#কলকাতা: প্রতিদিন বাসে চেপে কর্ম ক্ষেত্রে যান। লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বাস পেলেন। পেলেন বাসের আসনও। জানেন কি, এই বাস আদৌ স্যানিটাইজ হয় কী না। বাস মালিকরা অবশ্য বলছেন হয় না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন প্রতিদিন বাস চালাতে গিয়ে যে টাকার জ্বালানি বাবদ খরচ হয়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দৈনিক বাস স্যানিটাইজ করা সম্ভব নয়। একটা বাস যদি দিনে ২টো ট্রিপ করে তাহলে চার বার বাস স্যানিটাইজ করতে হবে। তার জন্যে খরচ হবে নুন্যতম ৫০০ টাকা। সেই টাকা খরচ করার মতো অবস্থা তাদের নেই বলেই দাবি। ফলে বিনা স্যানিটাইজে দিব্যি চলছে বাস। দিব্যি চড়ছেন যাত্রীরা। বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই।
এক দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ১০০০। রাস্তায় কম বেরোচ্ছেন মানুষ। অনেকেরই মনে প্রশ্ন গণ পরিবহণ ব্যবস্থা থেকে রোগ ছড়াচ্ছে না তো ? দীর্ঘ দিন ধরে বাসের ব্যবসা করেন শৈবাল ভট্টাচার্য। গত ১০ দিন ধরে বাস বার করছেন রাস্তায়। তিনি জানাচ্ছেন, "আমার বাস দিনে ৩ ট্রিপ সাধারণত করে। মানে ধরে নিন ৬ বার বাস চলে। প্রতি ট্রিপে যদি বাস স্যানিটাইজ করতে হয়। তাহলে দিনে গড়ে আমার খরচ হবে ৬০০ টাকা। বাস চালিয়ে যা ক্ষতি হচ্ছে তার ওপরে আবার এই টাকা খরচ করতে পারব না।" বাস মালিকদের অধিকাংশ জনই স্বীকার করে নিচ্ছেন তারা বাস স্যানিটাইজ করছেন না। কিছুদিন আগেই রাজ্য সরকারের তরফে বাস মালিকদের সংগঠনের কাছে স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস, ফেস শিল্ড দেওয়া হয়। যদিও তা ছিল শুধু মাত্র বাস কর্মীদের। অধিকাংশ বাসে অবশ্য দেখা যাচ্ছে বহু যাত্রী রয়েছেন যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন না। ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
নিত্য যাত্রীদের অবশ্য বক্তব্য উপায় নেই তাই এভাবেই তাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। নিত্যযাত্রী সদানন্দ পাল জানাচ্ছেন, ব্যবসার কাজে রোজ কলকাতা থেকে বাগনান যেতে হয়। প্রচুর যাত্রী ওঠানামা করেন।কেউ মাস্ক পড়েন। কেউ বা আবার বাসে উঠে খুলে ফেলেন। এর পরে যদি বাস স্যানিটাইজ না হয় তাহলে তো আমাদের আর কিছুই করার নেই।" একই অভিজ্ঞতা কৌশিক রায়ের। সেলসে কাজ করেন। বাগুইয়াটি থেকে বেহালা, দিনে অন্তত ৫ বার বাসে চাপতে হয়। তার কথায়, "আমি তো ফেস শিল্ড ব্যবহার করি। প্রতিদিন এত লোক ওঠানামা করে যে সেখানে কোনও চেকিং থাকে না। এর পরেও যদি বাস জীবাণুমুক্ত না করা হয় তাহলে তো আরও অবস্থা খারাপ।" গ্লাভস, মাস্ক, ফেস শিল্ড পড়ে যাতায়াত করেন সুমন চন্দ। তাঁর কথায়, "আমি না হয় প্রোটেকশন নিলাম। কিন্ত আমার আশেপাশে অনেকেই আছেন যারা নুন্যতম নিয়ম মেনে চলছেন না। ফলে একটা আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।"
ধর্মতলা থেকে হাওড়া, বারাসত থেকে বাগবাজার সব জায়গাতেই একই ছবি। কোথাও বেসরকারি বাস স্যানিটাইজ হচ্ছে না। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দোপাধ্যায়ের দাবি, "তেল কেনার পয়সা নেই, স্যানিটাইজ কিনব কোথা থেকে? পুরসভা দিয়ে আমাদের গাড়িগুলো স্যানিটাইজ করে দিক। তাহলেই তো সমস্যা মিটে যাবে।" তবে বেশ কিছু গাড়ি মালিক অবশ্য জানাচ্ছেন, তারা নিজেদের উদ্যোগেই গাড়ি স্যানিটাইজ করাচ্ছেন। তবে সেটা দিনে একবারই। এর বেশি করা অর্থনৈতিক ভাবে তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে বাস স্যানিটাইজ না করেই রাস্তায় নামল বেসরকারি বাস।
ABIR GHOSHAL