বেজিং: জাদু দুনিয়ায় এমনটা হয় বলে কেতাবে লেখা থাকে। হাতের নাগালেই সেখানে কল্পনায় মেলে এমন কোট, যা গায়ে চাপালেই এই আছি, এই নেই ম্যাজিক শুরু হয়ে যায়। দেখতে দেখতে চোখের নিমেষে হাওয়া হয়ে যায় আস্ত একটা মানুষ। আবার এরই বিপরীতে এইচ জি ওয়েলসের কল্পবিজ্ঞানের দ্য ইনভিজিবল ম্যান-এর কথাও উঠে আসে- সেখানে অবশ্য মানুষটাই যা অদৃশ্য, কোট দিব্যি চোখে দেখা যায়।
তবে কখন যে কল্পনা আর বিজ্ঞান বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসে বাস্তবে ধরা দেয়, তা বলা মুশকিল। যেমনটা এবার ঘটেছে চিনে, একদল ছাত্র বানিয়ে ফেলেছে এমন এক কোট, যা গায়ে দিলে না কি অদৃশ্য হওয়া যায়। তা, এই অদৃশ্য হওয়া ফ্যান্টাসি নভেলের মতো, না কি, ওয়েলসের লেখার মতো? পুরোটাই অদৃশ্য হয় না নিদেনপক্ষে কোটটুকু পড়ে থাকে?
আরও পড়ুন-ক্ষমতায় ডিনা বোলুয়ার্তে, প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট পেল পেরু
বার বার ফ্যান্টাসি এবং ওয়েলসের প্রসঙ্গ টেনে আনার কারণ এটাই- এই দুইয়ের ওপরে ভর দিয়েই দাঁড়িয়ে আছে ইনভিসডিফেন্স কোট। এই গালভরা নামটাই তারা বেছ নিয়েছে তাদের নয়া আবিষ্কারের পরিপ্রেক্ষিতে। আর এখান থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রসঙ্গ মিলিয়ে নেওয়ার খেলা। ইনভিজ যে ইনভিজিবলের সংক্ষিপ্ত রূপ, তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু ডিফেন্স কেন? আত্মরক্ষার ব্যাপারটা কেন জুড়ে আছে এই নামের সঙ্গে?
সে বিষয়ের খেই ধরিয়েছেন উহান ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ কমপিউটার সায়েন্সের এক অধ্যাপক ওয়াং জেং। তিনি বলছেন যে হালের প্রযুক্তির যুগে আমাদের সর্বত্রই নজরদারি চলে ক্যামেরার। ভারতের মতো দেশে ব্যাপারটা অফিসকাছারি পর্যন্ত ঠিক থাকলেও ওদেশে রাস্তাতেও চলে ক্যামেরার মনিটরিং। তাই প্রয়োজনে আত্মস্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে এবং ক্যামেরার চোখে ধুলো দিতেই ইনভিজডিফেন্স কোটের আবিষ্কার। যা অনায়াসে ক্যামেরার মনিটরিংকে দিনে-রাতে বোকা বানাবে।
কী রকম?
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদন এই প্রসঙ্গে কোট কীভাবে তৈরি, কীভাবেই বা তা কাজ করবে, সেই জটিল বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত ব্যাপারটা সাধারণের বোঝার সুবিধার স্বার্থে সরল করে পেশ করেছে, আমরাও সেই পথেই হাঁটব। বলা হচ্ছে যে এই ইনভিজডিফেন্স কোটের পৃষ্ঠতলে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে, যা ক্যামেরার অ্যালগরিদমকে ধোঁকা দিতে পারে। ব্যাপারটার মধ্যে খুব কঠিন কিছু রহস্য নেই। একটা ক্যামেরা নেহাতই যন্ত্র মাত্র- তার চোখও নেই, মস্তিষ্কও নেই। ফলে সে যে কোনও মানুষকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়, সেটা নির্মাতাদের সেট করে রাখা অ্যালগরিদমের উপরে ভিত্তি করেই। অর্থাৎ ক্যামেরায় আমাদের ছবি ওঠে, তার পর তা নিজের অ্যালগরিদম মেনে তা মানুষ না অন্য পশু, সেটা চিহ্নিত করে দেয়।
আরও পড়ুন- কনভয়ের গাড়ির ধাক্কায় আহত বৃদ্ধা, হাসপাতালে নিয়ে গেলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী
এই জায়গাতেই ক্যামেরার মনিটরিং পাওয়ারকে বিভ্রান্ত করবে চিনা ছাত্রদের তৈরি ইনভিজডিফেন্স কোট। এই বিভ্রান্ত করার কাজ আবার চলবে দিন এবং রাতের তফাত বুঝে আলাদা আলাদা নিয়মে। যেমন বলা হচ্ছে যে দিনের বেলায় এই ইনভিজডিফেন্স কোট সারভেলেন্স ক্যামেরার অ্যালগরিদমকে বিভ্রান্ত করে রাখবে, ফলে ক্যামেরা একটা অবয়ব বুঝতে পারলেও সেটা ঠিক কী বা কার, তা সনাক্ত করে উঠতে পারবে না। আর রাতের বেলায় এই বিভ্রান্তির খেলায় কাজ করবে টেম্পারেচার প্যাটার্ন। আসলে দিনের আলো যখন থাকে না, তখন ইনফ্রারেড ক্যামেরা মানুষকে মানুষ বলে সনাক্ত করে বডি টেম্পারেচারের সূত্রে। এখানে এমন এক টেম্পারেচার বিকিরিত হবে, যার ফলে ইনফ্রারেড ক্ষমতার বুঝে ওঠা কঠিন হবে ফ্রেমে ধরা অবয়বের পরিচিতি।
তাহলে যা দেখা যাচ্ছে, এই ক্যামেরা পরিচিতি অদৃশ্য করার কাজটাও করছে, আবার কোটটাও দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখানে অদৃশ্য হবে না, থাকবে সকলের চোখের সামনেই আরও বেশি সন্দেহজনক হয়ে, বলেছেন আবিষ্কারটির সঙ্গে যুক্ত এক চিনা ছাত্র ওয়েই হুই। এবার কি ডিফেন্স শব্দটুকু কেন কোটের নামে জুড়ল, তা বোঝা যাচ্ছে?
না বোঝা গেলেও অসুবিধে নেই। আবার আমরা ফিরে যাব অধ্যাপক ওয়াং জেংয়ের কাছে। তিনি খোলাখুলিই বলছেন যে এই ইনভিজডিফেন্স কোটের ব্যবহার যুদ্ধে অনেক সুবিধা দেবে। অ্যান্টিড্রোন কমব্যাট বা হিউম্যান-মেশিন কনফ্রনটেশনের ক্ষেত্রে শত্রুপক্ষকে পর্যুদস্ত করতে ভাল মতো কাজে আসবে ইনভিজডিফেন্স কোট।
সন্দেহ কী, এমন এক অভিনব আবিষ্কারের জন্য হুয়াওয়ে দ্বারা প্রযোজিত এক উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার দখল করে নেবে এই ইনভিজডিফেন্স কোট। জানা গিয়েছে যে, আপাতত এমন একখানা কোটের দাম রাখা হয়েছে ৫০০ ইউয়ান, মানে ভারতীয় মুদ্রার আজকের হিসেবে ৫ হাজার ৯০৪ টাকা আর ১৫ পয়সা!
দাম বেশ কমই, নয় কি? এই বিয়ের মরশুমে এর চেয়ে ঢের বেশি দামের স্যুট-কোট যেখানে গায়ে চাপাবেন অনেকেই!
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: China, Viral News