World Theatre Day: জানুন বিশ্ব নাট্য দিবসের ইতিহাস ! বেদের সঙ্গেও রয়েছে যোগ
- Published by:Piya Banerjee
- news18 bangla
Last Updated:
World theatre day : ভারত এমন একটি দেশ, সেখানে সব কিছুরই নিজস্ব রূপ আছে। গ্রীক ঘরানার নাটক নিজ গুণে কবেই ভারতের একান্ত হয়ে উঠেছে। সংস্কৃত সাহিত্যের শুদ্রক রচিত 'মৃচ্ছকটিক', কালিদাস রচিত 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম', ভবভূতির 'উত্তর রামচরিত' সেই নির্দশনই বহন করে চলেছে।
#কলকাতা: নাটক বা থিয়েটার সব সময় মানুষের মনে ও চেতনায় এক উচ্চ স্থান পেয়ে এসেছে। নাটক বলতেই আমাদের মনে আসে শেকসপিয়রের নাম। তাঁকে বলা হয় বিশ্বের অগ্রণী নাট্যকার। তবে নাটক মানে শুধু শেকসপিয়র নন, কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাদল সরকার, বিজন ভট্টাচার্য, দীনবন্ধু মিত্রের মতো অনেকের নামই আসে। তবে ১৯৬১ সাল থেকে ২৭ মার্চকেই বিশ্ব থিয়েটার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউট (আইটিই) কর্তৃক ১৯৬১ সালে বিশ্ব থিয়েটার দিবসের প্রবর্তন হয়। প্ৰথম বিশ্ব থিয়েটার দিবসের আন্তর্জাতিক বাৰ্তা ১৯৬২ সালে ফ্রান্সের জিন কোকটিয়াও লিখেছিলেন। প্ৰথমে হেলসিঙ্কি এবং তারপর ভিয়েনায় ১৯৬১ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত আইটিইর নবম আলোচনাসভায় আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউটের ফিনিশ কেন্দ্রের পক্ষে অধ্যক্ষ আর্ভি কিভিমায় বিশ্ব থিয়েটার দিবস উদযাপনের প্রস্তাব দেন। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কেন্দ্রসমূহে এটাকে সমৰ্থন দেয়ার পরই দিবসটির বিশ্বব্যাপি প্রচলন শুরু হয়। এত হল আজকের এই বিশেষ দিনটির স্বীকৃতি লাভের ইতিহাস।
তবে নাটক শব্দটি প্রাচীনতম ভারতীয় সাহিত্যে, বিশেষত ঋগবেদের সংবাদ সূত্রে এমন কিছু কথোপকথোনের উল্ল্যেখ রয়েছে যা ইঙ্গিত দেয় থিয়েটার বা নাটকের। এগুলিই সম্ভবত নাটকের আদিরূপ। এই সময় স্ত্রী ও পুরুষরা ভালো পোশাক পরে নাচ গান করতেন। যা এই নাটকের পূর্বরূপ বলেই ধরা হয়। এছাড়াও বৈদিক কর্মকাণ্ডেও অনেক নাটকীয় আচরণ চোখে পড়ে। গ্রীসের সংস্পর্শে আসার পর থেকেই ভারতীয় নাট্য সাহিত্য উদবুদ্ধ হতে শুরু করে। তবে ভারত এমন একটি দেশ, সেখানে সব কিছুরই নিজস্ব রূপ আছে। গ্রীক ঘরানার নাটক নিজ গুণে কবেই ভারতের একান্ত হয়ে উঠেছে। সংস্কৃত সাহিত্যের শুদ্রক রচিত 'মৃচ্ছকটিক', কালিদাস রচিত 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম', ভবভূতির 'উত্তর রামচরিত' সেই নির্দশনই বহন করে চলেছে।
advertisement
