#ক্যালিফোর্নিয়া: কলকাতা শহরের অলিতেগলিতে এখন বোধহয় জোর কদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। পাড়ার ছেলের দল, ভাগে ভাগে প্রত্যেকটি বাড়িতে গিয়ে চাঁদার রসিদ দিয়ে আসছে। কোনও বাড়িতে কর্তা হয়তো চাঁদার টাকা দিয়ে দিচ্ছে, আবার কোন বাড়ির গৃহকর্তা বেশ গম্ভীর মুখে বলছেন, এখন যাও, বিশ্বকর্মা পুজোর পরে এসো। কুমোরটুলিতে এখন শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। উমা যে তার বাপের বাড়ি আসছে।
কিন্তু উমার বাপের বাড়ি কোথায়? কলকাতায়? বাংলাদেশে? ভারতবর্ষে? আসলে বাঙালির কন্যা যেখানেই থাকে, সেখানেই বোধহয় উমার বাপের বাড়ি হয়। আর তাই দেশের থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে, ক্যালিফোর্নিয়ার স্যানফ্রান্সিস্কো বে এরিয়ার প্রবাসী-র দুর্গাপুজো এবার ৪৮ বছরে পদার্পণ করল। যদিও গত দু-বছর ধরে, সমগ্র বিশ্বের চিত্রটাই বদলে গিয়েছে এক ভয়ংকর মহামারীর দাপটে! আমরা তবু আলোর উড়ালে বিশ্বাসী, আমাদের মা কোভিডনাশিনী।
আমি অদ্যন্ত মফসসলে বেড়ে ওঠা মেয়ে। জীবনের গতিপথ আমাকে এনেছে প্রথম বিশ্বের একটি মহাদেশে, যার নাম আমেরিকা। এখানে কলকাতার মতো বড় রাস্তা জুড়ে পুজোর হোর্ডিং নেই, ভোরবেলা মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে এক গোছা শিউলি ফুল কুড়িয়ে আসা নেই। একমাস আগে থেকে পাড়ায় পাড়ায় বাঁশ বাঁধা নেই, খবরের কাগজ জুড়ে পুজোর বিজ্ঞাপন নেই, কোথায় কোন পুজো কী থিম করছে তাই নিয়ে আলোচনাও নেই। কিন্তু যা আছে, তা হলো শরতের ঝকঝকে নীল আকাশে ভেসে আসা পেঁজা তুলোর মতো মেঘের আনাগোনা, যা দেখে মন বলে ওঠে উমার বাপের বাড়ি আসার সময় হয়ে এল। মহামারী কাটিয়ে আবার সবাই যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছি আমরা।
বে এরিয়ার প্রায় অধিকাংশ ভারতীয়ই ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছে। বে এরিয়ায় প্রবাসী ক্যালিফোর্নিয়ার প্রথম ক্লাব, যারা ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিল ১৯৭৪ সালে।
আমরা যারা খুব বেশিদিন হয়নি মার্কিন মুলুকে এসেছি, প্রবাসী র পুজো দেখে এক নিমেষে কলকাতার পুজোয় না যেতে পারার দুঃখ যেন ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে আমা। পুজোর এক মাস আগে থেকে, আমাদের বাঙালি বন্ধুদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়, এবারের পুজোয় কে কী শাড়ি পরছি আমরা। কলকাতার মতোই এখানকার পুজোর প্রস্তুতিও চলতে থাকে প্রায় তিন চার মাস আগে থেকে। প্রতি সপ্তাহে পুজোর মিটিং, অনুষ্ঠান সূচি, কেমন ধরনের অনুষ্ঠান হবে সেই নিয়ে আলোচনা সবই হয়। এবারেও তার পরিবর্বতন হয়নি। মিটিং করছি আমরা, গভীর ষড়যন্ত্র চলছে প্রতিদিন।
বে এরিয়া প্রবাসী কিন্তু স্রেফ একটা পুজো কমিটি নয়। প্রবাসী ক্যালিফোর্নিয়ার একটি নন প্রফিট অর্গানাইজেশন যারা সারা বছর ধরে, আমেরিকা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়, কঠিন পরিস্থিতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বারবার। আমফান ঝড় থেকে, যশ বা করোনা মহামারীর, কঠিন পরিস্থিতিতে সব ক্ষেত্রেই বে এরিয়া প্রবাসী ঝাঁপিয়ে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে প্রজেক্ট ব্রিদ নামের একটি তহবিল তৈরি করে তাঁরা অর্থ সংগ্রহ করেন। প্রবাসীর বর্তমান চেয়ারম্যান শ্রী সুদীপ্ত মুখার্জী নিজের উদ্যোগে এই প্রজেক্ট ব্রিদকে সফল করেছিলেন।
তাঁর এই প্রচেষ্টায়, সানফ্রান্সিস্কো এবং আমেরিকার অনেক রাজ্যের বিভিন্ন বাঙালি ক্লাব এগিয়ে এসেছিলেন। তাদের প্রত্যেকের সম্মিলিত অর্থ দিয়ে চেয়ারম্যান সুদীপ্ত মুখার্জীর নেতৃত্বে ১২০ টি অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর পাঠানো হয়, কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকাতে। কলকাতার প্রবাসীর সেচ্ছাসেবকরা যশ বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন, এবং সেখানকার অসহায় মানুষ এর পাশে, খাদ্য, বস্ত্র, ত্রিপল, ওষুধ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেন।
কলকাতা শহর ছেড়ে এই দূর দেশে থেকে, দেশের মানুষের কঠিন সময়ে নিঃস্বার্থ ভাবে, প্রবাসীর সদস্যদের এইভাবে পাশে দাঁড়ানো দেখে, মনের ভেতরে এই প্রত্যয় জাগে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারা, আমেরিকার মাটিতে জন্মেছে, ধীরে ধীরে এই দেশেই বেড়ে উঠছে, তাদের কেও নিজের শেকড়ের টানে বেঁধে রাখছে, প্রবাসীর প্রতিটি সদস্য।
-মণিদীপা দাস ভট্টাচার্য
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: District-durga-puja-2021, Durga-puja-international -2021