একসময় সন্ধিপুজোর আগে ও পরে কামান দাগা হত শোভাবাজার রাজবাড়িতে

Last Updated:
#কলকাতা: এই রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা নবকৃষ্ণ দেব ৷ শোনা যায়, তিনি ওয়ারেন হেস্টিংসের গৃহশিক্ষক ছিলেন ৷ ব্রিটিশ আমলে প্রথম দেশীয় বিচারকও ছিলেন তিনি ৷ ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিরাজ-উদ-দোল্লাকে পরাচিত করে ৷ সে সময় পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশকে সাহায্য করেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব ৷ ইংরেজদের জয়ের পর তিনিই শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর শুরু করেন ৷ উপলক্ষ্য- ইংরেজরাজকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন। যদিও দেব পরিবার এই তত্ত্বের সঙ্গে সর্বাংশে সহমত নন।
একসময় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এই বাড়িতে ৯০ দিন পুরোহিত হিসেবে কাজ করেছিলেন ৷ একবার পুজোর সময় তিনি ছড়রা গাড়িতে চেপে শোভাবাজার রাজবাড়িতে হাজির হয়েছিলেন ৷ আর এসেই তিনি মায়ের সামনে ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করেছিলেন ৷ আর বাড়িতে রামকৃষ্ণদেব এসেছেন, এ কথা চাউড় হতেই, লোকে লোকারণ্য হয়েছিল গিয়েছিল শোভাবাজার রাজবাড়ি ৷
রাজা নবকৃষ্ণ দেব তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র গোপীমোহন দেবকে পুত্র হিসেবে দত্তক নেন ৷ পরে নিজের ছেলেকে নিয়ে আদি বাড়ির দক্ষিণ দিকে আরও একটি ভবন তৈরি করে বসবাস শুরু করেন ৷ নবকৃষ্ণ দেবের মৃত্যুর পর শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো বড় তরফ ও ছোট তরফ, এই দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে ৷ তবে সেই প্রথম থেকে যে নিয়ম, আচার-অনুষ্ঠান রাজবাড়িতে শুরু হয়েছিল আজও তা অব্যাহত ৷ উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা উঠলেই, সবার প্রথমে উঠে আসে যে নামটি, তা হল শোভাবাজার রাজবাড়ি ৷ এই বাড়ির পুজো নিয়ে কতই না গল্প ৷
advertisement
advertisement
এখানে উল্টোরথের দিন কাঠামো পুজো হয়। সেদিন থেকে বাড়িতেই প্রতিমা নির্মাণ শুরু হয় ৷ দেব পরিবারের সপ্তম প্রজন্ম এখন দুর্গাপুজো করছেন ৷ আগে পুজোতে বিনোদনের আয়োজন করা হত ৷ বল ড্যান্স ও বাইজি নাচের আসর বসত হত রাজবাড়িতে ৷ অবশ্য অনেকদিন হল তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷
তৈরি হচ্ছেন মা দুর্গা ৷ তৈরি হচ্ছেন মা দুর্গা ৷
advertisement
উত্তর কলকাতার এই রাজবাড়িতে নবমীর আগের পক্ষের কৃষ্ণানবমীতে বোধন বসে ৷ ঠাকুর দালানে বেদি করে দেবীর ঘট স্থাপন করা হয় সেদিনই ৷ ওইদিন থেকেই ব্রাহ্মণরা বাড়ির ঠাকুর দালানে পুজোর দিন পর্যন্ত চণ্ডীপাঠ, বেদ, রামায়ণ ও মধুসূদন পাঠ করেন ৷ এই পুজোয় ব্রাহ্মণ থেকে প্রতিমা শিল্পী এমনকী সানাই, ঢাকি, ব্যান্ড, বিসর্জনের নৌকা প্রভৃতি বংশ পরম্পরায় চলে আসছে ৷ পুজোর কয়েকটাদিন কলকাতা ও বাইরে থেকে বহু ব্রাহ্মণ পন্ডিত প্রণামী নিতে আসেন এই রাজবাড়িতে ৷ শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোয় কোনও অন্নভোগ হয় না ৷ এখানে হয় লুচি ভোগ ৷ এছাড়া নৈবেদ্য তৈরি হয় চাল, কলা দিয়ে ৷ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টিও নিবেদন করা হয় মা দুর্গাকে ৷ থাকে ৩৩ রকমের মিঠাই ৷ বাড়িতে ভিয়েন বসিয়েই মিঠাই তৈরি করানো হয় ৷ সেই মিঠাই ভোগ হিসেবে মা’কে নিবেদন করা হয় ৷ আগে আরও আট রকমের মিঠাই বানানো হত, কিন্তু কারিগরের অভাবে সেগুলি এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷
advertisement
 নতুন রঙের প্রলেপ পড়েছে শোভাবাজার রাজবাড়িতে ৷
নতুন রঙের প্রলেপ পড়েছে শোভাবাজার রাজবাড়িতে ৷
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বিল্ব বরণ, আমন্ত্রণ, অধিবাস হয় ৷ প্রতিমার সামনে ঘট স্থাপন ও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ দেবী দুর্গাকে সোনার নথ ও সিঁদুর পরানো হয় ৷ সপ্তমীতে ভোরবেলায় রাজবাড়ির নিজস্ব ঘাটে কলা বউকে (নবপত্রিকা) স্নান করানো হয়৷ আগে ফোর্ট থেকে ‘গোরার বাদ্যি’ ব্যান্ড আসত ৷ এখন হ্যারিসন রোড থেকে ব্যান্ড আসে ৷
advertisement
অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে একশো আটটি প্রদীপ জ্বেলে সন্ধিপুজো করা হয় ৷ সন্ধিপুজোর সূচনা ও সমাপ্তি ঘোষণার জন্য আগে কামানের শব্দ করা হত ৷ এখন সেই কামান শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাখা রয়েছে ৷ তবে এখন আর সন্ধিপুজোর সময় কামান দাগা হয় না ৷ এখন বন্দুকের শব্দেই শুরু হয় সন্ধিপুজো ৷
এখন আর বিসর্জনের পর পুজোর সময় নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানো হয় না ৷ তার বদলে তৈরি করা হয় শোলার নীলকন্ঠ পাখি, আর তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় গ্যাস বেলুন ৷ কালের সঙ্গে পুজোর কয়েকটি নিয়ম বদলালেও, বেশির ভাগ নিয়মই এখনও অপরিবর্তিত ৷
advertisement
 এবার মায়ের ফেরার পালা ৷ বিজয়া ৷
এবার মায়ের ফেরার পালা ৷ বিজয়া ৷
এই বাড়ির রীতি অনুযায়ী দশমীর দিন সকালেই মায়ের বিসর্জন হয় ৷ প্রতিমার সামনে একটি বড় হাঁড়িতে জল ভর্তি থাকে ৷ ওই জলের ভিতর মায়ের পায়ের প্রতিবিম্ব দেখে বাড়ির সবাই প্রণাম করেন ৷ওই সময় বাড়িতে বিষাদের সুর বেজে ওঠে সানাইয়ে ৷বিকেলে শোভাযাত্রা করে গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় ৷ খুঁটি ও বাঁশের মাচার উপরে প্রতিমা রেখে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা৷দেবী রওনা হওয়ার সময় একটি শোলার নীলকণ্ঠ পাখি আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং নৌকা ছাড়ার সময় আরেকটি ৷ আগে সত্যিকারের নীলকন্ঠ পাখি ছাড়া হত ৷ আরামবাগ থেকে সেই পাখি আনানো হত ৷ কিন্তু বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন লাগু হওয়ার পর থেকেই নীলকণ্ঠ পাখি ছাড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাজবাড়ির দুর্গাপুজোতে ৷ তবে রীতি অনুযায়ী এখন শোলার তৈরি নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দেওয়া হয় ৷ প্রচলিত বিশ্বাস, নীলকণ্ঠ পাখি কৈলাশে মহাদেবকে মায়ের রওনা হওয়ার খবর দেবে ৷ আগে শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা ছিল দেখার মতো ৷ সেই শোভাযাত্রায় রুপোর গদা-সহ আরও বিভিন্ন ধরনের বহুমূল্য রত্ন খচিত অস্ত্র বের করা হত ৷ তবে পুলিশের তরফে এত দামী জিনিসপত্র বের করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷ শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জনের দৃশ্যটি অভূতপূর্ব ৷ দুটি নৌকার মাঝে প্রতিমা রাখা হয়। মাঝনদীতে পৌঁছে নৌকা দু’টি ধীরে ধীরে সরে গেলে মাতৃমূর্তি জলে বিসর্জিত হয়ে যায় ৷ এরপর আবার পরের বছরের জন্য অপেক্ষা ৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
একসময় সন্ধিপুজোর আগে ও পরে কামান দাগা হত শোভাবাজার রাজবাড়িতে
Next Article
advertisement
দুর্গাপুর স্টেশনে গেলে আর ফিরতে ইচ্ছে হবে না! ২৪ ঘণ্টা মিলবে পানীয় জল আর অফুরন্ত খাবার
দুর্গাপুর স্টেশনে গেলে আর ফিরতে ইচ্ছে হবে না! ২৪ ঘণ্টা মিলবে পানীয় জল আর অফুরন্ত খাবার
  • দুর্গাপুর স্টেশনে ২৪ ঘণ্টা ভেন্ডিং মেশিনে স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় পাওয়া যাবে

  • UPI-দিয়ে সহজেই পেমেন্ট করা যাবে

  • দুর্গাপুর স্টেশন স্মার্ট, পরিষ্কার এবং যাত্রী-সহযোগী স্টেশন হয়ে উঠছে

VIEW MORE
advertisement
advertisement