#কলকাতা: সাত মাইলের ঘাট থেকে চিনাই নদী পেরোলেই হুজ্জতের ঘাট। মোটর বোটে করে সেই জলপথ পেরোতেই বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হবে। ঘূর্ণিঝড় আমফানের পরে সেই পথ আরও অনেকটাই বিপদজনক হয়েছে সুন্দরবনের অন্যতম সুন্দরী দ্বীপ মৌসুনির।
নদীর পাড় ধরে ইঁট পাতা ছোট ছোট খানা খন্দ ভরা পথ দিয়েই পৌছতে হবে দ্বীপের নানা প্রান্তে। আর এই দ্বীপ ছেড়ে ভীষণ জরুরি কাজে মুল জনপদে যেতে হলে চিনাইয়ের পাড়ে দাঁড়িয়ে গামছা নাড়াতে হবে। তাহলেই নজরে আসবে অন্য প্রান্তে চিনাইয়ের জলে ভেসে বেড়ানো নৌকোর। তারপর আমাদের সুরাহা হবে। এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে চলছিলেন প্রশান্ত হুজ্জত। চিনাই পেরিয়ে দ্বীপে এসে মারফত, চোখ ঘোরালেই নজরে আসবে চারদিকে গাছ থেকে ঝুলে রয়েছে সোনা। তবে কাছে গেলেই ভ্রম ভাঙবে। গত বুধবারে আমফানের প্রভাবে শুকিয়ে গেছে মাটি থেকে উপড়ে পড়া গাছগুলি। আর সেটি শুকিয়েই এই হাল হয়েছে। নদী আর সমুদ্র এই দুইয়ের সহাবস্থান আছে এই দ্বীপে। ফলে ঝড়ের প্রভাবে তছনছ হয়েছে এই দ্বীপ ৯০ শতাংশ। এখনও গ্রামের রাস্তায় একাধিক জায়গায় গাছ পড়ে আছে। কেটে সরানোর লোক গ্রামের লোকেরাই। এর ফলে রাস্তা বন্ধ। টোটো বা মোটর ভ্যানেও কোথাও পৌছনো সম্ভব নয়। তাই নিজেরাই গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করছি। জানাচ্ছেন মৃণাল কান্তি দাস। যার নিজের ঘরের চালা উড়েছে। গাছ পড়ে যার ঘরের দেওয়াল ভেঙেছে। এখানে অবশ্য এনডিআরএফ বা এসডিআরএফ নেই গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কারের জন্যে।
গ্রামের নানা প্রান্তে এখনও পড়ে আছে দুমড়া যাওয়া টিনের চাল। রাস্তায় মাথা নুইয়ে আছে বিদ্যুতের খুঁটি। চাষের জমিতে ভরে আছে জল। মাঠের রঙ পুরো কালো হয়ে আছে। নিজেদের বাড়ি দেখাচ্ছিলেন প্রসেনজিৎ। বাড়ির আম, নারকেল, কাঁঠাল সহ সব গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়েছে। তাদের বাড়ির অ্যাসবেস্টর ভেঙে গেছে। আপাতত ছাদে মোটা কালো প্লাস্টিকের ত্রিপল দিয়েই দিন গুজরান তাদের। যদিও আমাদের চিন্তা একটাই, এই জমিতে আপাতত চাষ করা যাবেনা। কবে চাষ করা শুরু হবে সেটাও বোঝা দায়। জানাচ্ছে একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া প্রসেনজিৎ দাস।
বাড়ি তো ভেঙেছেই। তার সাথে মাছ মরেছে পুকুরের। মাছ পচে এত পচা গন্ধ বেরোচ্ছে যে আশেপাশের বাড়িতে বসে থাকা বেশ কষ্টসাধ্য। গ্রামের বাসিন্দা তনুশ্রী হুজ্জত জানাচ্ছেন, রাস্তায় বা পুকুরে তো ব্লিচিং ছড়াতে হবে। সেটাই তো পাচ্ছিনা। পুকুরের জলে স্নান করতে হয়। সেটাও করা যাচ্ছে না।
নদীর পাড় ধরে এগোলেই দেখা যাবে দুরে গ্রামের বাড়ি গুলোর চালা উড়ে গিয়েছে। টালির চাল ভেঙে পড়ে আছে। সেখানেই দেখা কিস্কু সোরেনের সাথে। নিজেই টেনে আনছেন ঠেলা। কিস্কুর কথায়, আমাদের সাহায্য করার কেউ নেই। নিজেরটা তো নিজেকেই করতে হবে। তাই খাবার না হয় একবেলা খাব। ঘর আগে সারাব। তবে গ্রামের অনেকেই এখন রাতে বাড়ি থাকতে পারেন না। হয় স্কুলের বাড়িতে না হয় অন্যত্র পাকা বাড়িতে সামাজিক বিধি শিকেয় তুলে সবাইকে থাকতে হচ্ছে। জানাচ্ছেন সবিতা দেবনাথ। তার বাবার বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। নিজেরাই তাই কুঁড়ে ঘর বানাচ্ছেন।
নদীর পাড়ের বাড়ির চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে সমুদ্রের ধারের বাড়িগুলির। আপাতত সেই বাড়ি কবে সারানো যাবে তা নিয়েই চিন্তায় মৌসুনি।
ABIR GHOSHALনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।