Fathers day 2020| বাবা সত্যজিৎ রায়কে যেভাবে দেখেছেন পুত্র সন্দীপ ! আজও বাবার স্মৃতিতেই আটকে তিনি !

Last Updated:

বাবা পাঠার মাংস খেতে খুব ভালবাসতেন। আর দই।

#কলকাতা: সত্যজিৎ রায় মাত্র আড়াই বছর বয়সে হারিয়ে ছিলেন বাবা সুকুমার রায়কে। সত্যজিৎ বাবাকে চিনেছিলেন তাঁর চিঠির মধ্যে দিয়ে। সে অর্থে বলতে গেলে বাবা ভাগ্য বেশ খারাপই ছিল সত্যজিতের। কিন্তু সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ রায় সে অর্থে ভাগ্যবান। বাবার সান্নিধ্যেই বেড়ে উঠেছিলেন সন্দীপ। এমনকি কাছ থেকে সুযোগ পেয়েছিলেন বাবার কাজ দেখার। বাবার দেখানো পথে হেঁটেই পরবর্তীকালে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন পরিচালক সন্দীপ রায়। সন্দীপ রায়ের কাছে তাঁর বাবাই ছিলেন আসল নায়ক।
১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান সত্যজিৎ রায়। তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। এখনও বাবার স্মৃতিকে আকড়ে ধরেই বেঁচে আছেন সন্দীপ রায়। ২ মে সত্যজিতের জন্মদিন। এই দিনটা তাঁর বাড়িতে আজও পালন হয়। অনেক মানুষের সমাগম হয় ওই দিন। বাবার স্মৃতিচারণায় চেনা -অচেনা মানুষের সঙ্গে মেতে ওঠেন পুত্র সন্দীপ। তিনি এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। সন্দীপ রায় বলেন, " বাবা নেই এতগুলো বছর হয়ে গেল। কিন্তু এই দিনটা এলে মনে হয়, বাবা আছেন। কত মানুষ বাবাকে ভালবেসে আসেন। তাঁদের সঙ্গে বাবাকে নিয়ে কথা বলতে বলতে আমি হারিয়ে যাই বাবার স্মৃতিতে। বাবা বেঁচে থাকতে কখনই এত বড় করে জন্মদিন পালন হত না। ঘরোয়া অনুষ্ঠান হত।"
advertisement
বাবার স্মৃতি পাহাড়ে আটকে রয়েছেন সন্দীপ। বাবার পুরোনো জিনিস-পত্র ঘাঁটতে গিয়ে পেয়েছেন নতুন কিছু চিঠিও। আগলে রেখেছেন সে সব। সন্দীপ জানান, "বাবা পাঠার মাংস খেতে খুব ভালবাসতেন। আর দই। পাতে দই না থাকলে বাবার মন ভরতো না। বাবা মানুষ খুব ভালবাসতেন। বাবা শুধু তো সিনেমা পরিচালক ছিলেন না, তিনি একজন সাহিত্যিকও। বাবা সব সময় চাইতেন এই বাড়িতে লোকজন আসুক। বাবা নিজের কাজ সম্পর্কে সকলের মত শুনতেন মন দিয়ে। ভাবের আদান প্রদান করতে খুব ভালবাসতেন। মানুষটা আজ নেই। কিন্তু সারা দেশের মানুষের মনে তিনি রয়েই গিয়েছেন।" বাবার কথা বলতে গেলেই সন্দীপ রায়ের চোখে মুখে সব সময় একটা উজ্জ্বল আভা ঝরে পড়ে। তিনি যেন এক অন্য জগতে চলে যান সে সময়।
advertisement
advertisement
১৯৬১ সালে পারিবারিক পত্রিকা সন্দেশ-এর সম্পাদক হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তারপর কিছুদিন সন্দীপ রায়ও এই পত্রিকার দায়িত্বে ছিলেন। সন্দেশ প্রসঙ্গে সন্দীপ রায় জানিয়েছিলেন, "সন্দেশ দাদু সুকুমার রায়ের নিজে হাতে তৈরি করা খ্যাতনামা পত্রিকা। সেই পত্রিকাটা আবার নতুন করে হঠাৎই বাবা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। তাঁর সঙ্গে একদিন আড্ডার ছলে কথা বলতে বলতেই ফের খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।" এই সন্দেশে সত্যজিৎ রায় 'বঙ্কুবাবুর বন্ধু' গল্পটি প্রথম লেখেন। এর পর আসতে আসতে শঙ্কু জন্ম নিল। ফেলুদা নিয়ে লেখা শুরু করলেন। সন্দীপ রায় জানিয়েছেন, এই সময় তিনি এক অন্য বাবাকে পেয়েছিলেন। বলেছিলেন, "গল্প লেখক বাবাকে পেলাম।"
advertisement
"পথের পাঁচালি' বানানোর পিঁছনেও রয়েছে এক ইতিহাস। সত্যজিৎ রায় সিগনেট প্রেসের তরফ থেকে ছোটদের 'পথের পাঁচালি'র ইলাস্ট্রেশন করেছিলেন। সেই সময় তিনি নতুন করে আবার ডুবে ছিলেন এই গল্পে। এর পর বিলেত চলে যান তিনি। জাহাজে যেতে যেতে পথের পাঁচালির ছোট ছোট খসরা ও চিত্র তৈরি করেন। এরপর লন্ডনে গিয়ে উনি দেখলেন 'বাই সাইকেল থিপ'। বদলে গেল ছবি তৈরির পুরো কনসেপ্ট। ঠিক করলেন এভাবেই মাটির গন্ধ নিয়ে আসতে হবে ছবির মধ্যে। তৈরি হল পথের পাঁচালি। সন্দীপ রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, "দেশে কিন্তু পথের পাঁচালি মুক্তি পাওয়ার পর একদম চলেনি। তেমনই 'অপরাজিত' দেশে একেবারেই চলেনি। বিদেশে চলেছিল। তখন বাবা ভাবেন যদি অন্য রকম কিছুব ছবি করা যায়। তখন 'জলসাঘর', 'পরশপাথর' করার কথা ভাবলেন। 'জলসাঘর'-এর কাজ আগে শুরু হয়েছিল।"
advertisement
বাবার সঙ্গে পুত্র সন্দীপ রায়। photo source collected বাবার সঙ্গে পুত্র সন্দীপ রায়। photo source collected
সন্দীপ রায় একটি ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, "শান্তিনিকেতনে পড়তে গিয়ে বাবা নিজের শিখরের খোঁজ পেয়েছিলেন। নন্দলাল বসু ও বিনোদদার জন্য।" বাবার সিনেমা বানানোর প্রসঙ্গে সন্দীপ রায় বলেন, "বাবা যখন 'পরশপাথর' বা 'গুপিগাইন' বানিয়েছিলেন সে সময় স্পেশ্যাল এফেক্ট বলে কিছু ছিল না। সবটাই করতেন ক্যামেরায়। নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে। এ প্রতিভা বিরল।" বাবার সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন সন্দীপ রায়। অনেক ছবিতেই বাবার সহকারি হিসেবে ছিলেন তিনি। 'সোনার কেল্লা' ছবির জন্য তাঁকে জোগাড় করতে হয়েছিল কাঁকড়া বিছে। মেলা থেকে দু'টো কাঁকড়া বিছে কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন যোধপুর। একটি মরে যায়। কামু বন্দ্যোপাধ্যায় এই সময় শ্যুটিংয়ে কাঁকড়া বিছে হাতে তুলে নিয়েছিলেন। সেই শটটা তুলিয়েছিলেন সত্যজিৎ। তবে এডিট রুমে বসে ওই শটটা তিনি বাদ দিয়ে দিতে চান। এই সময় সন্দীপ রায় বাবাকে প্রশ্ন করেছিলেন কেন বাদ দিয়ে দিচ্ছেন এত ভাল শটটা। সত্যজিৎ বলেছিলেন, " তাহলে কাঁকাড়াটা কমজোরি হয়ে যাচ্ছে।" এভাবেই টুকরো টুকরো করে বাবার কাছেই তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ছবি, 'শতরঞ্জ কি খিলাড়ি' ছবিতেও বাবার কাজ খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।
advertisement
সত্যজিৎ রায় বাবা হিসেবে কাছের মানুষ তো ছিলেনই সন্দীপ রায়ের। তবে একজন পরিচালক ও সাহিত্যিক হিসেবে তিনি অনেক বেশি আপন হয়েছিলেন তাঁর। এখনও সত্যজিৎ রায়কে মনে করেন পুত্র সন্দীপ। যখনই তিনি কোনও ছবি বানান তাঁর বাবার কথাই মনে পড়ে। এমনকি শেষ ছবি বানানোর পরও সন্দীপ রায়ের মনে হয়েছিল, 'বাবাকে যদি এডিটিংটা একবার দেখাতে পারতেন।" বাবা খুশি হয়ে গেলেই শান্তি হত সন্দীপের। ছবি বানিয়ে এখনও সবার আগে মনে মনে তিনি বাবাকেই খুশি করতে চান।
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
Fathers day 2020| বাবা সত্যজিৎ রায়কে যেভাবে দেখেছেন পুত্র সন্দীপ ! আজও বাবার স্মৃতিতেই আটকে তিনি !
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement