বাঙালির মনে, ফেলুদা শুধু মাত্র সৌমিত্রই ! সে জায়গা আর কেউ নিতে পারবে না !
- Published by:Piya Banerjee
- news18 bangla
Last Updated:
সৌমিত্র শুধু চেষ্টা করেছেন চোখে মুখে বুদ্ধিদীপ্ততা ফুটিয়ে তুলতে। আর তাতেই তাঁকে টেক্কা দেওয়ার মতো ফেলুদা আজও তৈরি হয়নি।
#কলকাতা: প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ! ২৭ বছর বয়সী এক যুবক। উচ্চতা ৬ ফুট ২, চোখে মুখে বুদ্ধির ছাপ। অসম্ভব পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। ফেলুদা খুব ছোট বয়সে বাবা-মাকে হারিয়েছেন। ফেলুদাকে বাঙালির ঘরে মনে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ফেলুদা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’। ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত এই সিরিজের মোট ৩৫টি সম্পূর্ণ ও চারটি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ফেলুদা নিয়ে ছবি হবে কিনা তা সত্যজিৎ নিজেও ভাবেননি।
ফেলুদার জন্য যে স্কেচ এঁকেছিলেন সত্যজিৎ তাতে যেন সৌমিত্রর মুখই বসানো ছিল। এক আলোচনায় সত্যজিতকে বলছেন সৌমিত্র, " ফেলুদাকে অনেকটা আপনার মতোই দেখতে।" সে কথা শুনে সত্যজিতের পালটা জবাব, " তা কেন হবে? আমার তো মনে হয় ফেলুদা তুমি। তোমার মতোই দেখতে।" যদিও শুধু সত্যজিৎ নয় অনেকেই ফেলুদার মধ্যে সৌমিত্রকেই খুঁজে পান। ঠিক যেভাবে অপু চরিত্রটা যেন সৌমিত্রর জন্যই তৈরি হয়েছিল।
advertisement

advertisement
নতুন মুখ খুঁজে আনা সত্যজিতের ক্ষমতা ছিল। চাইলে নতুন কাউকে ফেলুদা তৈরি করতে পারতেন সত্যজিৎ। কিন্তু কিভাবে করবেন ! ততদিনে যে তাঁর সামনে জলজ্যান্ত ফেলুদা রূপী সৌমিত্র হেঁটে বেড়াচ্ছেন। তেমনই লম্বা। তেমনই বুদ্ধিদীপ্ত। তবে সত্যজিৎ যে 'সোনার কেল্লা' বানাচ্ছেন তা নিয়ে তেমন কোনও আলোচনা কখনই করেননি।
advertisement
একদিন হঠাৎই সৌমিত্রকে ডেকে সত্যজিৎ বলেছিলেন, 'সোনার কেল্লা' বানাব। তুমিই হবে ফেলুদা। সে সময় সৌমিত্র অনেক ছবি করে ফেলেছেন। তাঁর জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। সত্যজিতের নায়ক হিসেবেই তিনি পরিচিত। যদিও 'নায়ক' ছবিতে উত্তমকুমার অভিনয় করেছিলেন। কারণ বাস্তব জীবনে উত্তমকুমারের একমাত্র সে সময় নায়ক সুলভ জনপ্রিয়তা সব থেকে বেশি ছিল। তাই সত্যজিতের 'নায়ক' তিনি হলেও সৌমিত্রই ছিলেন সত্যজিতের পছন্দের।
advertisement

সোনার কেল্লা হবে শুনে রাতের ঘুম উড়ে যায় সৌমিত্রর। এ তো একেবারে অন্য ছকের ছবি। তবে সে সময় সৌমিত্র বিবাহিত তাঁর সন্তান রয়েছে। কিন্তু তাঁদের জন্য কোনও ছবি করা হয়নি। অর্থাৎ বাচ্চারাও চুটিয়ে দেখবে এমন কোনও ছবি তখনও সৌমিত্র করেননি। এই সুযোগ। নিজেকে নতুন করে ভাঙতে শুরু করলেন। তবে খুব বেশি অনুশীলন করতে হয়নি। সৌমিত্র শুধু চেষ্টা করেছেন চোখে মুখে বুদ্ধিদীপ্ততা ফুটিয়ে তুলতে। আর তাতেই তাঁকে টেক্কা দেওয়ার মতো ফেলুদা আজও তৈরি হয়নি।
advertisement
সোনার কেল্লা-র একটি শ্যুটিং দৃশ্যে সৌমিত্র মুখে চিন্তার ছাপ ফুটিয়ে তুলতে কপালে হাত রাখলেন। তা দেখেই সত্যজিৎ ইশারা করলেন কপালে হাত রেখে আঙুলগুলো দিয়ে ড্রামিং করো। কপালে বাজাও। সঙ্গে সঙ্গে চিন্তার ফুলকি জ্বলে ওঠে সৌমিত্র মাথায়। সে এক মনে রাখার মতো দৃশ্য তৈরি হয়।
এর পর সোনার কেল্লা-র শ্যুটিংয়ের জন্য রাজস্থানের ধুধু মরু পথে গাড়ি ছুটে চলেছে। হঠাৎ চাকা আটকে যায় বালিতে। সত্যজিৎ সেখানেই ক্যামেরা নিয়ে তৈরি হয়ে গেলেন। ফেলুদা ও তোপসেকে খা খা রোদে দাঁড় করিয়ে কথোপকথোনের এক অপরূপ দৃশ্য শ্যুট করলেন। সেখানে চাকা আটকে যাওয়ার ঘটনাটাও থাকল। সৌমিত্র পরে দেখেছিলেন এডিটিং টেবিলে সত্যজিৎ ছবির প্রয়োজনে এই দৃশ্যটি বাদ দিয়ে দিলেন অবলীলায়। সৌমত্র যদি ফেলুদা হন। তবে সন্তোষ দত্তকে ছাড়া জটায়ু হওয়া সম্ভব না। পরে যখন সন্দীপ রায় হিন্দিতে ফেলুদা করেছিলেন, তখন সত্যজিৎ বলেছিলেন, 'এ ছবি লোকেরা পছন্দ করবে না। এখানে না আছে সৌমিত্র না আছে সন্তোষ দত্ত।' সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, সৌমিত্র বা সন্তোষ দত্তকে ছাড়া ফেলুদা হবে না। এর পর 'জয় বাবা ফেলুনাথ'। সেই ছবিতেও সৌমিত্র। সত্যজিৎ যেভাবে ফেলুদার গল্প লিখেছিলেন সৌমিত্র যেন সেভাবেই তৈরি হয়েছিলেন। সৌমিত্র ছাড়া ফেলুদা হতে পারে না। তাই নতুন নতুন ফেলুদা যতই আসুক না কেন সৌমিত্রকে ছাড়িয়ে যাওয়া তো দূর ছোঁয়ার ক্ষমতাও কারও হবে না।
view commentsLocation :
First Published :
October 10, 2020 5:24 PM IST