EXCLUSIVE: মহালয়ায় মা দুর্গার ফোন, আড্ডায় দূরদর্শনের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়

Last Updated:

চ্যানেলে চ্যানেলে মহালয়া, সঙ্গে স্ক্রিপ্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কী ভাবছেন বাঙালির ‘জীবন্ত দুর্গা’ সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়

দুর্গা এখন কৈলাস নয় টরেন্টোবাসী ৷ বাঙালির মহালয়ার ভোর মানেই বাঙালির কানে বাজে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্র আর চোখে ভাসে মহিষাসুরমর্দিনী রূপী সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পর্দায় তাঁর আগমনেই দেবীপক্ষের শুভারম্ভ ৷ ২০১৪ সালে শেষ দুর্গা রূপে দেখা গিয়েছে তাঁকে তবু একাধিক চ্যানেলের প্রতিযোগিতার ভিড়ে আজও ট্রেন্ডিং সংযুক্তার ‘মহিষাসুরমর্দিনী’৷ ১৪ বছর ধরে দূরদর্শনের দুর্গা ছিলেন তিনি ৷ মহালয়ার ঠিক আগে বাঙালির‘জীবন্ত দুর্গা’র সঙ্গে নস্ট্যালজিয়ার রোলারকোস্টারে এলিনা দত্ত ৷ আড্ডায় উঠে এল দূরদর্শনের প্রথম মহালয়া তৈরির গল্প থেকে বর্তমানে চ্যানেলে চ্যানেলে মহালয়ার বিবর্তনের প্রসঙ্গও ৷
প্রশ্ন- ক্লাসিক্যাল ডান্সার থেকে দূরদর্শনের প্রথম দুর্গা, শুরুটা হল কিভাবে?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: শুরুর কথা বলতে গেলে ফিরতে হবে ১৯৯৪-এ ৷ দূরদর্শন সেবার প্রথম সিদ্ধান্ত নেয় এবার ডান্স-থিয়েটার হিসেবে উপস্থাপনা করা হবে মহিষাসুরমর্দিনী ৷ সেই মতো চলছিল প্রস্তুতি সঙ্গে নতুন মুখের খোঁজ ৷ মনে আছে, তখন ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা দিতে বেরোচ্ছি হঠাৎ গুরু গোবিন্দন কুট্টির ফোন, বিকেলে শাড়ি পরে আসতেই হবে কলামণ্ডলমে ৷ কোনও আপত্তি কাজ করল না ৷ পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও গুরুজির কথা মতো হাজির হলাম নির্ধারিত সময়ে ৷ পৌঁছে দেখলাম কলামণ্ডলের বহু ছাত্র-ছাত্রী, আমার বন্ধুরা সেখানে উপস্থিত ৷ বেশ কয়েকজন ভদ্রলোক ও একজন মহিলা তাদের সঙ্গে কথা বলে কোনও এক প্রোডাকশনের জন্য তাদের নির্বাচন করছেন ৷ আমার দিকে কেউ তাকিয়েও দেখছে না ৷ আমি তখন ঘরের এককোণায় বসে ৷ সব শেষ করে তারা যাবার সময় গুরু মিসেস কুট্টি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে দুর্গার জন্য কাকে বাছলেন?’ওনারা আঙুল তুলে সোজা আমাকে দেখিয়ে বললেন, ‘ওই যে, ও হবে দুর্গা ৷’আমি কিন্তু তখন জানতামও না কিসের জন্য আটির্স্ট নির্বাচন চলছিল ৷ ওনারা আমার সঙ্গে কথাও বলেননি ৷ তবে ওইদিনই ছিল শুরু ৷ এরপর টানা মাস দু’য়েক কঠিন পরিশ্রম ও ওয়ার্কশপের পর দু-তিন সপ্তাহ ধরে চলে শ্যুটিং ৷ ডিরেক্টর-প্রোডিওসার শমির্ষ্ঠা দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে তপন সিনহার অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর সনৎ মোহান্তের নির্দেশনায় ডাঃ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির স্ক্রিপ্টে তৈরি হল ডান্স-থিয়েটার হিসেবে দূরদর্শনের প্রথম মহিষাসুরমর্দিনী ৷ পরবর্তীকালে প্রোডিওসার-ডিরেক্টর কল্যাণ ঘোষের হাত ধরে এগোয় দূরদর্শনের এই মহালয়ার অনুষ্ঠান ৷
