জঙ্গলে ঘেরা কালিকাপুর জমিদার বাড়িতে আজও কলা বৌ আসেন পালকি চড়ে
Last Updated:
সে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগের কথা। বর্ধমান রাজের দেওয়ান তখন পরমানন্দ রায়। ইজারায় হাতে এল বিরাট জঙ্গল।
#কালিকাপুর: এবার পুজোয় যাবেন নাকি? গুপ্তধনের সন্ধানে? বাক্সবোঝাই মোহর কিন্তু মিলবে না। মিলবে সাবেক জমিদারির শারদীয়া আবেগ। তাই বা কম কী! পুজোর দিনগুলোয় আজও আলো ঝলমল কালিকাপুর জমিদারবাড়ি। বিদেশ-বিভুঁই ছেড়ে ঠাকুরদালান জমজমাট আট থেকে আশির ভিড়ে। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের কালিকাপুর জমিদার বাড়ি। মহুয়া, শালের জঙ্গল ঘেরা গ্রামে ছড়ানো ছিটানো বসত। জঙ্গলের মাঝেই সাত মহলা জমিদার বাড়ি। সামনে মানানসই পেল্লায় নাটমন্দির। প্রবীণ স্থাপত্যে সাদা-লালের নতুন পোঁচ। মা আসছেন যে!
সে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগের কথা। বর্ধমান রাজের দেওয়ান তখন পরমানন্দ রায়। ইজারায় হাতে এল বিরাট জঙ্গল। সেই জঙ্গল কেটেই তৈরি হল বসত। তৈরি হল পুকুর, বাগান, সাত মহলা প্রাসাদ। আর হল দুর্গামণ্ডপ।
রায় পরিবারের সদস্য সুবীরকুমার রায় বললেন সে যুগের কথা, ‘‘ওঁরা আদতে ছিলেন মৌফিয়ার বাসিন্দা। সেখানে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না। বন্যার প্রকোপ বাড়ছিল। তাই কালিকাপুরে চলে আসেন। প্রথমে দুর্গামণ্ডপ তৈরি করেন। তারপর সাত ছেলের জন্য সাত মহলা বাড়ি।’’ আট পুরুষের ঐতিহ্যে জাঁকজমক কমেছে। পরম্পরা কিন্তু আজও অটুট। কালিকাপুর জমিদার বাড়িতে দশভূজার আবাহন শুরু হয় মহালয়ার সাতদিন আগেই। উৎসব চলে টানা পনেরো দিন। সুবীরকুমার বললেন, ‘‘ষষ্ঠী থেকে নবমী, চারদিন ছাগ বলি হয়। পুজো হয় ষোড়শ উপাচারে। কলাবউ আসে পালকিতে চড়ে। সমস্ত নিয়মই নিষ্ঠা ভরে মানা হয়।’
advertisement
advertisement
দুর্গাপুজোয় যাত্রাপালা মাস্ট ছিল কালিকাপুর জমিদার বাড়িতে। পালা দেখতে ভেঙে পড়ত গ্রাম। বাড়ির মেয়েরা যাত্রা দেখতেন দোতলার আড়াল থেকে। সেসব এখন অতীত। তবে আজও পুজোর সময় ভিড় বাড়ে জমিদার বাড়ির আনাচ-কানাচে। পরবাস ছেড়ে ঘরে ফেরেন পরমানন্দের উত্তরসুরীরা। যাত্রাপালা না হলেও আসর মাতে অন্তাক্ষরীর সুরে, নাটকের নেশায়। এই আমেজ গুপ্তধনের থেকে কম কী!
advertisement
তৈরি হচ্ছন মা ৷ নিজস্ব চিত্র ৷
Location :
First Published :
October 03, 2018 10:45 PM IST