মকর সংক্রান্তির কুঁকড়া-লড়াই, বিতর্ক ট্র্যাডিশন লুকোছাপার আড়ালে জমজমাট সেলিব্রেশন
Last Updated:
কুঁকড়া-লড়াই, আদিবাসী বাংলার প্রাণের স্পোর্টস
#কলকাতা: বাংলা ক্যালেন্ডারে পৌষ মাসের শেষদিন। মকরসংক্রান্তি। একদিকে সাগর তীর্থে ডুব দিয়ে পাপস্খালন আর পুণ্যসন্ধান। অন্যদিকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে টুসুমণির আরাধনা। লোকায়ত উৎসবের এই পার্বণীর পাশাপাশি গোটা বাংলায়, রকমারি পিঠে-পুলি-পায়েসের গন্ধে রমরমা আবহ। নতুন গুড়, খাঁটি দুধ আর নতুন চালের কারিগরিতে পায়েস-পিঠের রোম্যান্টিকতা ইতিমধ্যে আপনার মোবাইল-মেসেঞ্জারে এসে গেছে। বাড়িতে তৈরি হোক বা না হোক অন্তত দেখে ফেলেছেন নিশ্চিত। কেউ কেউ হয়তো ইতোমধ্যে সেরেও ফেলেছেন পেটপুজো। তবে আরও একটা ঘটনা ঘটছে, এই মকর সংক্রান্তি উৎসব ঘিরে। তা হল কুঁকড়া-লড়াই। আদিবাসী বাংলার প্রাণের স্পোর্টস।
পৌষ সংক্রান্তির ঠিক আগের দিন শুরু হয় প্রতিযোগিতা। চলে পুরো মাঘ মাস ধরে। জঙ্গলমহল এলাকার বিভিন্ন ধুলাট বা পাড়ায় এখন মোরগ-লড়াইয়ের আখড়া।স্থানীয় ভাষায় সংক্রান্তির আগের দিন বাঁউড়ি পরব। এই পরব ঘিরেই ধুলাটে জমে ওঠে জমজমাট মোরগ-লড়াই। গোপিবল্লভপুর, ছাতনাশোল, ফেকো হাটে এখন চলছে কুঁকড়া-লড়াই। মূল ধারণা, পায়ে ছোট্ট ছুরি বেঁধে লড়িয়ে দেওয়া হবে দুই মোরগকে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী মোরগের মালিক পরাজিত মোরগটি পেয়ে যাবে। রাতে হবে সেই মোরগ রান্না। তবে, প্রচুর মানুষ মোরগ না এনেও অংশগ্রহণ করেন এই মোরগ লড়াইয়ে। তার বাজি ধরেন। জয়ী মোরগের ওপর। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে কুঁকড়া-লড়াই ঘিরে বাজিটাই নাকি মূল আকর্ষণ।
advertisement
বাজির কিছু টাকাও পান বিজয়ীরা। বেশির ভাগটাই অবশ্য নিয়ে যায় উদ্যোক্তারা। মকর সংক্রান্তি উৎসব ঘিরে মেলা, মেলার এক কোণে মোরগ-লড়াইয়ের আখড়া। সেখানে এক এক এলাকায় চলে কয়েক লক্ষ টাকার বেটিং। সর্বস্বান্ত হয়ে যায় বেশ কিছু আদিবাসি কিছু পরিবার। শুধু কি বাংলায়? গোটা দেশের আদিবাসি পাড়ায় পাড়ায় এই সময় চলে মোরগ-লড়াই। তেলেঙ্গানা অন্ধ্র তামিলনাড়ু ছত্তিশগড় মহারাষ্ট্র সহ দেশের সর্বত্র আদিবাসি অঞ্চলে মকর সংক্রান্তি উৎসব চলে। মেলা বসে। টুসু স্নানে গান নাচের অনুষঙ্গে জড়িয়ে থাকে নতুন ফসলের আবাহন। সঙ্গে খাওয়া দাওয়া আর মোরগ-লড়াই।রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা। তেলেঙ্গানা ছত্তিশগড়ের মত কোন কোন রাজ্য যদিও ব্যান করেছে মোরগ লড়াই। যার একটা কারণ যদিও
advertisement
advertisement
