Spy: ভারতের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় রহস্য! ৩ 'অলৌকিক' গুপ্তচর - কারও অস্ত্র বাঘের লোম, কেউ বা ছদ্ম লামা! জানেন এই কাহিনি? ফেল করে যাবে আজকের সব স্পাই সিরিজও

Last Updated:

Spy: এদেশেই ছিলেন এমন অসংখ‍্য গুপ্তচর, যাদের কাহিনীতে চাপা পড়ে গিয়েছে সময়ের পলি। ভারতের ইতিহাস ঘেঁটে তেমনই তিন সেরা গুপ্তচরের কথা রইল এই প্রতিবেদনে।

ভারতের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় রহস্য! ৩ 'অলৌকিক' গুপ্তচর - কারও অস্ত্র বাঘের লোম, কেউ বা ছদ্ম লামা! জানেন এই কাহিনি? ফেল করে যাবে আজকের সব স্পাই সিরিজও
ভারতের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় রহস্য! ৩ 'অলৌকিক' গুপ্তচর - কারও অস্ত্র বাঘের লোম, কেউ বা ছদ্ম লামা! জানেন এই কাহিনি? ফেল করে যাবে আজকের সব স্পাই সিরিজও
দেশের ৩ খ‍্যাতনামা বিপ্লবীর নাম বলুন তো? উত্তর ঝটপট তৈরি। দেশের ৩ সেরা গুপ্তচরের নাম বলুন তো? গুপ্তচর! স্পাই! এ শব্দ শুনলে মনে আসতে পারে বিদেশী সুপুরুষ জেমস বন্ড বা এ দেশের ‘পাঠান’, ‘টাইগারদের’ নাম। কিন্তু এরা তো সবাই কাল্পনিক চরিত্র। বাস্তবে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন কারা? মগজাস্ত্রে খানিক শান দিয়ে কেউ কেউ বলবেন ‘রাজির’ সেহমত বা রবীন্দ্র কৌশিকের নাম। খবরসন্ধানীরা অনেকেই জানেন অজিত ডোভালের ছদ্মবেশে পাকিস্তান অভিযানেরর কথা। মোটের উপর সংখ‍্যাটা হাতে গোনা। কিন্তু এদেশেই ছিলেন এমন অসংখ‍্য গুপ্তচর, যাদের কাহিনীতে চাপা পড়ে গিয়েছে সময়ের পলি। ভারতের ইতিহাস ঘেঁটে তেমনই তিন সেরা গুপ্তচরের কথা রইল এই প্রতিবেদনে।
ভগতরাম তলওয়ার
আফগানিস্থানের পাহাড়ি পথে চলেছেন পাঠানের পোশাক পরা দুই ছদ্মবেশী ভারতীয়। একজন বাঙালি, অন‍্যজন পাঞ্জাবী। কাকা এবং ভাইপো। দু’জনের উদ্দ‍্যেশ‍্য সবার চোখে ধুলো দিয়ে আফগানিস্থানের বর্ডার পেরিয়ে যাওয়া। পথে হঠাত্‍ উদয় হলেন এক পাঠান। চেহারা দৈত‍্যাকার। কাকা-ভাইপোর পথ আটকালেন তিনি। কে তোমরা? কোথায় যাচ্ছ? প্রশ্ন পাঠানের। ভাইপো জানালেন তাঁর নাম রহমত খান। তাঁরা লালপুরা (আফগানিস্তানের একটি জায়গা) থেকে আসছেন। তাঁর কাকা মূক ও বধির। তাই ভাইপো তাঁকে আদ্দা শরিফে (আফগানিস্থানের একটি ধর্মীয় স্থান) নিয়ে যাচ্ছেন, চিকিত্‍সার জন‍্য। পাঠান তবু সন্তুষ্ট নয়। বললেন, ডাক্তারি তিনিও একটু আধটু জানেন, কই দেখি তো জিভটা? কাকার জিভ টেনেটুনে পরীক্ষা করতে লাগলেন। তবু শতচেষ্টাতেও জিভ নড়াতে পারলেন না। পাঠান নিশ্চিত, লোকটা সত‍্যিই কথা বলতে পারে না। গরম জলে ফিটকিরি মিশিয়ে মুখে রাখার পরামর্শও দিলেন তিনি।
advertisement
