Independence Day 2021: স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অজানা ইতিহাসের নাম সাবিত্রী দেবী! ভয় উপেক্ষা করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছিলেন অনায়াসে

Last Updated:

সেদিন শহিদ জননী মাতঙ্গিনী হাজরার নামের সঙ্গে আর একজনের নাম উল্লেখের দাবি রাখে ইতিহাস। তিনি হলেন সাবিত্রী বালা দেবী।

#তমলুক: ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলন বা অগাস্ট আন্দোলন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ভারতের নানা প্রান্তে ব্রিটিশ বিরোধী এই আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে। গান্ধীজীর এই আন্দোলন গো‌টা ভারতে সর্বাত্মক চেহারা নেয়। বাদ যায়নি বাংলা। বাংলায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গর্জে উঠেছিল বহু মানুষ। স্বাধীনতার পূণ্যভূমি অবিভক্ত মেদিনীপুরের মাটিতে এই আন্দোলন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নেয়। অবিভক্ত মেদিনীপুরের মাটি বরাবরই স্বাধীনতার ইতিহাসে অন্য়তম গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলস্বরূপ তমলুক মহাকুমায় জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠাতা পায়। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখায় সারা ভারতবাসীকে।
১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানা দখল করার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। অসম সাহসী, নির্ভীক একদল সংগ্রামীদের মিছিল “বন্দে মাতরম” ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে চলেছিল আর সামনে ছিল ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা। এই পতাকা যাঁর বলিষ্ঠ হাতে এগিয়ে যাচ্ছিল তিনি ছিলেন ৭৩ বছরের অতি দরিদ্র এক বৃদ্ধা। যাঁকে তখন সকলে গান্ধীবুড়ি নামেই চিনতেন। আসল নাম মাতঙ্গিনী হাজরা।তিনি সুদৃঢ় পদক্ষেপে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছেন, এগিয়ে চলেছে স্বাধীনতার মিছিল। শাসক ব্রিটিশের পুলিশ বাহিনী হুঙ্কার দিতে শান্তিপ্রিয় মিছিলের দিকে গুলি চালিয়েছিল সেদিন। তিন-তিনটে বুলেটে সেদিন সেই বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরার প্রাণ কেড়ে নেয়। ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত হয়েছিল স্বাধীনতাকামী বহু মানুষ।
advertisement
সেদিন শহিদ জননী মাতঙ্গিনী হাজরার নামের সঙ্গে আর একজনের নাম উল্লেখের দাবি রাখে ইতিহাস। তিনি হলেন সাবিত্রী বালা দেবী। সাবিত্রী বালা দে। কে এই সাবিত্রী দেবী? কী তাঁর অবদান ইতিহাসে?
advertisement
ইংরেজ পুলিশের গুলিতে যখন সেদিন অসংখ্য দেশপ্রেমিক রক্তাক্ত হয়ে, আহত হয়ে মাটিতে পড়ে একফোঁটা জলের জন্য কাতরাচ্ছেন তখন সেই আর্তি শুনে স্থানীয় এক গ্রাম্য মহিলা, যার নাম সাবিত্রী দেবী, তিনি সমস্ত মৃত্যু-ভয়কে উপেক্ষা করে ছুটে গিয়েছিলেন তমলুক থানার কাছে শঙ্করআড়া পোলেতে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকা আহত-রক্তাক্ত বিপ্লবী দেশপ্রেমিকদের মুখে তুলে দিয়েছিলেন পিপাসার জল। নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন সেই দেশমাতৃকার সন্তানদের সেবা-শুশ্রুষায়। আহতদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্তও তিনি করেছিলেন।
advertisement
