#হুগলি: কথায় আছে স্বপ্ন দেখার কোন সীমা হয় না। তবে সেই স্বপ্ন পূরণ করার ইচ্ছাটাও তো মানুষের দরকার। ইচ্ছা ছিল বাইকে করে লাদাখ যাবেন। কিন্তু আর্থিক মন্দার জেরে বাইক কেনা হয়ে ওঠেনি। তাই বলে কি লাদাখ যাওয়া বন্ধ হবে? বাইক নয় তবে পায়ে হেঁটে। এমনই স্বপ্নপূরণের উদাহরণ হয়ে রইলেন সিঙ্গুরের মিলন মাঝি। মোটর সাইকেলে অনেকেই লাদাখ যায় হয়ত শুনেছিলেন সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া গ্রামের মিলন মাঝি। চায়ের দোকানদার বাবা অনিল মাঝির মোটর বাইক কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই পায়ে হেঁটে লাদাখ যাবার পরিকল্পনা করেন মিলন। গত ২২ ফেব্রুয়ারী হাওড়া ব্রিজ থেকে যাত্রা শুরু করেন এবং ১৫মে লাদাখের খার্দুংলা পাসে পৌঁছে যান তিনি। সেখানে পৌঁছে বাড়িতে ফোন করে জানান তার স্বপ্ন পূরনের কথা।মিলনের লক্ষ ছিল একশ দিনে লাদাখ পৌঁছনোর, ৮৩ দিনেই লক্ষে পৌঁছলেন তিনি।
মিলন রানিগঞ্জে একটি কারখানায় কাজ করতেন মিলন। লকডাউনে সেই কাজ চলে যায়। বাবার কামারকুন্ডুতে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে চায়ের দোকান। সেখানেই বাবাকে মাঝেমধ্যে সাহায্য করতেন।আর মনে মনে লাদাখ যাওয়ার স্বপ্ন বুনতেন। বাবা মা কাউকেই সে বিষয়ে কোনও দিন বলেননি। যে দিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সেদিন মা বাবা জানতেন হয়ত কোনও কাজে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন- ত্রিপুরা উপনির্বাচনে প্রার্থী তালিকা তৈরি তৃণমূলের, ২০২৩-এর আগে ফের পরীক্ষা
বাবা অনিল মাঝি জানান, তিনি জানতেন না ছেলে লাদাখ যাচ্ছে। ছেলে বলেছিল রানিগঞ্জে যাচ্ছে কাজের সন্ধানে, সেই কথাই তিনি জানতেন। তিনি আরও বলেন, একবার মিলন বাইক নিয়ে লাদাখ যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সেই সময় তার বাইক কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না। তখন থেকেই মনে মনে প্রস্তুতি নেয় পায়ে হেঁটে যাওয়ার। ফেসবুকে ছবি দিতে জানতে পারি ও লাদাখ যাচ্ছে। প্রায় আড়াই হাজার কিমি দূর্গম পথ পেরিয়ে ছেলে যে তার স্বপ্ন পূরন করেছে, তাতে গর্বিত মিলনের বাবা। মা চন্ডী মাঝি বলেন, ছেলের জন্য গর্ব হচ্ছে। প্রথমে শুনে অনেকে বলেছিল ও পাগল এতদূর কেউ হাঁটতে পারে। তারপর যখন ফেসবুকে ওর ভিডিও ছবি দেখল সবাই বিশ্বাস করল। ছেলে ফোন করলে প্রথমে কেঁদেছি। তারপর ওর লাইভ ভিডিওগুলো দেখেছি। এতটা পথ হেঁটে পায়ে ফোসকা পড়েছিল, বলেছি টিটেনাস নিতে। মিলন যখন ভারতের পতাকা খার্দুংলায় বরফের উপর গেঁথে দিল খুব গর্বে বুকটা ভরে গেল।
আরও পড়ুন - হজরত মহম্মদকে নিয়ে 'বিতর্কিত' মন্তব্য, নেত্রী নুপুর শর্মাকে বহিষ্কার বিজেপির
মিলন বলেন, অনেক মানুষকে দেখেছি বয়সকালে সাইকেল বা মোটর বাইক নিয়ে ভ্রমণে যায়। আমি বাইক লাভার। একবার টাকা জমিয়ে ভেবেছিলাম একটা বাইক কিনব সেটা আর হয়নি। আমার বয়স কম তাই ভাবলাম দেখি না পায়ে হেঁটে পারি কিনা।পাহাড় আমার পছন্দের প্রকৃতি ভাল লাগে, সেই টানেই লাদাখ পৌঁছনো।এতে একটা এ্যাডভেঞ্চারও আছে।
হাওড়া থেকে ঝাড়খন্ড, বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, হরিয়ানা হয়ে হিমাচল হয়ে লাদাখ পৌঁছতে দিনে ৩০ থেকে ৪৫ কিমি হেঁটেছি। যাত্রা পথে প্রচুর মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। থাকার জায়গা থেকে খাওয়া দাওয়ার কোনো অভাব হয়নি। ২১০০ টাকা নিয়ে বেরিয়েছিলাম বাড়ি থেকে কিছু ওষুধ আর শীতের কয়েকটা পোষাক কেনা ছাড়া কিছুই খরচ হয়নি। ১৮০০০ ফুট উঁচুতে অক্সিজেনের অভাব হয়। কেরালার একটা বাইকার টিম এসেছিল তাদের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল। আমাকে দিয়েছিল, খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম তবে অক্সিজেন লাগেনি। ওখানে দারচা চেকপোস্টের কাছে বাংলার প্রদীপ সিংহর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি সাইকেল নিয়ে লাদাখ গিয়েছেন।
রাহি হালদারনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Ladakh