advertisement
advertisement
Dance productions sisir studio 004
প্রশ্ন- তখন এত উন্নত গ্রাফিক্স, সাউন্ড এফেক্টস ছিল না৷ কাজটা কতটা কঠিন ছিল?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: এখনকার তুলনায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল ৷ ডিজিট্যালি টিভি তখন এত উন্নত ছিল না ৷ ক্রিয়েটিভ এডিটর বা ডিরেক্টরদের অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হত ৷ এই যে দুর্গার দশটা হাত এখন গ্রাফিক্সেই খুব সহজভাবে দেখানো সম্ভব, কিন্তু আমাদের সময় বাকি আটটা মাটির হাত দড়ি দিয়ে পিঠে বেঁধে দেওয়া হত এবং সেটা নিয়েই পারফর্ম করতে হত ৷ ওই ভারি ভারি আটটা হাত নিয়ে পারফর্ম করতে গিয়ে গায়ে রীতিমতো কালশিটে পড়ে যেত ৷ টানা বেশিক্ষণ শ্যুটও করা যেত না ৷ এছাড়া দেবতারা দুর্গাকে অস্ত্র দান করছেন এই দৃশ্যটি সম্পাদনা করতে গিয়ে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতেন ক্রিয়েটিভ এডিটররা ৷ এখন টেকনোলজির কল্যাণে এটা জলভাত ৷ হয়ত টেকনোলজিক্যাল সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কিছু দেখাতে চাইলেও হয়ত দেখানো সম্ভব হত না ৷
advertisement
প্রশ্ন-এত বছর দুর্গার ভূমিকায় এত বিশ্বাসযোগ্যভাবে পারফর্ম করার পর অনেকেই আপনাকে ‘জীবন্ত দুর্গা’ই মনে করেন, এ ব্যাপারে কী বলবেন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: নিজের কাজের প্রশংসা শুনতে তো ভালোই লাগে ৷  প্রথমবার দুর্গা করার পর রাস্তায় বেরলে লোকে চিনতে পারলে প্রণাম করতে আসত ৷ এখনও অনেক দিদার বয়সী বৃদ্ধারা আমাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে আসে ৷ বিব্রত হই, বাধা দিই, কিন্তু সবাই আমাকে বলে এটা নাকি আমার কাজের সার্থকতা, যে চরিত্রটাকে এত বিশ্বাসযোগ্য করতে পেরেছি ৷ আমি শুধু তখন নিজের কাজটা সম্পূর্ণ ১০০ শতাংশ দিয়েছি ৷ সেই পরিশ্রমের বদলে এত বছর ধরে এত লোকের ভালবাসা পাব ভাবিনি ৷ জানতো, মহালয়ার শ্যুটিংয়ের ওই কয়েকদিন আমি নিষ্ঠা ভরে সমস্ত আচার পালন করতাম ৷ মেডিটেশন করতাম ৷ কোনও আমিষ খাবার খেতাম না ৷ ওই কদিন আমার জন্য বাবা-মাও নিরামিষ খেতেন ৷ ভিতর থেকে ওই আধ্যাত্মিক যোগ তৈরির জন্য এটা দরকার ছিল ৷
advertisement
IMG_20180705_160315_961
প্রশ্ন-এখন শুধু দূরদর্শন নয়, চ্যানেলে চ্যানেলে মহিষাসুরমর্দিনী৷ সেই অনুষ্ঠানগুলো দেখেন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: নিয়ম করে দেখা হয় না ৷ তবে ফেসবুক, ইউটিউবের দৌলতে পরে কিছু কিছু অনুষ্ঠান দেখা হয়েই যায় ৷
প্রশ্ন-TRP প্রতিযোগিতায় জিততে মহিষাসুরমর্দিনী নিয়ে এখন অনেকরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে ৷ দর্শক হিসেবে এখনকার মহালয়ার বিবর্তন বা উপস্থাপনা নিয়ে কী মত আপনার?