অন‍্য দিকে, কাকা-ভাইপোর অবশ‍্য ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে। কোনওমতে রক্ষা পেয়েছেন। পরিচয় ফাঁস হয়নি। পরে এই কাকাই আফগানিস্থান পেরিয়ে মস্কো হয়ে পৌছে যাবেন জার্মানি। দেখা করবেন হিটলারের সঙ্গে। তারপর জাপানে গড়ে তুলবেন ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন‍্য ভারতের সশস্ত্র সেনাবাহিনী আজাদ হিন্দ ফৌজ! তিনি ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আর ভাইপো? তাঁকে অবশ‍্য বিশেষ কেউ চেনে না। মহানিষ্ক্রমণের সময় পেশোয়ার থেকে কাবুলের পথে নেতাজির ছায়াসঙ্গী ছোটখাট চেহারার ধুরন্ধর রহমত খানের আসল নাম ভগতরাম তলওয়ার। ঐতিহাসিক তপন রায়চৌধুরী যাঁকে আখ‍্যা দিয়েছিলেন গুপ্তচরদের রাজপুত্র, ‘প্রিন্স অ্যামাং স্পাইজ’।
advertisement
advertisement
বাঁদিকে ভগররাম তলওয়ার, ডানদিকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
বাঁদিকে ভগররাম তলওয়ার, ডানদিকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
রাজপুত্রই বটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তিনিই ছিলেন একমাত্র গুপ্তচর যিনি একটি বা দুটি নয়, একসঙ্গে পাঁচটি দেশের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন। নেতাজির সঙ্গে ‘পঞ্চান্ন দিন’ একত্রে কাটালেও ভগতরাম গোপনে ছিলেন প্রথমে ডাবল এজেন্ট। পরে ‘কোয়াড্রুপল এজেন্ট’। পরে তিনি একসঙ্গে পাঁচটি দেশের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন বলেই জানা যায়। সোভিয়েত রাশিয়া, জার্মানি, ইতালি, ব্রিটেনের পাশাপাশি শেষ দিকে জাপানেরও হয়েও গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন ভগতরাম। ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার পিটার ফ্লেমিং (যিনি আবার জেমস বন্ড স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিংয়ের দাদা) তাঁকে ‘সিলভার’ কোডনেম দেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অ‍ন‍্যতম জীবনীকার মিহির বসুর লেখা থেকে জানা যায়, সুভাষকেও একসময় ছলনা করেছেন ভগতরাম। সঙ্গী ‘রহমত খানকে’ দেওয়া সুভাষের অনেক গোপন তথ‍্য তিনি নাকি পাচার করে দেন।
advertisement
এমনকী তুখোড় বুদ্ধির ভগতরাম বোকা বানিয়েছেন হিটলারকেও। দিল্লির বড়লাট সাহেবের বাড়ির বাগানে জার্মানদেরই দেওয়া শক্তিশালী ট্রান্সমিটার নিয়ে বার্লিনের সিক্রেট সার্ভিসকে নানা ভুল তথ্য পাঠিয়ে বিভ্রান্ত করছেন তিনি। ভগতরামকে নিয়ে লেখা মিহির বসুর বই ‘দ‍্য স্পাই হু ফুলড্ নাৎসিজ’ থেকে জানা যায় একটি চমকপ্রদ ঘটনা। পিটার ফ্লেমিং একবার ভগতরামকে এক ব‍্যক্তি সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করে জানান, হয়তো সিলভারের পর্দা ফাঁস করে