আবীর ঘোষাল, কলকাতা: মেট্রোর কাজ শুরু হতেই ফের ফাটল। বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের বেশ কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরা পড়েছে। খসে পড়ছে ছাদের চাঙর। দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। এমনকী, ফাটল আছে মেঝেতেও। এমনটাই অভিযোগ বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের একাধিক বাড়ির বাসিন্দাদের (Durga Pituri Lane at Bowbazar)।
দুর্গা পিতুরি লেন বউবাজারের অন্যতম পুরনো একটি জায়গা। কলকাতার ইতিহাস বলছে, আগে এই জায়গায় ঘোড়াদের জল খাওয়ার ব্যবস্থা থাকত। যখন শহরে ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলত। সেই লেনে বেশ কিছু সংষ্কার হওয়া বাড়ি থাকলেও বহু পুরনো বাড়ি আজও রয়েছে এখানে। সেই বাড়ির বাসিন্দাদের মনে ভয় তৈরি হয়েছে। কারণ মেট্রোর কাজের জন্য নতুন করে ফাটল ধরা দিয়েছে। গত ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসেও এই বাড়িগুলিতে ফাটল ধরা পড়েছিল। তখন অবশ্য এই সব বাসিন্দাদের পাঠানো হয়েছিল হোটেলে। ফাটলের মেরামতি করা হয়েছিল। আবার সেই ফাটল যেমন ফিরে এসেছে। তেমনই নতুন কিছু ফাটল দেখা গেছে। যদিও বাসিন্দাদের দাবি, মেট্রো তাদের জানিয়েছিল এই সব বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূর দিয়ে টানেল বোরিং মেশিন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন ফাটল, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
আরও পড়ুন-অ্যাপার্টমেন্ট নির্বাচন অনলাইনে, রায় কলকাতা হাইকোর্টের
এখানেই থাকেন মিতা বসাক। ২০১২ সালে তিনি হারিয়েছেন তাঁর ছেলে ঋজুকে। সেই কারণেই গোটা বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন ছেলের নানা স্মৃতি। ছেলের ঘরে ডাঁই হয়ে পড়ে আছে বই। আছে পোস্টার, সিডি। ছেলের কম্পিউটার চাঙর ভেঙে নষ্ট হয়েছে। ছাদের ফাটল চওড়া হতেই জলে ভিজেছে বই। ফাটল দেখাতে দেখাতে তিনি বলেন, ‘‘ওনারা ইঞ্জিনিয়ার মানুষ। কংক্রিটের রাজত্বে বসবাস করেন। সন্তান হারানো মায়ের স্মৃতি নষ্টের যন্ত্রণা ওনারা বুঝবেন না। তবে মেট্রো হবে বলে আমি আমার ছেলের সব হারিয়ে ফেলব এটা তো হতে পারে না।’’ কিন্তু ছেলে হারানো মায়ের এই কথা কে শুনবে? প্রশ্ন প্রতিবেশীদের। ফলে ফাটল ধরা বাড়িতে ছেলের স্মৃতি নিয়ে বসে আছেন বসাক দম্পতি। একই অভিযোগ বসাক বাড়ির পাশের দত্ত বাড়ির। এই বাড়ি একসময় পরিচিতি ছিল, ডাক্তার বাড়ি হিসাবে। এই বাড়ির দেওয়াল, মেঝে বা ছাদেও ধরেছে ফাটল। বাড়ির অন্যতম অংশীদার শোভন দত্ত বলছেন, ‘‘মেঝেও অসমান হয়ে পড়েছে। দেওয়ালের চাঙর খসে খসে পড়ছে। এমনকি মেঝেতেও ফাটল ধরা পড়েছে।’’
আরও পড়ুন-আতঙ্কের নাম বউবাজার, আড়াই বছর পর ফের ফিরল ভয়, আর ফেরা যাবে বাড়িতে?
যদিও শোভনবাবুদের বাড়ি বেশ পুরনো। বাড়ি যে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়না তাও স্বীকার করছেন বাড়ির অংশীদার। তবে বেশ জোরের সাথে তিনি বলছেন, এই ফাটল টানেল বোরিং মেশিন চলার পরে ফের শুরু হয়েছে।" এই বাড়ি নিয়ে তাই বেশ উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা। ১১ নম্বর চৈতন সেন লেনের বাড়ি হচ্ছে এই এলাকায় সবচেয়ে ভাল বাড়ি। কারণ এই বাড়ি সেপ্টেম্বর মাসে সংষ্কার করা হয়েছে। সেই বাড়িতে আবার নতুন করে ফাটল আসায় চিন্তিত তারা। বাড়ির মালিক সুকল্যাণ দত্ত জানাচ্ছেন, ‘‘আমার তো সংষ্কার করা বাড়ি, বাড়ি দেখভাল করি আমরা। সেই বাড়িতে ফাটল আসলে তো চিন্তা হবেই।’’ সুকল্যাণবাবুর ছেলে আদিত্য এবার আইসিএসই পরীক্ষা দিচ্ছে। তার ঘরেও ফাটল ধরা পড়েছে। আদিত্য বলছে, ‘‘হেয়ার লাইন ক্র্যাক তা তো বুঝতে পরেছি। কিন্তু ছাদ চুইয়ে জল পড়ছে। পরীক্ষার সময় বলে বেশ চিন্তায় আছি।’’
এরকমই নানা সমস্যা এই নতুন ফাটল ঘিরে ভাবাচ্ছে বউবাজারের মানুষদের। চৈতন সেন লেনের এই ফাটল নজরে আসেনি মেট্রো আধিকারিকদের। তবে গোটা ঘটনায় টিম পাঠিয়েছে কেএমআরসিএল। ফাটল বিপজ্জনক বলে তারা মনে না করলেও, সমস্যার সমাধান দ্রুত করতে চাইছে কেএমআরসিএল। আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে কাজ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bowbazar