advertisement
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তো পরিবর্তনই কাম্য ৷ আমাদের যে বিপুল পরিমাণ পুরাণের গল্পের ভাণ্ডার রয়েছে, সে সম্পর্কে হোয়াটসঅ্যাপ, পাবজিতে ব্যস্ত নতুন প্রজন্মের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে নতুনভাবে পুরনো প্রোডাকশনগুলো উপস্থাপনা করা যেতেই পারে ৷ আমার তো মনে হয় এখনকার উন্নত টেকনোলজি ব্যবহার করে পুরাণের গল্পগুলোকে আরও বেশি আকর্ষণীয়ভাবে বলা সম্ভব ৷ কিন্তু সেজন্য আসল গল্পের সঙ্গে আপোস করার দরকার পড়ে না ৷ নতুন কনসেপ্ট তৈরি করে পুরাণের মূল গল্পটাকেই পরিবর্তন করে ফেললে তাহলে আর সেটা পুরাণ রইল না ৷ যেটা অনেকক্ষেত্রেই হয়ত এখন হচ্ছে ৷ প্রত্যেকের গল্প বলার নিজস্ব একটা দৃষ্টিভঙ্গি থাকতেই পারে কিন্তু তা যদি মূল গল্পের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করে তাহলে সেটা আর আসল মহিষাসুরমর্দিনী থাকল না ৷ সেক্ষেত্রে উল্লেখ না করলেই হল যে আমরা চণ্ডীর উপস্থাপনা করছি বা মহিষাসুরমর্দিনী করছি ৷ নাহলে আমাদের নতুন প্রজন্ম তো ভুল জিনিস শিখবে ৷ তারা আসল গল্পটাই জানবে না ৷ আর কস্টিউমের কথা বলতে গেলে আমি বলব, মহিষাসুরমর্দিনীর মতো দেবদেবীকে নিয়ে কোনও প্রোডাকশন হলে খুব সতর্কভাবে পোশাক নির্বাচন করা উচিত ৷ মাথায় রাখা উচিত, এখানে কোনও সুন্দরী নারী শরীর নয় বরং দেবতার মাতৃরূপকে দেখানো হচ্ছে ৷ উর্বশীকে দুর্গার সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে তার চারিত্রিক রূপটা তো আলাদাভাবে বোঝানো সম্ভব নয় ৷ পুরাণে তো কস্টিউম ও অ্যাক্সসেসারিস চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৷ যেমন,  মু্ন্ডমালা ও বাঘছাল ছাড়া কী কালীকে মানাবে?এই বিষয়গুলিকে অবহেলা করলে দর্শকের কাছে আসল জিনিসটা পৌঁছনো সম্ভব হবে না ৷
advertisement
sanjukta banerjee
প্রশ্ন-২০১৯-এ পৌঁছেও এত মহালয়ার অনুষ্ঠান দেখার পরও, শুধু পুরনো নয়, নতুন প্রজন্মের অধিকাংশই আপনাকেই বাঙালির দুর্গারূপে স্বীকৃতি দিয়েছে, কেমন লাগে?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: এত ভালবাসার জন্য দর্শকদের ধন্যবাদ ৷ তাদের ভালবাসাই আমাকে পরিচিতি দিয়েছে ৷ দর্শকদের থেকে পাওয়া কমেন্টস, প্রশংসা, সমালোচনাকে মাথায় রেখেই আমি এখনও সেইভাবে আমার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাই ৷ দর্শকদের অনুরোধেই দূরদর্শনের অনুমতি নিয়ে আমার অভিনীত মহিষাসুরমর্দিনী ইউটিউবে আপলোড করা  হয়েছে ৷ এমনকি আজ সকালেও ওই কাজ নিয়ে রিভিউ কমেন্টস এসেছে আমার কাছে ৷ এত বছর পর ডিজিট্যাল মাধ্যমেও লোকে এটা দেখবে, পছন্দ করবে ভাবিনি ৷ ক্ল্যাসিক্যাল ডান্সার হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পারফর্ম করতে যাই, কিন্তু সেখানেও আমার কাছে মহালয়ার বিশেষ অংশ পারফর্ম করার অনুরোধ এখনও আসে ৷
