''অলকানন্দা তৈল সামান্য মাখিলেই চুল ওঠে'' তেলের সার্টিফিকেটে রসিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- Published by:Rukmini Mazumder
- news18 bangla
Last Updated:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সেন্স অফ হিউমার'-ছিল অতুলনীয়! অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতি সুমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি থেকে একটা ঘটনা শুনলেই বোঝা যায়...
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সেন্স অফ হিউমার'-ছিল অতুলনীয়! অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতি সুমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি থেকে একটা ঘটনা শুনলেই বোঝা যায়...
ঠাকুরবাড়ির এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন ক্ষিতীশবাবু। চমৎকার মানুষ! এসেছিলেন যশোর থেকে। ঠাকুরবাড়ির কোনও ছেলের বিবাহসূত্রে কোনও আত্মীয়ের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হিসেবে। তারপর, সেখানেই পাকাপোক্তভাবে রয়ে গিয়েছেন। রোজ সন্ধ্যায় এসে অবন ঠাকুরের পা মাসাজ করতেন, অদ্ভুত সব গল্প শোনাতেন আর বাড়ির টুকিটাকি ফরমায়েশ খাটতেন।
তবে, ১১ মাঘ, ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠার দিন, ভীষণ ব্যস্ত থাকতেন ক্ষিতীশবাবু। এদিন ঠাকুরবাড়িতে বিশাল অনুষ্ঠান হত। সন্ধ্যায়, দ্বারকানাথ ঠাকুরের দালানের দুই বাড়ির (৫নম্বর ও ৬নম্বর) দুই দেউড়ি গাড়িতে গাড়িতে ছয়লাপ হয়ে যেত। এবার কোন গাড়িটা কোথায় দাঁড়াবে, কোথা দিয়ে যাবে-আসবে এ'সবের ব্যবস্থা করতেন ক্ষিতীশবাবু।
advertisement
advertisement
এহেন ক্ষিতীশবাবু একবার দেশীয় নানা ভেষজ দিয়ে তৈরি করলেন চুলে মাখার সুগন্ধি তেল। নাম দিলেন 'অলকানন্দা হেয়ার অয়েল'। নিজের ঘরে বসেই এই তেল বানাতেন। একপাশে বেশ বড় একটা দাঁড়িপাল্লা স্ট্যান্ডে ঝুলত! সেই তেল বোতলে ভরে, তার গায়ে এক সুন্দরী মহিলার চুলখোলা চেহাড়ার লেবেল এঁটে, ঝাঁকামুটের মাথায় চাপিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পাঠাতেন।
advertisement
এবার তেলের বিক্রি বাড়ারে হবে! নইলে লাভ হচ্ছে না! কাজেই, দ্বারস্থ হলেন অবন ঠাকুরের কাছে! একটা সার্টিফিকেট দিতে হবে! অবন ঠাকুর বললেন, আগে রবিকাকা (অবন ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এই নামেই ডাকতেন)-র কাছ থেকে সার্টিফিকেট আনতে হবে, তারপর তিনি তার সার্টিফিকেট দেবেন।
ক্ষিতীশবাবু ছুটলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। ধরলেন সার্টিফিকেটের জন্য। রবি ঠাকুর জানতে চাইলেন 'অবন' কিছু দিয়েছে কীনা। ক্ষিতীশবাবু কাঁচুমাচু মুখে উত্তর দিলেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, আগে রবিঠাকুরের থেকে লিখে নিয়ে যেতে, তারপর উনি নিজের সার্টিফিকেট দেবেন।
advertisement
শোনামাত্র, রবিঠাকুর একটা কাগজ টেনে, খসখস করে বাংলায় সার্টিফিকেট লিখে দিলেন। সার্টিফিকেটটা পড়ে তো ক্ষিতীশবাবু মহা খুশি। ছুটতে ছুটতে অবন ঠাকুরের কাছে গিয়ে জানালেন, ''কর্তামশায় দিয়ে দিয়েছেন, এবার আপনি দিলেই হয়। কারণ, মাঘ উৎসবের আগেই ছাপিয়ে ফেলতে হবে।''
সেই সময় অবন ঠাকুর হয় ছবির, নয় লেখার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সেটা পাশে সরিয়ে রেখে বললেন, ''দেখি কী লিখেছে রবিকাকা।''
advertisement
ক্ষিতীশবাবু কাগজটা বাড়িয়ে দিলেন। সেটা পড়ে মুখ টিপে মুচকি হাসলেন অবন ঠাকুর। সেখানে লেখা ছিল, ''অলকানন্দা তৈল সামান্য মাখিলেই চুল ওঠে--শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।''
তা হলেই ভাবুন, কতটা সেন্স অফ হিউমার থাকলে একজন মুহূর্তের মধ্যে, দ্ব্যর্থভাষায় এমন কথা লিখতে পারেন!
ক্ষিতীশবাবু অবশ্য সেটা বুঝতে পারেননি। যখন অবন ঠাকুর জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ''রবিকাকা যে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তা বুঝেছ কি?'' ক্ষিতীশবাবু উত্তরে হাসিমুখে বলেছিলেন, ''উনি তো চমৎকার সার্টিফিকেট দিয়েছেন!'' অবন ঠাকুর বললেন, ''চমৎকার ঠিকই, কিন্তু এর দুটো মানে হয়।''
advertisement
অতশত বোঝেননি ক্ষিতীশবাবু। বরং বেশ করে মাথা চুলকেছিলেন। এবং রবি ঠাকুর আর অবন ঠাকুরের সার্টিফিকেট দিয়ে হ্যান্ডবিল তৈরি করে, ১১ মাঘ, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে করতেই 'একবার মাখিলেই চুল ওঠে-- শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর' বলতে বলতে গাড়ির ভিতরে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন সেই হ্যান্ডবিল।
view commentsLocation :
First Published :
May 08, 2020 2:35 PM IST

