Milkha Singh : ডাকাত হওয়া হল না, বেটির বাড়িতে সাজানো আছে মিলখার দেওয়া নীল পাগড়ি

Last Updated:

প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে শুরু করেছিলেন ৷ পরে টের পেলেন এর নাম, জীবনযুদ্ধ ৷ যে যুদ্ধ মিলখা সিংয়ের (Milkha Singh) জন্য চিত্রনাট্যে লেখা ছিল জীবনের শুরুতেই ৷

বাড়ি থেকে স্কুলের দীর্ঘ পথ হাঁটতেন না ৷ ছুটতেন ৷ তখন অবশ্য জানতেন না একে বলে ‘দৌড়’ ৷ চোখের সামনে রক্তের হোলিখেলায় লুটিয়ে পড়তে দেখেছিলেন বাবা, মা, এক ভাই এবং দুই বোনকে ৷ প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে শুরু করেছিলেন ৷ পরে টের পেলেন এর নাম, জীবনযুদ্ধ ৷ যে যুদ্ধ মিলখা সিংয়ের (Milkha Singh) জন্য চিত্রনাট্যে লেখা ছিল জীবনের শুরুতেই ৷
১৯২৯ সালের ২০ নভেম্বর যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই গোবিন্দপুর এখন পঞ্জাবের মুজঃফরগড়ে ৷ ১৫ জন ভাইবোনের মধ্যে একজন হয়ে দিন কাটছিল গ্রামের ধুলোয়, গমের খেতে ৷ তাও অল্প কিছু বছরের জন্য ৷ দেশভাগের আগেই মারা যান আট জন ভাইবোন ৷
এক দিদি সংসার করছিলেন দিল্লিতে ৷ তাঁর কাছেই ঠাঁই হল অনাথ মিলখার ৷ কিন্তু ঠাঁইনাড়া হতে হল কিছু দিনের মধ্যেই ৷ বিনা টিকিটে রেলসফরে মিলখাকে যেতে হল তিহাড় কারাগারে ৷ গয়না বেচে ভাইয়ের মুক্তির ব্যবস্থা করলেন দিদি ৷ কিন্তু তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ভাইয়ের থাকার মেয়াদ আর বাড়াতে পারলেন না ৷
advertisement
advertisement
ক্রমে শরণার্থী শিবিরবাসী তরুণ মিলখা ঠিক করে নিয়েছিলেন তাঁর জীবনের লক্ষ্য—তিনি ডাকাত হবেন ৷ সে ইচ্ছে পূর্ণ হল না দাদা মলখনের দৌলতে ৷ ভাইকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে পরামর্শ দিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদানের ৷
সেখানেও বিধিবাম ৷ পর পর তিন বার ব্যর্থতা ৷ ১৯৫১ সালে, চতুর্থ বারের প্রচেষ্টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রবেশাধিকার পেলেন মিলখা ৷ সেকেন্দরাবাদে ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারে শুরু হল কাজ ৷ জীবনের অভিধানে প্রথম বার পা রাখল ‘অ্যাথলেটিক্স’ শব্দ৷ নতুন নিযুক্তদের মধ্যে বাধ্যতামূলক দৌড়ের ইভেন্টে তিনি ষষ্ঠ স্থান পেলেন ৷ তাঁর প্রতিভা ধরা পড়ল জহুরির চোখে ৷
advertisement
শুরু হল তালিম৷ জীবনের দৌড়ে জুড়ল নতুন গতি ৷ মিলখা শুনলেন এই গতি নাকি দেশকে পদকও এনে দিতে পারে ! শৈশবে স্মৃতিকে পাখির চোখ করে দৌড়তেন তিনি ৷ চারপাশে সব অদৃশ্য হয়ে যেত, মিলখা দৌড়তেন সেই গোবিন্দপুর গ্রামে অথবা গ্রাম থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ৷
দৌড়তে দৌড়তেই ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিক্সের সুযোগ ৷ ফিরেছিলেন পদকশূন্য কণ্ঠ এবং অভিজ্ঞতায় ভরপুর হৃদয় নিয়ে ৷ মেলবোর্নেই আলাপ আমেরিকান অ্যাথলিট চার্লস জেনকিন্সের সঙ্গে ৷ সেই আলাপ অনুরণিত হয়েছিল অনুপ্রেরণা রূপে ৷
advertisement
এর পর ১৯৫৮-য় টোকিয়ো এশিয়ান গেমসে দু’টি সোনা ৷ স্বর্ণপদক এল ১৯৫৮ কমনওয়েলথ গেমসেও ৷ দেশবাসীর স্বপ্ন জমাট হচ্ছিল ১৯৬০-এর রোম অলিম্পক ঘিরে৷ কিন্তু ৪০০ মিটার ফাইনালের শেষে মিলখার নামের পাশে ‘ট্র্যাজিক নায়ক’-বিশেষণ ৷ সেকেন্ডের ভগ্নাংশের অমোঘ হিসেবে অধরাই থেকে গেল পদক ৷ দেশবাসীর চূর্ণ স্বপ্নে কি প্রশমন হতে পেরেছিল ১৯৬২ এশিয়ান গেমসের একাধিক স্বর্ণপদক?
