Maldives India: ঋণ সংকটে মলদ্বীপ: ভারত-চিন, দুই দেশকে কতটা সামলাতে পারবেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর?
- Published by:Suman Biswas
- news18 bangla
Last Updated:
Maldives India: বর্তমানে মলদ্বীপের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে। প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর নেতৃত্ব এই ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরি হবে তাই এখন দেখার।
অরুণ আনন্দ
মলদ্বীপ, ভ্রমণার্থীদের কাছে পর্যটনের এক তীর্থস্থান। সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন রিসর্ট সঙ্গে মনোরম পরিবেশ– এর টানে লক্ষ লক্ষ পর্যটক প্রতিবছর মলদ্বীপে ছুটে যান। বর্তমানে অবশ্য মালদ্বীপ এক প্রবল ঋণ সংকটের মুখোমুখি। ভারত ও চিন– প্রধান দুই ঋণদাতার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে এই দেশকে বর্তমানে চলতে হচ্ছে। বর্তমানে মলদ্বীপের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে। প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর নেতৃত্ব এই ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরি হবে তাই এখন দেখার।
advertisement
২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত মলদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ $437 মিলিয়ন, যা মাত্র এক মাসের বেশি আমদানি খরচের জন্য যথেষ্ট। ২০২৫ সালে দেশটির $600-$700 মিলিয়ন ঋণ পরিশোধ এবং 2026 সালে $1 বিলিয়ন পরিশোধের পরিকল্পনা রয়েছে। মলদ্বীপ চিনের থেকে $1.3 বিলিয়ন এবং ভারতের প্রতি $130 মিলিয়ন ইতিমধ্যেই ঋণ নিয়েছে।
advertisement
সব ঠিকঠাক রাখতে ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। লক্ষ্য একটাই জরুরি আর্থিক সহায়তা পাওয়া। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত $400 মিলিয়ন মুদ্রা বিনিময় চুক্তি অনুমোদন করেছে, যা ঋণ জর্জরিত দেশটির উপকারে লাগবে। মলদ্বীপের ঋণ সমস্যাগুলি সুকুক বন্ডের সাথে সম্পর্কিত। সুকুক এক প্রকারের ইসলামী বন্ড। সাধারণ বন্ডের তুলনায় সুকুক সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা একটি প্রকল্পের মালিকানা পান এবং তাদের লাভ সম্পদের উৎপন্ন রাজস্ব থেকে আসে।
advertisement
যদি মলদ্বীপ সুকুক ঋণ না পরিশোধ করতে পারে, তাহলে তা প্রথমবারের জন্য না পরিশোধ করতে পারা হবে। ভারতকে পাশে না পেলে, মলদ্বীপের সুকুক পরিশোধ না করার পরিণতি খারাপ দিকে যেতে পারে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মূলধন বাজারে আসতে অসুবিধায় পড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস সম্পূর্ণ বিফলে যাবে। যদিও মলদ্বীপ ভারত থেকে সাহায্য পাবে বলে আশ্বাস পাওয়ার পর সুকুক ঋণ পরিশোধের অসুবিধাগুলি এড়াতে পেরেছে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর আর্থিক সমস্যা এখনও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, কারণ সামন আরও ঋণ পরিশোধ রয়েছে।
advertisement
ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং কাঠামোগত অসুবিধা:
মলদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট ভারত ও চিনের মধ্যে জিওপলিটিক্যাল সংঘাত বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বহু বছর ধরে, মলদ্বীপ দুই দেশের থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছে, তবে দুই দেশ সহায়তা করেছে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করার জন্য।
advertisement
চিনের ঋণগুলো প্রধানত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে সংযুক্ত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর জন্য ব্যয় করা হয়েছে, যা বেজিংকে ভারতীয় মহাসাগরে তার কৌশলগত উপস্থিতি বাড়াতে সাহায্য করেছে। অন্যদিকে, ভারত মলদ্বীপকে তার আঞ্চলিক নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মনে করে সাহায্য করেছে।
মুইজ্জুর ২০২৩ সালে ক্ষমতায় এসে ‘ভারত আউট’ বিরোধিতার মাধ্যমে মলদ্বীপে ভারতীয় প্রভাব কমানোয় মন দিয়েছিলেন। তবে ঋণ সংকট থেকে দেশটি বেরোতে না পারায়, তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক করে তুলেছেন। মুইজ্জুর বুঝতে পারেন, মলদ্বীপের সুরক্ষা ভারতের সহায়তা পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে।
advertisement
মালদ্বীপের প্রধান অসুবিধা প্রবল ঋণের বোঝা এবং অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বলতা। দেশটি পর্যটনের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, যাতে বিভিন্ন সময় অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। যেমন কোভিড-১৯ মহামারির পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ, মলদ্বীপের বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে হয় এবং আন্তর্জাতিক পণ্যের দাম বাড়ার ফলে এর অর্থনৈতিক সমস্যা দিনকে দিন বাড়ছে।
মুইজ্জুর নেতৃত্বে মলদ্বীপের ভবিষ্যৎ বর্তমানে দাঁড়িয়ে। কীভাবে তিনি এই জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে আর্থিক সহায়তা সংগ্রহ এবং সেইসাথে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেন তাই এখন দেখার।
advertisement
দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সমাধান দরকার-
দেশটির এখন এক ভিন্ন কৌশল প্রয়োজন যা পর্যটনের বাইরে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করবে এবং আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমাবে, তবে এসব পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ এবং দেশের রাজনীতির উপর নির্ভর করে আছে।
সরকার বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে, যেমন ট্যাক্স সংস্কার, বাজেট কমানো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন। তবে এসব সংস্কার কাৰ্যকর করা কঠিন। কারণ ট্যাক্স বৃদ্ধি এবং জনসেবা কাটছাঁটের মতো পদক্ষেপ দেশে প্রতিবাদকে উস্কে দিতে পারে।
আইএমএফ থেকে বেইলআউট পাওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গেও আলোচনা চলছে। যদিও সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে সংকট বাড়লে আইএমএফের হস্তক্ষেপ নিতে হতে পারে। তবে আইএমএফ বেইলআউট কঠিন শর্ত নিয়ে আসবে, যা সামাজিক অস্থিরতা তৈরী করে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলতে পারে।
মলদ্বীপের ঋণ সংকট অন্যান্য ছোট দেশগুলির জন্য একটি সতর্কবার্তা, যা বিদেশী ঋণ এবং একক শিল্পের উপর নির্ভরশীল। দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার কার্যকর করা হলে মালদ্বীপের অর্থনীতি পুনর্গঠিত হতে পারে।
মুইজ্জুর এই কঠিন মুহূর্তে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে তিনি দেশের আর্থিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারেন এবং জিওপলিটিক্যাল প্রতিযোগিতার মধ্যে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সক্ষম হন।
ভারত ও চিনের প্রতিযোগিতার মধ্যে মালদ্বীপের পরবর্তী পদক্ষেপগুলি অন্য ছোট, ঋণগ্রস্ত দেশগুলির জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে।
বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট অরুণ আনন্দ, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার লেখা প্রবন্ধ ও বই পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। আপনি তাকে তার X (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল @ArunAnandLive -এ অনুসরণ করতে পারেন।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
October 17, 2024 5:19 PM IST