নারী দিবসে "না" বলতে শিখুন !
- Published by:Piya Banerjee
- news18 bangla
Last Updated:
ভেবে দেখেছেন কখনও পৃথিবীতে যদি একটাও মেয়ে না থাকে কী হবে পুরুষ সমাজের!
#কলকাতা: সকাল সকাল বউয়ের বানানো চায়ে চুমুক না দিলে দিনের আবার শুরু কী হে! ন'টার লোকাল ট্রেনে তাস খেলে আর রাজ্য-রাজনীতির গুষ্টির তুষ্টি করতে করতে মানিকতলায় অফিস আসতে হয় ভাই! ধকল তো আর কম নয়! সকাল সকাল বউয়ের হাতের চা না হলে ঠিক মন ভরে না। তবে হ্যাঁ বিয়ের আগেই একেবারে বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি করা গিন্নি জুটিয়েছেন সরকারি কেরানিবাবু। হু হু বললে হবে, দেখতেও তো হবে ভাই! বউটি আমার বড্ড ভাল। নিজের অফিসের টিফিন গোছাবার সময় পাক না পাক, কর্তা এবং শাশুড়ির দিকে তার সব সময় নজর। কর্তার টিফিন, শাশুড়ি মার দুপুরের খাবার সব রেডি করে তবেই গিন্নি অফিস ছোটে। হক কথা ভাই! কেরানি বাবু কিন্তু হেব্বি নারীবাদী। চাকরি করা বউকে তো আর ঘরের বউ করে রাখেনি। সে তো দিব্যি অফিস যায়। ঘোরে ফেরে। আবার রাত আটটায় বাড়ি ফিরে নিজে হাতে রুটি করে। যাকে বলে পুরো নারী স্বাধীনতা। বউমা চাকরি করে সংসারে টাকাও দেয়, আবার সংসারও সামলায়। একেই তো বলে নারী স্বাধীনতা।
সত্যি বলছি সমাজ আমার ধন্য সমাজ! ৮ মার্চ মানে আজ তো আবার নারী দিবস। মানে, মেয়েদের জন্য ঘটা করে উৎসব হবে। না-না, পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেল ফেলে, পাড়ার সেরা মেয়েকে ধরে এনে পুজো করা হবে, এমনটা ভেবে ভুল করবেন না যেন! আজ আর কী নারী দিবস। মেয়েদের সম্মানার্থে অর্পিত একটি দিন। ওই যেমন 'ভ্যালেনটাইনস ডে' হয় না তেমনই। ওই দিন প্রেমিকাকে জড়িয়ে ফেসবুকে ছবি না দিলে যেন জন্মটাই বৃথা। 'তোর কেউ নেই? কি বলিস রে!' শুনতে শুনতে কান ব্যথা হয়ে যাবে। সে আপনার বয়েস যাই হোক না কেন! ওই আবার যেমন 'চিলড্রেনস ডে' মানেই হল গিয়ে ওই দিন সব শিশু শ্রমিকদের একটু ছুটি দিয়ে দাও। রাস্তায় দুটো বাচ্চাকে ধরে চকলেট খাইয়ে দাও। যে ভাত খেতে পায় না রোজ তার হাতে একদিন বড় একটা চকলেট ধরিয়ে কী লাভ! যাক কে যাক সে সব কথা জলে যাক! আর আমাদের দেশে আবার শিশু শ্রমিক আছে নাকি! সব বাজে কথা! খুঁজে দেখাও দেখি একটা। বুঝবো বুকের পাটা। সব চায়ের দোকানে কাজ করা বাচ্চা গুলোকে এই দিন ভাল জামা কাপড় পড়িয়ে মালিকের ছেলে বানিয়ে দিলেই হল। এই নারী দিবস খানিকটা এই রকমই। এই দিন একটু বেশি আদরটাদর করে দিলেই হল। আর একটা গিফ্ট দিলেই হল। সব ঠাণ্ডা।
advertisement
তবে নারী দিবসে নারী দিবসে বউমা রুটি বেলবেন না। বর মহাশয় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে রুটি বেলবেন এমনটা ভাবলে কিন্তু মহাভুল করবেন! ও রান্নাবাটি আবার ছেলেদের কাজ নাকি! ও তো মেয়েরাই করে। গোটা একটা দিন দিচ্ছি তাতেই খুশি থাক না বাপু! পুরুষ মানুষের কী অত ধকল সয়! অফিস ফেরত রান্নাবাটি! ওসব বাবা মেয়েরাই পারে! নিউ ইয়র্কে ১৯০৮ সালে প্ল্যাকার্ড হাতে ছেলেদের সমান কাজ ও সমান মাইনের দাবিতে রাস্তায় হাঁটার সময় মনে ছিল না। দেওয়া তো হয়েছে সমান অধিকার। ঘরে ও বাইরে সমান কাজ করার অধিকার। আবার জার্মান নেত্রী ক্লারা জেটকিন মেয়েদের উদ্দেশে গোটা একটা দিন চেয়ে বসলেন! তা দেওয়া কী হয়নি! দেওয়া তো হল। ৮ মার্চটা তো সেই জন্যই মেয়েদের দেওয়া হল। আর নারী স্বাধীনতার কথা তো ছেড়েই দাও আছে বলেই তো রাত ৯টা তে একটা মেয়ে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফেরে। নয়তো শেয়াল কুকুরে ছিড়ে খেত। হ্যাঁ একটা দুটো ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটে যায় আর কী! ওগুলো ধরতে নেই! তাই কাজের ভাগাভাগি করে লাভ কী মেয়েরাই তো চেয়েছে সমান সমান কাজ করতে। না হয় ঘর বার দুটোই তাদের দেওয়া হল। তার উপরে যদি বউ চাকরি করে তবে পুরুষ মহলে আমি কত উদার বলে প্রশংসাও পাওয়া যায়। নারী স্বাধীনতা নিয়ে কথাও বলা যায়। কিন্তু যদি সেই মেয়ে স্লিভলেস জামা পড়ে রাস্তায় বেরোয় তাহলে আর রক্ষা নেই! তোমাদের এত স্বাধীনতা দিচ্ছি তাই বলে যা ইচ্ছে পোশাক পড়ে রাস্তায় বেরোবে! তারপর যদি কিছু ঘটে তো পুরুষদের দোষ দিও না কিন্তু। মানে হল গিয়ে ওপর ওপর সবই তো হচ্ছে রানি রাসমনির জন্য। কিন্তু আসলে করছেটা কে? রাজা রাজচন্দ্র! ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম! তিনি না থাকলে কে রক্ষে করবে ঠাকুর। এই তিনিরাই এখনো ঠিক করে চলেছেন সব কিছু!
advertisement
advertisement
বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো বউমা অফিস যাবে? তাও আবার হয় নাকি। সব বন্ধ। ইচ্ছে না করলেও সিঁদুর পরতেই হবে। জিন্স পড়ে বাইরে যাওয়া কেন! আপনিও ওমনি মিন মিন করে সব কিছু মেনে নেন। ভাবেন না না আমাকে কত স্বাধীনতাই না দিয়ে রেখেছেন তারা। বলি সময় এসেছে এবার 'না' বলতে শিখুন। আর কতদিন মেনে নেবেন! নারী দিবসে অফিসে গিয়ে মেয়ে বলে শুভ নারী দিবস কথাটা শুনলে চেঁচিয়ে বলুন 'আপনার দিনটা কবে!
advertisement
নিজেদের জন্য আলাদা একটা দিন নিয়ে খুশি হওয়ার কিছু নেই। হ্যাঁ মানছি সবলের সঙ্গে দুর্বলের লড়াইটা আজকের না। বন্য প্রাণীদের সঙ্গে লড়াই করে মানুষ বুদ্ধির জোরেই মানুষ হয়ে উঠেছে। তাই বুদ্ধিটাই সম্বল হোক না! পুরুষ ছাড়া যেমন চলবে না, তেমন নারী ছাড়াও তো চলবে না! ভেবে দেখেছেন কখনও যদি একটাও মেয়ে না থাকে কী হবে পুরুষ সমাজের! এখনও স্কুলে ভর্তি হওয়ার অপরাধে ইরাকের ছোট্ট মেয়েটাকে বাজারে বিক্রি হয়ে যেতে হয়। আলু পটলের মতো তার শরীরের অঙ্গপতঙ্গ টিপে টিপে দেখে নেওয়া হয়। তারপর জোর করে বিয়ে, ধর্ষণ। অনায়াসে বেতের ঘা জুটে যায় মেয়েটির কপালে। এ শুধু ইরাক নয়। সব দেশেই এ দৃশ্য কম বেশি লুকিয়ে বা প্রকাশ্যেই হয়। প্রতিবাদ কী হয় না! হয়, তবে লাভ কিছু হয় না। কোথায় একটা মালালা হল। তাঁকে নোবেল দিয়ে প্রশংসা হল। এটা ব্যতিক্রম ঘটনা। নারী-মুক্তি নয়। তাই যারা ৮ মার্চ নিয়ে নাচানাচি করছেন। তাদের বলি নাচার কিছু নেই। মহিলা সিট নিয়ে বাসে ঝামেলা বন্ধ করুন দেখবেন এমনিই নারী মুক্তি হয়ে গেছে। 'আমরা করব জয়' মার্কা টিভি অ্যাডে নিজেকে আটকে না রেখে চেতনা হোক! চৈতন্য আসুক!
view commentsLocation :
First Published :
March 07, 2020 8:08 PM IST