advertisement
অলিম্পিক্সে ‘উড়ন্ত শিখ’-এর স্বপ্নভঙ্গের ক্ষত কিন্তু প্রশমিত হয়নি ৷ যদিও তাঁর জীবনে পাওয়ার পাল্লা ভারী হয়েছে ক্রমশ ৷ পঞ্জাব সরকারের ক্রীড়া দফতরের অধিকর্তা হয়েছিলেন মিলখা ৷ আকৈশোর ছিন্নভিন্ন পরিবার দেখতে অভ্যস্ত চোখদুটির সামনে ঘরসংসার নিপুণ হাতে সাজিয়েছিলেন স্ত্রী নির্মল৷ এক সময় মহিলাদের জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়ক নির্মলের সঙ্গে প্রথম আলাপ ১৯৫৫ সালে শ্রীলঙ্কায় ৷ পারিবারিক বাধা পেরিয়ে পরিণয় আরও ৭ বছর পর ৷ তিন মেয়ে এবং এক ছেলে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পরও দায়িত্ব শেষ বলে মনে করেননি তাঁরা ৷ ১৯৯৯ সালে দত্তক নেন কার্গিল যুদ্ধে নিহত শহিদের সাত বছর বয়সি এক সন্তানকে ৷
advertisement
দান করে দিয়েছেন অর্জিত পদক ৷ এখন সে সব সাজানো আছে পাতিয়ালা স্পোর্টস মিউজিয়ামে ৷ ১৯৬০ সালের অলিম্পিক্সে ব্যবহৃত জুতোও তিনি দিয়ে দিয়েছিলেন চ্যারিটি শো-এ ৷ নিজের বায়োপিকের জন্যেও মাত্র ১ টাকা সাম্মানিক নিয়েছিলেন মিলখা ৷ শর্ত দিয়েছিলেন ছবি থেকে লভ্যাংশের বড় অংশ দিতে হবে মিলখা সিং চ্যারিটেবল ট্রাস্টে ৷ যে ট্রাস্টের উদ্দেশ্য দরিদ্র ও অভাবী খেলোয়াড়দের সাহায্য করা ৷
advertisement
তিনি নিজেও অকুণ্ঠ সাহায্য পেয়েছেন? সে ক্ষেত্রে বলতেন স্ত্রীর কথা ৷ নির্মল থেকে তাঁর আদরের ‘নিম্মি’ ৷ মিলখা নিজে ম্যাট্রিকুলেশনের পর আর পড়তে পারেননি ৷ তাঁর চার সন্তান যে উচ্চপ্রতিষ্ঠিত, তার কৃতিত্ব স্ত্রী নির্মলার ৷ বলতেন মিলখা ৷ কারণ তিনি সময় দিতে পারতেন না পরিবারে ৷ তাঁর সঙ্গে নির্মলার বয়সের ব্যবধান ছিল ৯ বছরের ৷ অতিমারিতে বিদায় নেওয়ার দিকে দুজনের মাঝে ফারাক কয়েক দিনের ৷ বেশিদিন একা থাকতে হল না কাউকেই ৷
পার্থিব জীবনের বাইরে অন্য ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে আবার দেখা হয়েছে দু’জনের ৷ সেখানে অপেক্ষা করে আছেন বেটি কাথবার্টও ৷ অস্ট্রেলীয় এই অ্যাথলিটের কথা স্ত্রীর কাছে গোপন করেননি মিলখা ৷ ১৯৫৬-র মেলবোর্ন অলিম্পিক্সে অষ্টাদশী বেটি প্রেমে পড়েছিলেন মিলখার রঙিন পাগড়ির ৷ মিলখা নিজের হাতে বেটির মাথায় পরিয়ে দিয়েছিলেন নীল পাগড়ি ৷ পরে ক্ষীণ হয়ে এসেছিল যোগাযোগ ৷ ২০০৬ সালে মেলবোর্নে কমনওয়েলথ গেমসের সময় মিলখা ফোন করেছিলেন বেটির বাড়িতে ৷ ফোন ধরেছিলেন বেটির ছেলে ৷ চিনতে পেরেছিলেন মিলখাকে ৷ জানিয়েছিলেন, বেটি চলে গিয়েছেন ক্যানসারে ৷ তবে তাঁদের বাড়িতে রাখা আছে সেই নীল পাগড়ি ৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
Milkha Singh : ডাকাত হওয়া হল না, বেটির বাড়িতে সাজানো আছে মিলখার দেওয়া নীল পাগড়ি
Next Article
advertisement
মৃত্যুর আগে লাস ভেগাস থেকে কী পোস্ট করেছিলেন অনুনয় সুদ? লিখেছিলেন, 'এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না...'
মৃত্যুর আগে লাস ভেগাস থেকে কী পোস্ট করেছিলেন অনুনয় সুদ? লিখেছিলেন,'এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না’
  • মৃত্যুর আগে লাস ভেগাস থেকে কী পোস্ট করেছিলেন অনুনয় সুদ?

  • লিখেছিলেন, 'এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না...'

  • অনুনয় সুদের শেষ পোস্ট দেখে নিন

VIEW MORE
advertisement
advertisement