দিতে পারে এই ব‍্যক্তি। ভগতরাম তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতালেন। তাঁকে নিমন্ত্রণ জানালেন নৈশভোজে। আর তরকারিতে মিশিয়ে দিলেন একটা বাঘের লোম! আভ‍্যন্তরিণ রক্তক্ষরণ, তারপর মৃত‍্যু। পিটারের ভাই ইয়ান ফ্লেমিংয়ের কাল্পনিক গুপ্তচর জেমস বন্ডের নকল কীর্তিও, তাঁর আসল কীর্তির কাছে লজ্জা পাবে! স্বাধীনতায় ভগতরামের ভূমিকা কতটুকু? বহু ঐতিহাসিকদের মতে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন নেতাজীর সঙ্গে, বিপ্লবীদের সঙ্গে। সুতরাং ভগতরাম ভাল না মন্দ, কেমন মানুষ ছিলেন? এ প্রশ্ন বিচার্য। তবে গুপ্তচর হিসেবে তিনি যে পৃথিবীর অন‍্যতম সেরা, তা বোধকরি প্রশ্নাতীত।
advertisement
শরত্‍ চন্দ্র দাস
গুপ্তচর, তাও আবার বাঙালি? আদৌ আছেন কেউ? উত্তর জানতে যাওয়া যাক ভ্রমণপিপাসু বাঙালির অতি প্রিয় শহর দার্জিলিং। এই শহরের শিমধামের হিল কার্ট রোডে এখনও রয়েছে একটি বাড়ি, নাম ‘লাসা ভিলা’। যত্নের অভাবে এখন ভগ্নপ্রায়। তবে নব্বইয়ের দশকে এই বাড়িতেই হেঁটে বেড়াতেন এক বাঙালি গুপ্তচর। এমন এক বাঙালি যিনি দুর্গম পাহাড়ি পথ পেরিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন সেকালের রহস‍্যে মোড়া তিব্বতে। লিখেছেন তিব্বতি-ইংরেজি ভাষার অভিধান। যাঁকে বৌদ্ধ শাস্ত্রচর্চার জন্য খেতাব দিয়েছিলেন তাইল‍্যান্ডের রাজা। ইংরেজরা দিয়েছিলেন রায় বাহাদুর খেতাব। দু:সাধ‍্য হিমালয় যাত্রার মাধ‍্যমে খুঁটিনাটি অজানা ভৌগোলিক তথ্য আবিষ্কারের জন্য সেই বাঙালিকে সম্মানিত করেছে লন্ডনের রয়্যাল জিয়োগ্রাফিক সোসাইটি। উনিশ শতকে তিব্বত চর্চার জন‍্য যাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা বিশ্ব। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসের এমন এক গুপ্তচর, যিনি ভালবেসেছিলেন তাঁর গুপ্তবৃত্তির ঠিকানাকে। তিনিও এক শরত্‍ চন্দ্র। বাঙালির বিস্মৃত শরত্‍ চন্দ্র, শরত্‍ চন্দ্র দাস। যাঁকে কেন্দ্র করেই নাকি লেখক রুডিয়ার্ড কিপলিং তৈরি করেছিলেন বিখ‍্যাত ‘কিম’ উপন‍্যাসের চরিত্র ‘হরি চন্দ্র মুখার্জিকে’ (গল্পের এই চরিত্র ছিল এক শিক্ষিত বাঙালি গুপ্তচর যে তিব্বত পাড়ি দেয়)।
advertisement
এই বাঙালি গুপ্তচর আদতে পূর্ববঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশ) চট্টগ্রামের আলমপুরের বাসিন্দা। শরত্‍ চন্দ্র ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। এই কলেজে তখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হত। ছোটথেকেই লেখাপড়ায় তুখোড় যুবক শরত্‍ চন্দ্র খুব তাড়াতাড়ি নজরে পড়লেন সাহেব শিক্ষকদের। কিন্তু বাধ সাধল পিলে জ্বর বা ম‍্যালেরিয়া। সে যাত্রা বাঁচিয়ে দিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক সি বি ক্লার্ক। স্বাস্থ‍্য উদ্ধারের জন‍্য হাওয়া বদল করতে শরত্‍ চন্দ্র চলে গেলেন দার্জিলিং। সেখানে সদ‍্য একটি স্কুল ভোটিয়া বোর্ডিং স্কুল তৈরি করেছেন সাহেবরা। শরত্‍ চন্দ্র হয়ে গেলেন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এই স্কুলে পড়াতে গিয়েই প্রথম তিব্বতের সংস্কৃতি এবং বৌদ্ধসংস্কৃতির প্রতি তীব্র আকর্ষণ জন্মায় তাঁর। শুরু করেন পড়াশোনা। কিছু ঐতিহাসিকের মতে এই স্কুলেই নাকি গোপনে তিব্বতি গুপ্তচরদের প্রশিক্ষণের কাজ চালাত ব্রিটিশরা। কারণ দুর্ভেদ‍্য, অগম‍্য তিব্বত জয় নিয়ে ততদিনে টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে একদিকে ব্রিটিশ এবং অন‍্যদিকে রাশিয়ার মধ‍্যে।
advertisement
শরত্‍ চন্দ্র দাস
শরত্‍ চন্দ্র দাস
ভারতীয় উপমহাদেশ জয় করতে পারলেও সাহেবরা কোনও ভাবেই ঘাঁটি গাড়তে পারেনি তিব্বতে। রহস‍্যময় দুর্গম তিব্বত তখন ব্রিটিশদের সাম্রাজ‍্য বিস্তারের পথে ‘ব্ল‍্যাক হোল’। সাদা চামড়ার ভিনদেশী সাহেবদের কোনওভাবেই সীমানায় ঢুকতে দেয়না তিব্বতিরা। কঠিন পাহাড়ি পথ জয়ে বিফল ইংরেজরা বুঝলেন এ কাজ তাদের পক্ষে দু:সাধ‍্য। সম্ভব কেবলমাত্র ভারতীয়দের পক্ষে, যারা বৌদ্ধসংস্কৃতি, তিব্বতি ভাষা বোঝে। এমন কিছু তুখোড় বুদ্ধিধারী ভারতীয় যারা মিশে যাবে তিব্বতিদের ভিড়ে, কেউ লামা সেজে, কেউ ব‍্যবসায়ীর ছদ্মবেশে, কেউ বা শিক্ষকের অছিলায়। লামা সেজে মিশে যাওয়া থাকা এই ভিনদেশীদের সাধারণ যপযন্ত্রে মন্ত্র লেখা কাগজের বদলে ভরা থাকত কম্পাস, ভৌগলিক মানচিত্র তৈরির গোপন যন্ত্রপাতি। লামার পোশাকের আড়ালে রিভলবার। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র, তিব্বতের ভাষা, সংস্কৃতিতে সুপণ্ডিত, বৌদ্ধধর্ম চর্চায় বিদ্বান শরত্‍চন্দ্র এ কাজে ছিলেন ‘পারফেক্ট ফিট’।
বঙ্গসন্তান শরত্‍ চন্দ্রের পরিশ্রমের ফসল থেকে ব্রিটিশরা বিভিন্নভাবে সাহায্য পেয়েছে। কিন্তু লামার পোশাকের আড়ালে রিভলবার ভরে রাখলেও শরত্‍চন্দ্রকে কেবল গুপ্তচর বললে তা অন‍্যায় হয়। তিনি ভালবেসেছিলেন তিব্বতকে, ভালবেসেছিলেন তিব্বতিদের, বৌদ্ধসংস্কৃতিকে। পরপর দু’বার তিব্বত যাত্রায় এই ‘নিষিদ্ধ নগরী’ সম্পর্কে অনেক তথ‍্য সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয়বার লাসা থেকে ফিরে আসার পর আর তিব্বত যাত্রার অনুমতি পাননি শরত্‍ চন্দ্র। এমনকী গুপ্তচর শরত্‍ চন্দ্রকে যে তিব্বতি লামারা তাঁকে সাহায্য করেছিলেন, সকলকেই নাকি পরবর্তী কালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়! কিন্তু মনেপ্রাণে তিব্বতকে তিনি ভুলতে পারেননি। তাই হিমালয়ের কোলে তৈরি বাড়িটির নাম রেখেছিলেন ‘লাসা ভিলা’।
