আমফানে তছনছ গোটা ঝড়খালি, আতঙ্ককে সঙ্গে করেই জীবনে ফেরার লড়াইয়ে বাসিন্দারা

Last Updated:

"ঝড়ের এমন শক্তি এর আগে কখনো দেখিনি। বাড়ির চাল এমনভাবে উড়ছে যেন মনে হবে প্লাস্টিক উড়ছে। যেভাবে বিদ্যুতের খুঁটি গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে আমাদের মনে হচ্ছে না 2 মাসের আগে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে

#কলকাতা:  ঝড় চলে গেছে। কিন্তু ঝড়খালি বাসন্তী সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আমফানের তাণ্ডব চিহ্ন। আতঙ্ক ভুলে বাঁচার রসদ খোঁজার চেষ্টা করলেও কোনভাবেই বুধবারের ঘন্টা তিনেকের ঝড়ের আতঙ্ক ভুলতে পারছেন না বাসন্তী ঝড়খালির বাসিন্দারা। তবুও তার মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছেন ঝড় কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।
নদীর ধারের বাসিন্দাদের আমফান আসার দু-তিন দিন আগে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছিল। সেই জন্য আয়লার মতো প্রাণহানি হয়নি। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো যায়নি। ঝড়খালি মাতলা নদীর পার বরাবর দেখলেই বোঝা যাচ্ছে বুধবারের আমফান কতটা ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছিল এই ঝড়খালি- বাসন্তী এলাকাজুড়ে। মাতলা নদীর বাঁধ একাধিক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু তাই নয় বুধবারের ঝড় বাঁধ ভেঙে দিয়ে একাধিক গ্রামকে করেছে প্লাবিত। গ্রামের একের পর এক বাড়িতে ঢুকেছে নোনা জল। ভেঙে গিয়েছে একাধিক মাটির বাড়ি ও কাঁচা বাড়ি। এমনকি ঝড়ের আশঙ্কায় শক্ত ভাবে বাধা নৌকাগুলি কেও উল্টে দিয়েছে প্রবল বিধ্বংসী এই ঘূর্ণিঝড়। বছর পঞ্চাশের এক বাসিন্দা মাতলা নদীর পাড়ে দাড়িয়ে বলছিলেন "আয়লা দেখেছি,আরো অনেক ঝড় দেখেছি কিন্তু এইরকম ঝড় আমরা এর আগে দেখিনি। ছোটবেলা থেকেই এক প্রকার ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করতে শিখে গিয়েছি। কিন্তু এর সঙ্গে লড়াই করতেই পারছিনা। কেননা এ আমাদের সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে।"
advertisement
ঝড়খালি বাসন্তী এই এলাকাগুলিতে গিয়ে দেখা গেল ঝড় কবলিত বাসিন্দারা এখন আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলে বা আশ্রয় শিবির গুলিতে। ওখানে খাবার বন্দোবস্ত করা হলেও ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ লেগেই থাকছে সেখানকার বাসিন্দাদের। অনেকেই আবার গত দুই তিন দিন ধরে একবারও ভাত খেতে পারেন নি। জলের অভাব-অভিযোগের কথা অবশ্য বেশিরভাগ বাসিন্দাদের থেকেই শোনা গেল। বিদ্যুৎ তো দূরের কথা। সব মিলিয়ে কোথাও যেন হাহাকার তাই আমরা শুনতে পেলাম ঝড়খালির মাতলা নদীর পাড় বরাবর ঝড় কবলিত বাসিন্দাদের থেকেই।
advertisement
advertisement
ঝড়খালির এক স্কুলের শিক্ষক এর সঙ্গে কথা সাপেক্ষে তিনি বলছিলেন "ঝড়ের এমন শক্তি এর আগে কখনো দেখিনি। বাড়ির চাল এমনভাবে উড়ছে যেন মনে হবে প্লাস্টিক উড়ছে। যেভাবে বিদ্যুতের খুঁটি গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে আমাদের মনে হচ্ছে না 2 মাসের আগে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।"
একদিকে যেমন ঝড়খালির বাসিন্দাদের দুর্ভোগ আছে অন্যদিকে আবার বাসন্তী থেকে ঝড়খালি যাওয়ার রাস্তায় একের পর এক গাছ পড়ে রয়েছে রাস্তায়। একাধিক বিদ্যুতের খুটি যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দেখে মনে হবে যেন কেউ ওই বিদ্যুতের খুঁটি গুলিকে জোর করে টান দিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। রাস্তায় যাওয়ার সময় দেখলাম অনেক বিদ্যুতের খুঁটি আবার বাড়ির উপরে পড়েছে। রাস্তায় যেতে যেতে এইভাবে বিদ্যুতের কুটি পড়া দেখে মনে হল পুরো ব্যবস্থাটাই স্বাভাবিক হতে অন্তত এক মাস তো লাগবেই।
advertisement
এ তো গেল ঝড় কবলিত এলাকার কথা। মাত্র দু'বছর হলো আয়লার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করেছিল ঝড়খালি। ২০০৯ এর আয়লা অনেকের জীবিকা কেড়ে নিয়েছিল। তারপর থেকে ঘুরে দাঁড়াতে অনেকটাই সময় লেগেছে এখানকার বাসিন্দাদের। কিন্তু আমফান আবারো তাদের জীবিকা কেড়ে নিল। সাধারণত ঝড়খালির ঝড় কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের বেশিরভাগই মাছ চাষ,কৃষি কাজ করেই রোজগার করে থাকেন। বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় কৃষিকাজের জমিগুলিতে নোনাজল ঢুকিয়েছে।ফলত আগামী অন্তত এক বছর কৃষিকাজের সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
advertisement
আমফান মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য নৌকাগুলিকে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বাসিন্দারা বলছিলেন যেভাবে নৌকা গুলির ক্ষতি হয়েছে তা ঠিক করতে গেলেও অন্তত ৫০০ টাকা তো লাগবেই। এখন এই পরিস্থিতিতে এই টাকাগুলি বা কোথা থেকে পাব। তাই আগামী দিনগুলো কিভাবে কাটবে তা নিয়ে চোখে-মুখে আতঙ্ক কে সঙ্গে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন এই বাসিন্দারা। আপাতত দুবেলা র খাবারও জুটছে না নদী সংলগ্ন বাসিন্দাদের। তাই কৃষিকাজ মাছ চাষের থেকে এখন সরকারের কাছে এই দুবেলা খাবারেরই দাবি রাখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
advertisement
প্রশাসন অবশ্য জানাচ্ছে আপাতত ঝড় কবলিত এলাকায় ত্রাণের ব্যবস্থা করায় তাদের কাছে প্রাথমিক কাজ। জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোই এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনের কাছে। ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করছে জেলা প্রশাসন। নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে গ্রামের লোকরাই বাঁধ সারাইয়ের কাজ শুরু করলেও এখন প্রশাসন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সেই কাজে গতি এনেছে। কিন্তু আম ফান যা কেড়ে নিল তা কি আদেও ফিরে পাবেন? এই প্রশ্নটাই এখন তাদের চোখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
advertisement
ঝড়খালি থেকে সোমরাজ বন্দোপাধ্যায়
বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
আমফানে তছনছ গোটা ঝড়খালি, আতঙ্ককে সঙ্গে করেই জীবনে ফেরার লড়াইয়ে বাসিন্দারা
Next Article
advertisement
মিজোরামের মানুষের জন্য ঐতিহাসিক দিন, আইজল ভারতের রেল মানচিত্রে যুক্ত হল!
মিজোরামের মানুষের জন্য ঐতিহাসিক দিন, আইজল ভারতের রেল মানচিত্রে যুক্ত হল!
  • প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ মিজোরামের আইজলে ৯,০০০ কোটি টাকারও অধিক মূল্যের উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

VIEW MORE
advertisement
advertisement