Dipankar Dey : সত্যজিতের কাছে নিজেই চান কাজ, ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত ‘ভয়ঙ্কর দে’ নামেও
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
- news18 bangla
Last Updated:
কলকাতা : একটাই মাত্র স্যুট ৷ সেটাই পরে পা রেখেছিলেন বিশপ লেফ্রয় রোডে বিখ্যাত সেই বাড়ির কাঠের সিঁড়িতে৷ তাও নিজের গরজের থেকে বন্ধুবান্ধবদের উৎসাহ ছিল অনেক বেশি ৷ বিজ্ঞাপনের আপিসে কাজ করা দীপঙ্কর (Dipankar Dey) তখন অভিনয় করেন অফিসে ও ক্লাবে ৷ সেটুকু অভিজ্ঞতা আর অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে পৌঁছেছিলেন সত্যজিতের বাসভবনের দোরগোড়ায় ৷ অভিনেতা নিজেই পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় নিজেই নিজের হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছিলেন ৷
কিন্তু দেখা বুঝি আর হল না ৷ ডোরবেল পর্যন্ত পৌঁছনর আগে সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই দেখলেন উপরের দরজা খুলে গেল, দু’জন বাইরে বেরিয়ে এলেন ৷ কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েই তাঁদের চলে যেতে বললেন সত্যজিৎ ৷ তাঁদের পরিচালকের পছন্দ হয়নি ‘সামীবদ্ধ’-র কাস্টিংয়ে ৷ তাঁদের সঙ্গে তরতরিয়ে নেমে এলেন দীপঙ্করও ৷ পরে বলেছিলেন, ওই কণ্ঠস্বরে চলে যাওয়ার নির্দেশ কানে ঢোকার পর ওটাই ছিল ‘রিফ্লেক্স অ্যাকশন!’
advertisement
অথচ তার আগের দিনই সাহসে ভর করে ডাইরেক্টরি দেখে ফোননাম্বার খুঁজে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছেন স্বয়ং সত্যজিতের কাছ থেকে৷ তারপরও দেখা না করে ফিরে যাবেন! এটা ভেবেই পায়চারি করছিলেন বাড়ির নীচে ৷ তার পর কী মনে করে আবার উপরে উঠলেন ৷ দরজা খুলে দিলেন পরিচালকই ৷ আগেই তিনি ফোনে বলেছিলেন, সব কুশীলব ঠিক হয়ে গিয়েছে ‘সীমাবদ্ধ’ ছবির জন্য ৷ তার পরও দেখা করতে চেয়েছিলেন দীপঙ্কর ৷
advertisement
advertisement
দীপঙ্করকে প্রথম বার দেখার পর কথাবার্তা চলার মধ্যেই স্কেচ করতে থাকেন সত্যজিৎ ৷ তার পর মুখ তুলে জিজ্ঞাসা করেন, ‘একটা ছোট চরিত্র আছে৷ চলবে?’
চলবে? মানে! নবাগত দীপঙ্কর তো হাতে স্বর্গ পেলেন ৷ প্রথম ছবিতেই অভিনয় সত্যজিতের পরিচালনায়৷ ১৯৭১-এ মুক্তি পায় ‘সীমবদ্ধ’৷ বরুণ চন্দর সহকারীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দীপঙ্কর দে ৷
advertisement
এর পর আর পিছনে ফিরে দেখতে হয়নি ৷ ‘জনঅরণ্য’, ‘বাঞ্ছারামের বাগান’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘সুবর্ণগোলক’ এবং ‘পরমা’—পর পর বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে তিনি ধরা দিয়েছিলেন নায়ক থেকে চরিত্রাভিনেতার বিভিন্ন শেডে ৷ তাঁর ছবির তালিকায় ভাস্বর হয়ে আছে ‘অমরকণ্টক’, ‘গণশত্রু’, ‘শাখাপ্রশাখা’, ‘আগন্তুক’, ‘উনিশে এপ্রিল’, ‘উৎসব’, ‘তিতলি’, ‘আবহমান’ ও ‘হেমলক সোসাইটি’ ৷

advertisement
কেরিয়ারের শীর্ষেই নায়ক থেকে সরে গিয়েছিলেন খলনায়কের ভূমিকায় ৷ কেন? দীপঙ্কর নিজে বলেছিলেন, তপন সিনহার ‘বাঞ্ছারামের বাগান’-এর পর শুরু হয়েছিল এই নতুন ট্রেন্ড ৷ সে সময় উৎপল দত্তর মৃত্যুর পর একটা শূন্যতা দেখা দিয়েছিল বাংলা ছবির খলনায়কের অভিনেতার ক্ষেত্রেও ৷ ফলে টানা বেশ কয়েক বছর একটানা খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে গিয়েছেন দীপঙ্কর ৷
advertisement
বড় পর্দার পাশাপাশি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন টেলিভিশনেও ৷ সাদাকালো দূরদর্শন থেকে রঙিন উপগ্রহ চ্যানেলের মেলা, দীপঙ্কর দে অপ্রতিরোধ্য ৷ একইসঙ্গে চলেছে নাটকে অভিনয়ও ৷ বিদেশে এক বার নাটকে অভিনয় করতে গিয়েই আলাপ দোলন রায়ের সঙ্গে ৷ তার আগেও অবশ্য দু’জনের পরিচয় ছিল কল শো সূত্রে ৷ কিন্তু সে সময় সম্পর্ক আবদ্ধ ছিল ‘সিনিয়র জুনিয়র’-এর গণ্ডিতেই ৷
advertisement
প্রথম আলাপের আগেই অবশ্য দোলন জানতেন তিনি আসলে ‘ভয়ঙ্কর দে’৷ ইন্ডাস্ট্রিতে এতটাই মহিলাপ্রীতির পরিচয় তাঁর! অকপট দীপঙ্কর নিজেও ৷ দোলন নিজে দেখেছেন বিদেশে দীপঙ্করকে ঘিরে আছেন মহিলারা ৷ গাইছেন, ‘তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার’ ৷ তার পরেও বয়সের ব্যবধান নস্যাৎ করে প্রেম এসেছে ৷ প্রেমের জন্যই অকপট দীপঙ্কর ৷ প্রতারণা করতে চাননি কাউকে ৷ স্ত্রী এবং সন্তানদের ছেড়ে ঘর বেঁধেছেন দোলনের সঙ্গে ৷ দীর্ঘ সিকি দশকের লিভ ইনের পর বিয়ে করেছেন গত বছর ৷ অপবাদ, নিন্দা উড়িয়ে বলেছেন, ‘আমরা যা বেশ করেছি৷’
দোলনের কণ্ঠও বেজেছে একই সুরে ৷ ‘ছেঁড়া তার’ নাটকে একসঙ্গে অভিনয় থেকে শুরু সম্পর্ক৷ সেই ছেঁড়া তারই বেঁধে দিয়েছে তন্ত্রী ৷ জন্মদিনে দোলন উপহার পেয়েছেন দীপঙ্করের লেখা কবিতা ৷ সব কবিতা সঙ্কলিত করে বই প্রকাশ করেছেন দোলন, নাম ‘জ্যোৎস্নায় ফেরিওয়ালা’৷
এখনও তিনি ফিরি করে চলেছেন জ্যোৎস্নার স্বপ্ন ৷ সোমবার, পেরিয়ে গেলেন ৭৭ বছর বয়স পূর্তির জন্মদিন ৷ আজকের জামশেদপুরে ১৯৪৪-এ জন্মগ্রহণের পর নাম রাখা হয়েছিল ‘টিটো’ ৷ জেনারেল টিটোর নামানুসারে ৷ বাস্তবেও ইন্ডাস্ট্রির প্রিয় টিটো দা’র নিয়মানুবর্তিতা সত্যিই পাল্লা দেয় সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার সঙ্গে ৷ তাঁর মতো অকপট, বর্ণময় চরিত্র বিনোদনের যে কোনও দুনিয়াতেই বিরল ৷
Location :
First Published :
July 05, 2021 9:05 PM IST