#কলকাতা: সারা দেশেই সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত ক্রমশই দুর্বল হচ্ছে। কী কেন্দ্র কী রাজ্যে। দু জায়গাতেই এই লক্ষ্মণ ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে। এর দায় এড়াতে পারেন না কোন নির্বাচিত সরকার। সে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারই হোক কিংবা রাজ্যে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকার।
এক সময়, দেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার পরের ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থা নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে আপোষহীন ধারার সংগ্রামীরা, বাম ও অতিবাম পন্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই একে প্রকৃত স্বাধীনতা বলে মেনে নিতে পারেননি। দেশের সংসদকে 'শুয়োরের খোঁয়াড়' বলেও চিহ্নিত করেছিলেন তাঁদের কেউ কেউ। কিন্তু, কালক্রমে তাঁরা প্রায় মেনে নিয়েছেন, বুলেট নয়, ব্যালটই আসল ক্ষমতার উৎস। এই মেনে নেওয়া কোন বোঝাপড়া বা নিজের সঙ্গে সমঝোতা নয়। আসলে এ হল সেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহতা নদীর জলে থিতিয়ে পড়া পলি মাটির মতো। যে মাটির উর্বরতা তৈরি হয়েছে নানা মত, নানা পথের সংস্কৃতির সংশ্লেষের মধ্য দিয়ে। সেই সংস্কৃতি কোন একক জাতি বা একক রাষ্ট্রকে মহীয়ান করার জন্য তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছে মানব সভ্যতাকে মহীয়ান করার জন্য। একের মধ্যে জন্মাইয়া যে বহুত্ববাদের কথা বলে। প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে, তার মূল শক্তি এই সংসদীয় ব্যবস্থায়। ফলে, সংসদীয় ব্যবস্থা বিপন্ন বা দূর্বল হয়ে পড়লে আমাদের রাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত চালিকাশক্তিই দূর্বল হয়ে পড়বে। এই সার সত্য উপলব্ধি করতে পারছেন মোদি, মমতা সবাই। কিন্তু, দাওয়াই দিতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: শরীরে স্পর্শ আবশ্যক নয়, শিশুদের সঙ্গে যৌন অপরাধে সুপ্রিম কোর্টের বড় রায়!
বুধবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, দেশের ঐক্য ও অখন্ডতা রক্ষা করার জন্য সংসদীয় সাংসদদের নজর রাখতে হবে। একই দিনে রাজ্যে একটি প্রশাসনিক বৈঠক করতে গিয়ে দলীয় বিধায়কদের নিয়ম মেনে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন বিধায়কদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রবীন বিধায়কদের থেকে বিধানসভার রীতিনীতি শিখে তা ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন: 'দলের বিলুপ্তি অবশ্যম্ভাবী...', আরও বড় 'বিস্ফোরণের' ইঙ্গিত দিলেন তথাগত রায়!
এদিকে,হিমাচলে সর্বভারতীয় স্পিকার্স কনফারেন্সে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অধিবেশনে সাংসদদের ভূমিকা, সাংসদদের হতাশাজনক উপস্থিতি নিয়ে আক্ষেপ করেছেন বিড়লা। গত মঙ্গলবারই, রাজ্য বিধানসভায় কেন্দ্র বিরোধী প্রস্তাবের ভোটাভুটি করতে গিয়ে রাজ্যের শাসক দলের উপস্থিতির বিষয়টি নজরে আসে মুখ্যমন্ত্রীর। দলের প্রায় শতাধিক বিধায়ক ওই দিন ভোটাভুটির সময় হাজির ছিলেন না বিধানসভায়। এমনকী, এই ঘটনার পর, গতকাল উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী যখন বিধায়কদের সতর্ক করছেন এই বিষয়ে, তখন বিধানসভায় শাসক দলের আনা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিলের আলোচনায় ট্রেজারি বেঞ্চের ছবিটা কণামাত্র বদলালো না।
পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী থেকে স্পিকাররা বারবার সতর্ক করার পরেও পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না। কারণ, রোগের মূল অনেক গভীরে। তাই, চর্মরোগের মতো উপরে মলম লাগালে, সাময়িক রোগটা ঢাকা পড়ে। কিন্তু, তা সারে না।
সংসদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর পাঁচটা অসুখের মত এটাও একটা সামাজিক রোগ। গভীরতর অসুখ। তাই চিকিৎসার জন্য প্রথমে রোগটাকে চিহ্নিত করে তার উৎস সন্ধান করতে হবে। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, ''আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থা এখন অনেকটা জারজ সন্তানের মত। জন্মের পর যে শিশু তার জন্মসূত্রকেই অস্বীকার করে। আমাদের সাংসদ, বিধায়করা সংসদীয় ব্যবস্থায় জিতে আসার পর, যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তিনি জনপ্রতিনিধি হলেন, তাকে গুরুত্বহীন মনে করছেন। অস্বীকার করছেন।'' কিন্তু, প্রশ্ন একটাই কেন অস্বীকার করছেন? আসলে, এরা অ-সংসদীয় পথে সংসদীয় ব্যবস্থার ঘেরাটোপে এসে পড়ছেন। ফলে, কায়েমি স্বার্থে ভোটে জিতে ক্ষমতা ধরে রাখতে সংসদীয় ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখতে পারেন না। আর, সেই কারণেই এই ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্যও তাদের কোন দায় থাকে না।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Mamata Banerjee, Narendra Modi