তবে বাংলা নাটকের সূত্রপাত যতটা এই সংস্কৃত নাটক থেকে উদ্বুদ্ধ, ঠিক ততটাই অনুপ্রেরণা দিয়েছে বিদেশি থিয়েটার। নাটকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে 'যাত্রা'ও। উনিশ শতকে যখন বাংলা নাটক তৈরি হচ্ছে সে সময় 'যাত্রা' আগে থেকেই পসরা সাজিয়ে রেখেছে। তবে 'যাত্রা'র ইতিহাস কুয়াশাচ্ছন্ন। নাটক ছাপিয়ে গিয়েছে সব উচ্চতা। নাটকেই লোকশিক্ষে হত। আধুনিক বাংলা নাটকের সূচনা হয় ১৮৫২ খ্রীষ্টাব্দে। সে সময় বিদেশি নাটকের অনুবাদের পাশাপাশি মৌলিক নাটকও রচিত হয়। ১৮২২-এর অনূদিত সংস্কৃত প্রহসন প্রবোধচন্দ্রদয়, শকুন্তলা, রত্নাবলীর মতো। তারাচরণ শিকদারের 'ভদ্রার্জুন' ও জিসি গুপ্তের 'কীর্তিবিলাস' দুটি মৌলিক নাটকের প্রকাশ হয় ১৮৫২ তেই। বিচিত্র বিষয় ভাবনা নিয়ে তৈরি হয় শেকসপিয়রের অনুসরণে হরচন্দ্র ঘোষের, 'ভানুমতী চিত্ত বিলাস (১৮৫২), কালীপ্রসন্ন সিংহের 'বাবু নাটক' (১৮৫৪), উমেশচন্দ্র মিত্রের 'বিধবাবিবাহ নাটক' (১৮৫৬) রীতিমতো হইচই ফেলেছিল। এ সময়ের অন্যতম নাট্যকার ছিলেন রামনারায়ণ তর্করত্ন। তিনি তাঁর নাটক 'কুলীনকুলসর্বস্ব'-তে যেভাবে সে সময়কার সমাজকে তুলে ধরেছিলেন, তা আগে দেখা যায়নি। এরপর দীনবন্ধু মিত্রের 'নীলদর্পণ' সে সময়কার নীলচাষীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে নজির গড়ে। যদিও এই নাটক কিছুটা পরের দিকের।
advertisement
advertisement
তবে নাটকের মধ্য দিয়েই উঠে আসতে থাকে তদানিন্তন সমাজের সমস্যার কথা। কখনও কৌতূকের ছলে, আবার কখনও কঠিনরূপে। নাটককে ভেঙে নানা রূপ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ফিউশনও তৈরি করা হচ্ছে। ভারত শুধু নয় গোটা বিশ্বের ইতিহাসে নাটকের একটি আলাদা মর্যাদা রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে বাংলা নাটকের পরিস্থিতি অনেকটাই ভঙ্গুর। নাটকের সঙ্গে মানুষের রুটি রোজগার যোগ হয়েছে। সাহিত্য থেকে বেরিয়ে এসে কড়া বাস্তবের মুখোমুখি নাটককে বারবার দাঁড়াতে হয়েছে। জীবন-জীবিকা শুধু মাত্র নাটকেই আটকেছে অনেক শিল্পীর। টিভি, সিনেমার জগতে কোথাও যেন নাটকের গতিতে টান পড়েছে। আর্থিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবুও সিনেমা বা সিরিয়াল কখনই থিয়েটারের জায়গা নিতে পারেনি। বলা হয় একজন থিয়েটার অভিনেতা এতটা দক্ষ হন, যে সব মাধ্যমেই তিনি মানানসই। আজ বিশ্ব থিয়েটার দিবস সব নাট্য শিল্পীদের কাছে বিশেষ আনন্দের। বিভিন্ন নাটকের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়। এই বিশেষ দিনে সম্মান জাননো হয় সকল নাট্য শিল্পীদের। গোটা পৃথিবীতে শিল্পের যত রূপই থাকুক না কেন, নাটকের মর্যাদা সব সময় উচ্চস্তরে।
Location :
First Published :
March 27, 2021 10:45 PM IST