আজিজ উন নিসা
মহিলা গুপ্তচরের নাম করতে বললে অধিকাংশজনেই বলবেন মাতা হারির কথা। বারাঙ্গনা মাতা হারির ছদ্মবেশে গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাস সুপরিচিত। কিন্তু ভারতীয় নারীরাই বা কম যায় কোথায়? যেকোনও যুদ্ধের অন‍্যতম অস্ত্র হল তথ‍্য। শত্রুপক্ষের গোপন চক্রান্তের খবর জানা। আর গোপন তথ‍্য জানতেই প্রয়োজন পড়ে গুপ্তচরের। স্বাধীনতার দীর্ঘ লড়াইতে ব্রিটিশদের ঘাঁটি থেকে খবর আনাও ছিল অত‍্যন্ত জরুরি। সেখানেই বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন ‘তওয়াইফরা’। স্বাধীনতার প্রসঙ্গ উঠলেই যে বিপ্লবীদের নাম মনে আসে, সেখানে নারীদের সংখ‍্যা এমনতেই হাতে গোনা। তাও আবার ‘তওয়াইফ’! আলোকময় কোঠায় নৃত‍্য, সুরের মূর্ছনায় রাজা, মহারাজা, বাবুদের মনোরঞ্জন করাই যাদের কাজ। প্রায় ধূসর, তবু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের পাতা আতস কাঁচে ফেললে উঠে আসবে এমনই এক নারীর ভূমিকা। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা এক মহিলা গুপ্তচর। তিনি আজিজ উন নিসা, কানপুরের কোঠায় যাঁর খ‍্যাতি ছিল আজিজান বাই নামেও।
স্বাধীনতা শুরু থেকেই ছিল তাঁর ধমনীতে। দেশের স্বাধীনতার লড়াইতে জড়িয়ে পড়ার আগেই তিনি ভেঙেছিলেন পরাধীন তওয়াইফের শৃঙ্খল। লক্ষ্ণৌতে জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা। কিন্তু লক্ষ্ণৌতে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের ‘মেহফিলের পরী’ নয়, আজিজ উন হতে চেয়েছিলেন স্বাধীন। তাই লক্ষ্ণৌ ছেড়ে তিনি চলে আসেন কানপুর। কানপুরে তখন ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সৈন‍্যদের ঘাঁটি। সেখানেই নিজের ‘কোঠা’ গড়ে তুলেছিলেন আজিজ উন। নৃত‍্য, গীতে পারদর্শী আজিজান বাইয়ের কোঠা খ‍্যাতিলাভ করতে বেশি সময় নেয়নি।
বাইজি, বা ‘তওয়াইফ’ শব্দগুলি এখন ‘বারবনিতা’ শব্দের প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেকালের চিত্র মোটেই তেমন ছিল না। শাস্ত্রীয় নৃত‍্য-সঙ্গীতের আখড়া, এককথায় কোঠা ছিল তখনকার কলাকেন্দ্র। দক্ষ, পারদর্শী শিল্পীরাই ছিলেন বাইজি। এ দেশে প্রবেশের পর ভারতীয় সঙ্গীত, নৃত‍্যের টানে এই ক্ষেত্রগুলিতে যাতায়াত বাড়তে থাকে ইংরেজদেরও। শাসক থেকে সৈন‍্য, ঘুঙরুর বোল, সুর-তালের ছন্দে মজে বাইজিদের কোঠায় ভিড় জমাতে শুরু করেন সাহেবরা। সাহেবদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও বাড়তে থাকে বহু তওয়াইফের। কানপুরে আজিজান বাইয়ের কোঠাতেও আসতে শুরু করলেন ব্রিটিশ সৈন‍্যরা। কান পাতলে শোনা যাবে কোঠাতেও তখন গোরা সৈন‍্যরা খানিক উদ্বিগ্ন, ভারতীয় সিপাহীরা বিদ্রোহ শুরু করেছে যে!