advertisement
প্রশ্ন-এখন আবার যদি দুর্গার ভূমিকায় পারফর্ম করার অফার আসে?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রথমেই আমি স্ক্রিপ্ট পড়ব ৷ টিআরপি-এর কারণে কোনও আপোস করা হচ্ছে কিনা তা জেনে নিয়ে তবেই আমি সিদ্ধান্ত নেব ৷ তারপরও কেউ যদি মনে করেন, মা দুর্গার চরিত্রের জন্য আমাকেই দরকার তাহলে অবশ্যই ভেবে দেখব ৷
প্রশ্ন-মহিষাসুরমর্দিনী-তে মা দুর্গার ভূমিকায় আপনাকে নতুন মুখ নির্বাচন করতে দিলে কাকে বাছবেন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: এটা বলা খুব মুশকিল ৷ অনেক শিল্পী আছেন ৷ প্রত্যেকেরই প্রতিভা আছে ৷ সেখানে আমি কী করে একজনকে বেছে নেব! তাছাড়া আমি অনেকদিন দেশের বাইরে, এখনকার শিল্পী, অভিনেত্রীদের প্রত্যেকের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই ৷ আমি বিশ্বাস করি কোনও শিল্পী সে অভিনেত্রী হোক বা নৃত্যশিল্পী, রূপটাই মানদণ্ডের শেষ কথা নয় ৷ দুর্গার চরিত্রটাকে ভিতর থেকে বুঝতে হবে ৷ সেটা যে পারবে সেই দুর্গার জন্য একদম পারফেক্ট ৷
sanjukta banerjee2
প্রশ্ন- তবুও অধিকাংশ বাঙালি যেমন আপনাকেই বারবার দুর্গারূপে দেখতে চান, তেমনি আপনি কাকে দুর্গা ভূমিকায় দেখতে চাইবেন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: জয়াপ্রদা ৷ ওনাকে দেখে আমার মনে হয় মহিষাসুরমর্দিনী রূপে খুব ভাল মানাবে ৷
প্রশ্ন- মহিষাসুরমর্দিনীতে দুর্গা না হলে কোন চরিত্র বেছে নেবেন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: মহিষাসুর ৷ আমার অসুরের ভূমিকায় অভিনয় করতে খুব ইচ্ছে করে ৷ আসলে সবসময় একটা ভিলেনের চরিত্র ফুটিয়ে তোলাটা খুব চ্যালেঞ্জিং ৷
প্রশ্ন- এতো গেল মহালয়ার প্রসঙ্গ, বিদেশে দুর্গাপুজোর পাঁচদিন এখন কেমনভাবে কাটে?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: এখন তো পুজোর পাঁচদিনই কানাডা বা আমেরিকার অন্যান্য জায়গায়তে শো নিয়ে ব্যস্ত থাকি ৷ আমার ডান্স অ্যাকাডেমির ছাত্র-ছাত্রীরাও পারফর্ম করে ৷ তাছাড়া পুজোর কটাদিন আমার ছেলে ও পরিবারের সঙ্গেই থাকি ৷ একসঙ্গে অঞ্জলি দিই, বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোই ৷ বিদেশ হলেও অনেক মজা হয় ৷
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
EXCLUSIVE: মহালয়ায় মা দুর্গার ফোন, আড্ডায় দূরদর্শনের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement