কলকাতা: প্রশাসনিক জটিলতায় রবিবারও দিল্লি নিয়ে যাওয়া যায়নি তৃণমূলনেতা অনুব্রত মণ্ডলকে। কে তাঁকে আসানসোলের সংশোধনাগার থেকে দিল্লি নিয়ে যাবে? রাজ্য পুলিশ, নাকি ইডি, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে রবিবার গোটা দিন ধরে। অবশেষে, কোনও একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে সোমবার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভেবেছেন আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষ। আদালতে আবেদন জানাতে পারে ইডি-ও।
এদিন অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লি যাত্রা ইস্যুতে নিয়ে কার্যত এক সুরে কথা বলতে শোনা যায় বঙ্গ বিজেপির অন্যতম দুই প্রধান মুখ শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারকে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, "বিষয়টা অনেকদিন ধরেই করছে। হয়ত আর একটাই জায়গায় যাওয়া বাকি আছে, সেটা হল সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে যাওয়ার জন্যই হয়ত অপেক্ষা করছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তো ১৩ মার্চের আগে খুলবে না। এখন ছুটি চলছে। দিল্লি যেতেই হবে অনুব্রতকে।"
আরও পড়ুন: জ্বর, সর্দিকাশিতে হুহু করে বাড়ছে শিশুমৃত্যু! বাড়ানো হল বি সি রায়ের PICU বেডের সংখ্যা
এদিকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, "সরকার ও শাসকদল ওঁকে ক্রমাগত আড়াল করে চলেছে। তদন্তে সব ধরনের অসহযোগিতা করছে। যাঁকে বীর, বাঘ বলা হচ্ছিল তাঁকে এখন একা ছেড়ে দিচ্ছে। কোনও সুরক্ষা দিচ্ছে না। এই চালাকি বেশিদিন চলবে না। তিহার জেলে অনুব্রত মণ্ডলকে যেতেই হবে।"
গরু-পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি। মাঝে, আসানসোলের জেলে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাবাদ করেন ইডি-র আধিকারিকেরা। পরে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করতে চেয়ে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে আর্জি জানায় ইডি। সেই শুরু টানাপোড়েন। তারপরে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। নানা ঘটনা, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে অবশেষে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আদালতের পোক্ত নির্দেশ এসেছে ইডি-র হাতে। কিন্তু তার পরেও যেন কাটছে না জটিলতা।
আরও পড়ুন: কেষ্টকে দিল্লি নিয়ে যাবে কে! দিনভর পুলিশ-ইডি টানাপড়েন, সোমবার আদালতে ফয়সলা
দিল্লি যাওয়া আটকাতে গত শনিবার কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন অনুব্রত। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত। কেষ্টকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইডি-কে সবুজ সঙ্কেত দেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। কিন্তু, এর পাশাপাশি, জানানো হয়, অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার আগে কলকাতার কেন্দ্রীয় কোনও হাসপাতালে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হবে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ইডি-র হাতে তুলে দিতে হবে কেষ্টকে।
আদালতের রায়ের পরে শনিবার সন্ধে নাগাদ এ বিষয়ে আসানসোল জেলে চিঠি পাঠায় ইডি। জানতে চাওয়া হয়, কখন কলকাতার উদ্দেশে অনুব্রতকে রওনা করাবেন জেল কর্তৃপক্ষ। সেই মতো জেল কর্তৃপক্ষও দুর্গাপুর-আসানসোল পুলিশ কমিশনারেটের কাছে রিক্যুইজিশন পাঠায়। কিন্তু, তার উত্তরে জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অনুব্রত মণ্ডলকে কলকাতার কেন্দ্রীয় হাসপাতালে চেক আপ করিয়ে দিল্লি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের নয়। সূত্রের খবর, হাইকোর্টের নির্দেশে কোথাও উল্লেখ করা নেই যে, রাজ্য পুলিশকেই অনুব্রতকে দিল্লি পৌঁছে দিতে হবে।
পুলিশের বক্তব্য ইডি-র আধিকারিকদের জানিয়ে দেন জেল কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে জানানো হয়, জেলের যেহেতু নিজস্ব কোনও বাহিনী নেই, তাই ইডি যেন নিজেই অনুব্রতকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। এদিকে জেল কর্তৃপক্ষের সেই চিঠির উত্তরে ইডি পাল্টা জানায়, অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁদের নয়। যেভাবে সায়গল হোসেনকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেভাবেই রাজ্য পুলিশ অনুব্রতকে দিল্লি পৌঁছে দেবে।
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার যে প্রস্তাব জেল কর্তৃপক্ষ মারফত দুর্গাপুর-আসানসোল পুলিশ কমিশনারের তরফে ইডি-কে দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী। ফলে এখন অনুব্রতর দিল্লি-যাত্রা নিয়ে নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বেকায়দায় পড়েছে আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যে গোটা বিষয়টি জানিয়ে আইজি কারা-কে চিঠি দিয়েছেন আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষ। সোমবার আসানসোলের বিশেষ CBI আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। এদিকে, রাজ্য পুলিশের দায়িত্বে অনুব্রতকে দিল্লি পাঠানোর ব্যবস্থার আবেদন জানিয়ে ইডি-ও সোমবার আসানসোল আদালতে যাবে বলে সূত্রের খবর।
ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ী
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।