তিনি যখন এই কাজগুলি করছেন, তখন ইংরেজের দলদাস, পদলেহনকারী পুলিশের দল সেদিন রাইফেল উঁচিয়ে সাবিত্রী দেবীকে ভয় দেখিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার হুঙ্কার-হুমকিও দিয়েছিল বারবার। এমনকি ইংরেজ পুলিশ বাহিনী বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে আসে। সাবিত্রীদেবী বাড়ি থেকে ঝাঁটা ও বঁটি হাতে ইংরেজ বাহিনীর দিকে এগোতে থাকেন। এবং তারঁ সঙ্গে আরও অনেক সাহসীনী বঁটি ও ঝাঁটা হাতে ইংরেজ বাহিনীকে ধাওয়া করে। অকুতোভয় সাবিত্রীদেবীকে তারা সেদিন দমাতে পারেনি। তাঁর সেই রণংদেহী মূর্তি দেখে ইংরেজ পুলিশ বাহিনীও সেদিন থমকে গিয়েছিল।
advertisement
বীরাঙ্গনা সাবিত্রী দেবী ছিলেন তথাকথিত সমাজচ্যুত এক বারাঙ্গনা নারী। এই ঘটনা সেদিন সারা বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষকে বিস্মিত করেছিল। একজন অবহেলিত, অপমানিত, উপেক্ষিত, গ্রাম্য দরিদ্র মহিলা কীভাবে বীরাঙ্গনায় রূপান্তরিত হন, তার প্রামাণ্য নিদর্শন দেখে। এই প্রসঙ্গে সেই যুগের বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন, যুগান্তর, বসুমতী, আনন্দবাজার পত্রিকা প্রমুখ পত্রিকাতে। পত্রিকাগুলিতে সাবিত্রী দেবীর বীরগাথা নিয়ে চারনকবির একটি কবিতাও প্রকাশ হয়। সেটি হল--
advertisement
"বিয়াল্লিশের সেপ্টেম্বর,তারিখ উনত্রিশে
মাতঙ্গিনী-সহ বিপ্লবীদের বুকে গুলি মারে পুলিশে।।
গুলিবিদ্ধ মাতঙ্গিনী হাতে ত্রিবর্ণ, রক্তে মাটি ভাসে,
অসংখ্য বিপ্লবী আহত,মৃত্যু যাতনায় কাতরায় তার পাশে।।
আহতদের সেবার তরে দৌড়ে আনে জল,
বারাঙ্গনা সাবিত্রী তার সে দৃঢ় মনোবল,।।
পুলিশ দেখায় ভয় গুলিভরা বন্দুক উঁচিয়ে,
সঙ্গে সঙ্গে সেই নারী তেজেতে ওঠেন যে চেঁচিয়ে।।
প্রতিবাদী জেহাদ জানায় তার বঁটি-টি ধরিয়া,
advertisement
সেবা তিনি করিবেনই বলে হয়েছিলেন মরিয়া।।
সে নাহি মানে সৈন্যদল,তারে রুখিতে না পারে,
কালী-দুর্গা,আমিনা-রূপী নারীশক্তির কাছে বৃটিশ হারে।।
বারাঙ্গনা সাবিত্রী, সে বীরাঙ্গনা জানি,
শ্রদ্ধা সহকারে, প্রনামে-সালামে তারে ধন্য ধন্য মানি।।"
যদিও এহেন বীরাঙ্গনা নারীর শেষ জীবন ছিল অত্যন্ত কষ্টের। চরম দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে কাটে তাঁর জীবন। একটি হতশ্রী মাটির ঘরে, মাটির উনুন, ভাঙা তোবড়ানো একটি অ্যালুমিনিয়ামের থালা, শতচ্ছিন্ন কাপড় জামা, কোনওদিন খেতে পেতেন, আবার কোনওদিন ছিল নিরম্বু উপোস। এই ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবন। সবশেষে সবার চক্ষুর আড়ালে থাকা সেই বীরাঙ্গনা নারী একদিন নীরবে চলে গেলেন চিরদিনের বিদায় নিয়ে ১৯৯২ সালে।
advertisement
*তথ্যসূত্র: তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার, রাধাকৃষ্ণ বাড়ী।
সৈকত শী
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
Independence Day 2021: স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অজানা ইতিহাসের নাম সাবিত্রী দেবী! ভয় উপেক্ষা করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছিলেন অনায়াসে
Next Article
advertisement
West Bengal Weather Update: বৃষ্টি বাড়বে পাহাড়ে ! দক্ষিণবঙ্গে আগামী কয়েকদিন কেমন থাকবে আবহাওয়া? জেনে নিন
বৃষ্টি বাড়বে পাহাড়ে ! দক্ষিণবঙ্গে আগামী কয়েকদিন কেমন থাকবে আবহাওয়া? জেনে নিন
  • বৃষ্টি বাড়বে পাহাড়ে !

  • দক্ষিণবঙ্গে আগামী কয়েকদিন কেমন থাকবে আবহাওয়া?

  • জেনে নিন আবহাওয়ার আপডেট

VIEW MORE
advertisement
advertisement