আজিজ উন নিসা
আজিজ উন নিসা
সালটা ১৮৫৭। সিপাহী বিদ্রোহের আগুন তখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মধ‍্যভারতে। ব‍্যারাকপুরের সেনা ছাউনি থেকেই ভারতীয় সিপাহীদের কামান, গোলা গর্জে উঠছে গোটা দেশজুড়ে। ভারতের প্রথম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। কানপুরেও ছড়িয়ে পড়েছে সেই আগুন। কানপুরে সিপাহী সামসুদ্দিন সওয়ার ছিলেন ৪২ ক‍্যাভেলরিতে। দৃঢ়চেতা সামসুদ্দিন সওয়ারের সঙ্গে নিজের কোঠাতেই প্রথম আলাপ হয় আজিজ উনের। ধীরে ধীরে বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। সামসুদ্দিনের কারণেই কি সিপাহী বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়েছিলেন আজিজান বাই? বহু ইতিহাসবিদ মানতে নারাজ। স্বাধীনচেতা আজিজান নিশ্চয়ই নিজেই দেখেছিলেন গোরাদের শৃঙ্খল ছেঁড়ার স্বপ্ন। তাই কোঠায় আসা সৈন‍্যদের আলোচনা কান পেতে শুনে, তথ‍্য সংগ্রহ করে রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে সে খবর পৌঁছে দিতেন সিপাহী বিদ্রোহে সামিল প্রেমিক সামসুদ্দিনকে। তাঁর কোঠাই হয়ে উঠেছিল বিদ্রোহীদের গোপনে ছক কষার কেন্দ্র।
কেবল গোপনে নয়, আজিজ উন লড়াই করেছেন সম্মুখ সমরেও। ১৮৫৭ সালেরই জুন মাসে কানপুরে সেনা ছাউনিতে আক্রমণ করল গোরা সৈন‍্যরা। চলছে লড়াই। গুলি-কামানের শব্দের মাঝেই দেখা গেল নারীতে। ঘোড়ায় উপর বসে, হাতে পিস্তল। সেপাইদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে লড়াই করছেন ব্রিটিশদের সঙ্গে। পরে ব্রিটিশরা খোঁজ নিয়ে জানল ওই নারীই চালান এলাকার বিখ‍্যাত কোঠা, তাঁর নাম আজিজ উন নিসা।
বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
Spy: ভারতের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় রহস্য! ৩ 'অলৌকিক' গুপ্তচর - কারও অস্ত্র বাঘের লোম, কেউ বা ছদ্ম লামা! জানেন এই কাহিনি? ফেল করে যাবে আজকের সব স্পাই সিরিজও
Next Article
advertisement
Jerusalem Bus Attack: বাসের ভিতরে এলোপাথাড়ি গুলি, জেরুজালেমের রাস্তায় ভয়ঙ্কর দৃশ্য, পর পর মৃত্যু! ইজরায়েলের হুঁশিয়ারির বদলা নিল হামাস?
বাসের ভিতরে এলোপাথাড়ি গুলি, জেরুজালেমে বড়সড় হামলা, মৃত্যু! হুঁশিয়ারির বদলা নিল হামাস?
  • জেরুজালেমে বাসে বড়সড় হামলা৷

  • মৃত অন্তত ৪, আহত ১৫৷

  • ইজরায়েলের হুঁশিয়ারির পরই বদলা নিল হামাস?

VIEW MORE
advertisement
advertisement