তপন পারুয়া। কিন্তু চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন যেহেতু সে দেখেছিল তাই স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাই তপনের পাশে দাঁড়িয়েছে। কি কি জিনিস পড়তে হবে, কী ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে যাবতীয় স্টাডি মেটেরিয়াল স্কুলের হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক দিয়েই তপনকে সহযোগিতা করেছে। স্কুলের সামনেই কালভার্টের উপর বসে থেকেই কার্যত চোখ ভারী করে তপন বলে " স্যার আমাদের তো আর শহরের ছেলে মেয়েদের মতো বিভিন্ন কোচিং সেন্টার থেকে টাকা দিয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি নেই। তাই আমি যতোটুকু পেয়েছি সবটাই আমার স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের থেকে। হ্যাঁ এটা ঠিক আমফানের এর প্রভাবে আমাদের অনেকটাই পিছিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু তবুও যেটুকু সময় পেয়েছি পড়াশোনা করেছি।"
advertisement
তবে তপনের এই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখার উৎসাহে উৎসাহিত তার পরিবারও। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তপনের জামাইবাবু তাপস নস্কর বলেন " ও শ্রমিকের কাজ করে। পড়াশোনা করতে ভালোবাসে। আর্থিক অনটনের কারনে ওর ভাইয়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এখন ডাক্তার হতে চায়।১০০ দিনের কাজ করতে করতেই ওর পড়াশোনা। আমরা চাই ও সফল হোক।" গ্রামে ডাক্তার বাবা এখনও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর সেটা  বিলক্ষণ জানে সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের এই মেধাবী ছাত্র। আর তাই চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ পেলে গ্রামবাসীদের জন্য চিকিৎসা সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়। সর্বভারতীয় মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষা তপন  পারুয়ার থেকে দিতে যাওয়ার আগে এমনই প্রতিক্রিয়া উঠে এল ।
advertisement
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
১০০ দিনের কাজের মজুরের চোখে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন, সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপ থেকে পরীক্ষা দিতে হাজির কলকাতায়
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement