চ্যাপলিন পাল্টে দিলেন স্বপ্ন, মৃণালের কাছে স্ত্রী গীতার পরামর্শের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম

Last Updated:

স্বপ্ন সঙ্গে নিয়েই পেশার টানে পা রাখলেন কলকাতার বাইরে ৷ কিন্তু মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরিতে বেশি দিন মন বসল না ৷ চারে দশকে ফিরলেন কলকতায়, এ বার তাঁর পাখির চোখ শুধুই চলচ্চিত্র ৷

চার্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য কিড’ যখন দেখেছিলেন, তখন তিনি নিজেই বালক ৷ ছবি দেখে অফুরান হাসির সময়ে স্বপ্নেও ভাবেননি এক দিন তিনি নিজেই ক্যামেরার পিছন থেকে নির্দেশ দেবেন ৷ একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চ্যাপলিনের জন্যই তাঁর পরিচালকের জীবন বেছে নেওয়া ৷ অনুযোগ উঠত, তাঁর ছবিতে অন্ধকার বড় বেশি ৷ কিন্তু মৃণাল সেনের পরিচালনায় সেই অন্ধকারই সেলুলেয়েডে শতকমলে বিকশিত হয়েছে জীবনের জয়গান হয়ে৷
১৯২৩ সালের ১৪ মে জন্ম পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরে ৷ পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছের পাশাপাশি ছোট থেকেই সঙ্গী ছিল ছবি দেখার নেশা ৷ আজীবন চলচ্চিত্র ছিল অমোঘ নেশা হয়েই ৷ পেশার মাপকাঠিতে মাপতে যাননি নিজের প্যাশনকে ৷
যে কলকাতা তাঁর ছবির উপজীব্য থেকে চরিত্র হয়ে উঠেছে বার বার, তার নাগরিক তিনি হয়েছিলেন কৈশোরেই ৷ তিরিশের দশকে কলেজজীবনে বাম রাজনীতিতে হাতেখড়ি ৷ ওই সময়পর্বেই থিয়েটার ও ছবির জগতের অঙ্গন উন্মুক্ত হয় তাঁর সামনে ৷ স্বপ্ন সঙ্গে নিয়েই পেশার টানে পা রাখলেন কলকাতার বাইরে ৷ কিন্তু মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরিতে বেশি দিন মন বসল না ৷ চারের দশকে ফিরলেন কলকতায়, এ বার তাঁর পাখির চোখ শুধুই চলচ্চিত্র ৷
advertisement
advertisement
‘পথের পাঁচালী’-র মুক্তির বছর অর্থাৎ ১৯৫৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল মৃণাল সেনের প্রথম ছবি ‘রাতভোর’ ৷ তার তিন বছর পরে ‘নীল আকাশের নীচে’৷ তবে প্রথম দুই ছবির সাহায্যে সমালোচক বা দর্শক, কোনও মহলেই দাগ কাটতে পারেননি তরুণ পরিচালক ৷ রাজনৈতিক বার্তার জন্য ‘নীল আকাশের নীচে’-এর উপরে নেমে এসেছিল নিষেধাজ্ঞার খাঁড়াও ৷
advertisement
আন্তর্জাতিক পরিচিত পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ছয়ের দশক পর্যন্ত ৷ ১৯৬০ সালে হল-এ এল ‘বাইশে শ্রাবণ’ ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলা জুড়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সামনে অসহায় এক দম্পতির জীবনযুদ্ধ মৃণালকে নিয়ে এল আন্তর্জাতিক মঞ্চের আলোয় ৷ তাঁর ছবির মধ্যে এটাই প্রথম দেখানো হয়েছিল বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে ৷ প্রদর্শিত হয়েছিল লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ৷
advertisement
বনফুলের উপন্যাসের সেলুলয়েড রূপ ‘ভুবন সোম’ তাঁকে এনে দেয় তিনটি জাতীয় পুরস্কার ৷ শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ ছবি বিভাগের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান উৎপল দত্ত ৷ এই ছবি দিয়ে শুরু ৷ এর পর ‘কোরাস’, ‘মৃগয়া’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘ক্যালকাটা ৭১’, ‘খারিজ’, ‘পুনশ্চ’, ‘আকাশকুসুম’, ‘অন্তরীন’, ‘ওকা উড়ি কথা’, ‘পরশুরাম’, ‘এক দিন প্রতিদিন’, ‘খণ্ডহর’, ‘পদাতিক’-জাতীয় পুরস্কার-সহ একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছে তাঁর সৃষ্টি ৷
advertisement
তাঁর স্রষ্টা সত্ত্বার পিছনে অন্যতম অনুঘটক তাঁর স্ত্রী গীতা ৷ সত্যজিতের ছবিতে বিজয়া রায়ের ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য, তেমনই মৃণালের ছবির বিভিন্ন ক্ষেত্রে থাকত গীতার নীরব উপস্থিতি ৷ বিয়ের পরে গীতা অভিনয় আর না করলেও স্ত্রীর পরামর্শ এবং সমালোচনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন মৃণাল ৷ চিত্রনাট্য, সেট, অভিনয় থেকে কুশীলবদের পোশাক-সব দিকে গীতার তীক্ষ্ণ নজর থাকত ৷ বহু সাক্ষাৎকারে সে কথা জানিয়েছেন পরিচালক নিজেই ৷
advertisement
‘ইন্টারভিউ’, ‘ক্যালকাটা ৭১’, ‘পদাতিক’-মৃণালের এই তিন সৃষ্টি এখনও অবধি নাগরিক জীবন নিয়ে ছবি-তালিকার শীর্ষে ৷ তাঁর ছবিতে কলকাতা শুধুই কল্লোলিনী বা তিলোত্তমা নয় ৷ বরং, প্রকট হয়ে ওঠে বেকারত্ব, দারিদ্র, অনাহার-সহ এই শহরের বিভিন্ন ক্ষত ৷
তাঁর ছবি, শর্ট ফিল্ম, তথ্যচিত্র-সহ বিভিন্ন কাজ বহু বার সমালোচিত হয়েছে এর কৃষ্ণ বিষয়ের জন্য ৷ কিন্তু নিজের দৃষ্টিভঙ্গী বা জীবনদর্শন থেকে সরে এসে পপুলিস্ট হতে চাননি তিনি ৷ দীর্ঘ কর্মজীবনে একে একে নামের পাশে যোগ হয়েছে ‘দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার’, ‘পদ্মভূষণ’, ‘কমান্দ্যর দ্য অর্দ্র দ্য আর্ত্ এ দ্য লের্ত্র’-এর মতো সম্মান ৷
advertisement
২০০২ সালে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর শেষ ছবি ‘আমার ভুবন’৷ নিজেই বলতেন প্রতি ছবি শেষ হওয়ার পর তিনি ধ্বংস হয়ে যান ৷ আবার জেগে ওঠেন পরের ছবির জন্য ৷ তাঁর ছবিগুলিও দর্শককে জাগিয়ে তোলে সুখের দিবাস্বপ্ন থেকে৷ টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনে বাস্তবের মাটিতে ৷
‘লার্জার দ্যান লাইফ’ নয় ৷ তাঁর ছবির বিষয় ‘লাইফ’৷ মানুষের জীবন ও তার চর্যাকেই লালনপালন করে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এনেছিলেন নতুন যুগ ৷ তবে ঋত্বিকের মতো তিনিও যেন অধিকাংশ বাঙালির কাছে সত্যজিতের মেঘে ঢাকা তারা ৷ আমরা তিন জনের ঘরানার স্বকীয়তা ভুলে ব্যস্ত থাকি কফির কাপে তুফান তোলা তুলনায়৷ তর্ক থামলে হয়তো মনে পড়বে দু’ বছর পরে মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকীও আসছে ৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
চ্যাপলিন পাল্টে দিলেন স্বপ্ন, মৃণালের কাছে স্ত্রী গীতার পরামর্শের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম
Next Article
advertisement
দুর্গাপুর স্টেশনে গেলে আর ফিরতে ইচ্ছে হবে না! ২৪ ঘণ্টা মিলবে পানীয় জল আর অফুরন্ত খাবার
দুর্গাপুর স্টেশনে গেলে আর ফিরতে ইচ্ছে হবে না! ২৪ ঘণ্টা মিলবে পানীয় জল আর অফুরন্ত খাবার
  • দুর্গাপুর স্টেশনে ২৪ ঘণ্টা ভেন্ডিং মেশিনে স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় পাওয়া যাবে

  • UPI-দিয়ে সহজেই পেমেন্ট করা যাবে

  • দুর্গাপুর স্টেশন স্মার্ট, পরিষ্কার এবং যাত্রী-সহযোগী স্টেশন হয়ে উঠছে

VIEW MORE
advertisement
advertisement