India Canada Relation: ভারত-কানাডা তুঙ্গে সংঘাত, জাস্টিন ট্রুডোর কাছে কি তবে ভারতের থেকে খলিস্তানিরা কাছের?
- Published by:Suman Biswas
- news18 bangla
Last Updated:
India Canada Relation: অস্বীকারের কোনও জায়গায় নেই বর্তমানে কানাডা খালিস্তানি জঙ্গিদের এক ভরসাযোগ্য আশ্রয়স্থল।
অরুণ আনন্দ
ভারত ও কানাডার বিবাদ চরমে! সম্প্রতি ভারতীয় হাইকমিশনারসহ ভারতের ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে কানাডা সরকার। ট্রুডো সরকারের অভিযোগ, ভারতীয় কূটনীতিকরা কানাডার মাটিতে নিধনযজ্ঞ ও চাঁদাবাজিরমতন মতন অপরাধ চক্র পরিচালনা করছে। কিন্তু ভারতের এই নিয়ে মতামত কী? ভারত কীই চোখেই বা দেখছে এই কূটনীতিক অভিসন্ধিকে?
অস্বীকারের কোনও জায়গায় নেই বর্তমানে কানাডা খালিস্তানি জঙ্গিদের এক ভরসাযোগ্য আশ্রয়স্থল। স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কানাডায় ভারতের হাই কমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা সত্যি কি কোনও আন্তর্জাতিক অপরাধমূলক সংগঠনের সাথে জড়িত? ভারতের শত্রুদের আশ্রয় দিচ্ছে কানাডা– শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলিইনয় নয় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও, নিজেদের মতবাদ আদর্শ নির্বিশেষে কানাডাকে বর্তমানে নেতিবাচক নজরে দেখতে শুরু করেছে।
advertisement
advertisement
খালিস্তানি জঙ্গিদের উপর কানাডার সহানুভূতি বরাবর। ভারতের এই নিয়েই কানাডার সঙ্গে মূল দ্বন্দ্ব। খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সবসময় পাঞ্জবের থেকে পৃথক হয়ে এক নতুন রাষ্ট্রের জন্য সরব থেকেছে। ১৯৭০-৮০-র দশকে খলিস্তান আন্দোলনে হয়ে যাওয়া সন্ত্রাসী কার্যকলাপে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
advertisement
ভারতে খলিস্তান আন্দোলন বলা চলে মৃতপ্রায়, কিন্তু এর মর্মান্তিক স্মৃতি আজও পাঞ্জাবের মানুষদের তাড়া করে বেড়ায়। খলিস্তান আন্দোলন শুধুমাত্র নিরীহ মানুষদেরই প্রাণ কাড়েনি, এই বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ডিরা গান্ধীর হত্যা সহ অসংখ্য হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে। ভারতীয় শিখদের অধিকাংশ খালিস্তান আন্দোলনকে মেনে নেয়নি। প্রবাসী শিখদের দ্বারা পরিচালিত আন্দোলন এই খলিস্তানি মুভমেন্ট, মূলত কানাডায় বসবাসরত শিখদের থেকেই ছড়িয়ে পড়ে।
advertisement
কানাডা খলিস্তানি শিখদের ভারত বিরোধিতায় বরাবর জায়গা করে দিয়েছে, এই অভিযোগ ভারতের বরাবর। কানাডা বর্তমানে খলিস্তানি জঙ্গিদের জন্য অন্যতম এক সেরা ঘাঁটি। ১৯৮৫ সালে কানাডার থেকে আকাশ নেওয়া এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটে খলিস্তানিদের বোমা বিস্ফোরণে ৩২৯ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়, যা কানাডার ইতিহাসে খলিস্তানি জঙ্গিদের ঘটানো সবচেয়ে নক্কারজনক ঘটনা বলে গোটা বিশ্ব আজ দুঃখের সাথে স্মরণ করে।
advertisement
খলিস্তানি বিদ্রোহের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার পর পরই ভারত ও কানাডার দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া ভেঙে পড়তে শুরু করে। দুই দেশের মধ্যে কূটনীতিক উত্তেজনাও চরমে পোঁছায়। ১৯৯৭ সালে হরদীপ সিং নিজ্জার জাল পাসপোর্ট নিয়ে কানাডায় প্রবেশ করেন। কানাডায় নাগরিকত্ব পাওয়ার পরেই তাঁর প্রকৃত রূপ সামনে আসে। তিনি নিজেকে একজন ধর্মীয় নেতা হিসেবে তুলে ধরেন এবং পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তোলেন। ২০২৩ সালে জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেন, খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যায় ভারতীয় এজেন্টদের যুক্ত থাকার কথা। কিন্তু তাঁর অভিযোগ নিয়ে কোনও সঠিক প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। নিজ্জার সেই বছর জুনে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারেতে গুলিতে নিহত হন। কানাডায় ভারতের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলনের ডাক বারবার তিনি দিয়ে এসেছেন। ২০২০ সালে ভারতের তরফে নিজ্জারকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
advertisement
হরদীপ সিং নিজ্জারের আইনজীবী, গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নু নিজেও একজন খলিস্তানি জঙ্গী। ভারতের এয়ার ইন্ডিয়াকে নিয়ে তাঁর উস্কানিমূলক মন্তব্য গোটা বিশ্বে ঝড় তুলেছিল। শিখদের এয়ার ইন্ডিয়া বিমান না চড়ার জন্যও তিনি সাবধান করেন। পান্নুর সবচেয়ে নক্কারজনক ঘোষণা ছিল, দিল্লির এয়ারপোর্টের নাম বদলে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারীর নামে তা রাখার প্রতিশ্রুতি। যা আসমুদ্রহিমাচল কেউই মেনে নিতে পারেনি। কানাডা ছাড়ার জন্য সেখানকার হিন্দুদেরও উপর তিনি রক্তচক্ষু হন। ভারতের অখণ্ডতা নষ্ট করার জন্যও তিনি বহুবার ডাক দিয়েছেন।
advertisement
এদিকে কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন কানাডায় বসবাসরত খলিস্তানি জঙ্গিরা কানাডা সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের গোপন এজেন্ট। এক টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গ তোলেন সঞ্জয়। ইতিমধ্যেই ভারত কানাডাকে চাপে ফেলতে, কানাডারই কায়দায় তাদেরও ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।
এ পরিস্থিতিতে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক দিনকে দিন তিক্ততার পারদ ছাড়াচ্ছে। ভারত মনে করে, কানাডা খলিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। প্রশ্ন এখন এটাই, কেন কানাডা সরকার সন্ত্রাসবাদীদের জায়গা করে দিচ্ছে? কেনই বা রক্তপাত সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। খলিস্তানি আন্দোলনকে জায়গা করে দিয়ে তবে কি কোনও ফায়দা পেতে চাইছে কানাডা? স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে অনেক।
বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট অরুণ আনন্দ, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার লেখা প্রবন্ধ ও বই পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। আপনি তাকে তার X (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল @ArunAnandLive -এ অনুসরণ করতে পারেন।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
October 21, 2024 4:32 PM IST