“প্রিভেনশন-ক্রুয়েলটি-এগেনস্ট-অ্যানিমেল” দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই মোরগ লড়াইকে ঘিরে যথেচ্ছ বেটিং বা জুয়া। “মোরগ লড়াই” খেলতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় বেশ কিছু পরিবার। মরে অনেক ভাল জাতের মোরগ আর সারাবছরের মুনাফা করে নেয় উদ্যোক্তারা। দেশের বেশ কিছু প্রান্তে, অন্ধ্র-তামিলনাড়ুর সীমান্তে চিতুর, কাপাডা, ভাকারাপেটা ইয়ারাভেরিপেল্লাম, শেষাচল্লম অঞ্চলে, তেলেঙ্গানার খাম্মাম, ভদ্রাদি, কোথা গুদাম, আশোয়ারাপেট অঞ্চলে ব্যাপক হারে চলে মোরগ লড়াই। মধ্যযুগ থেকে চলে আসছে এই খেলা। মোরগ লড়াই, আর তাকে ঘিরে জুয়া বন্ধ করতে ধরপাকড় করছে স্থানীয় পুলিশ।
advertisement
উদ্ধার করা হয়েছে কয়েক হাজার ছোট ছুরির ফলা। যেগুলো বেঁধে দেওয়া হয় মোরগের পায়ে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে বেশ কিছু লড়াকু মোরগও। পুলিশ প্রশাসনের রক্ত চক্ষু এড়াতে মোরগ-লড়াই উদ্যোক্তারা পৌছে যাচ্ছেন ছোটপাহাড় আর জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলে। যেখানে প্রশাসনের বাইকও পৌছাবে না।মধ্যযুগ থেকে চলে আসা এই খেলায় আদিবাসি ট্র্যাডিশন, উত্তেজনা, অর্থ, এন্টারটেইনমেন্ট সব উপাদানই বজায় থাকায় শুধু ব্যান করে আটকানো সম্ভব নয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রায় আদিমকাল থেকে ভারত চিন পার্সিয়া গ্রিসে মোরগ-লড়াই হত। এই সব অঞ্চল থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে ক্রমশ জার্মানি-স্পেন এবং তাদের কলোনিগুলোতে। সেখান থেকে ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ড-ওয়ালশ সহ ইংরেজ উপনিবেশগুলোতে। এবং আমেরিকাতেও।
advertisement
যদিও ২০০৭-এ লুইজিয়ানা আমেরিকার শেষ রাজ্য হিসেবে মোরগ লড়াই ব্যান করে। কিন্তু ২০১৮ সালেও খোদ লস এঞ্জেলস থেকে প্রায় ৭০০০ লড়াকু মোরগ বাজেয়াপ্ত করে সরকার। তারপরই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও সমূলে মোরগ লড়াই বন্ধের নির্দেশিকা জারি করে।উল্টোদিকে পুয়ের্তো-রিকো, ডোমেনিক রিপাবলিক, ফিলিপাইনসে মোরগ লড়াই শুধু আইন সম্মত নয়, রীতিমত স্টেডিয়াম বানিয়ে আন্তর্জাতিক মোরগ লড়াইয়ের প্রতিযোগিতাও হয়। ফিলিপাইনসে, ১৯৬৩ সাল থেকে চলে আসছে ৫দিনের “ওয়ার্ল্ড স্লাশার কাপ”। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাঘা বাঘা মোরগ মালিক লড়তে আসেন এখানে। প্রায় ছশ’ ম্যাচ খেলা হয় খোদ ম্যানিলা শহরের কলোসিয়ামে।
advertisement
দেশি বিদেশি কর্পোরেট সংস্থা রীতিমত স্পনসরশিপ দিয়ে উৎসাহিত করে উদ্যোক্তাদের। সঙ্গে থাকে হাত ভরা প্রাইজ। পকেট ভরা মানি। আর টানা পাঁচদিনের জম্পেশ ফেস্টিভ্যাল। মোরগ-লড়াই ঘিরে বসে আলোচনা সভা, গান বাজনার আসর। প্রতি বছর আমেরিকা, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়া পুয়ের্তো রিকো থেকে যোগ দেন প্রতিযোগীরা।
TRIDIB BHATTACHARYA
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
January 15, 2020 8:26 PM IST