#কলকাতা: ট্রেনে যাচ্ছিলেন, কাগজ পড়তে পড়তে। সেই সময়েই কেউ একজন তাঁর ছবি তুলে পোস্ট করে দেয় ফেসবুকে। বাঙালির ঐতিহ্য রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়ে সেদিন হেদুয়ার বাসিন্দা, বিএসএনএলের কর্মী সোমনাথ ভদ্রকে ভাইরাল করে দেন নেটিজেনরা। আগে থেকেই তাঁকে অনেক লোকে ‘রবীন্দ্রনাথের মতো দেখতে’ হিসাবে চিনতেন। এবার যেন ঝড় উঠল তাঁকে নিয়ে। সোমনাথ বাবু বলছেন, ‘রাস্তায়, ট্রেনে, বাসে, এখন লোকে দেখলেই রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ টানে। কিন্তু আমি ইচ্ছা করে কবিগুরুকে নকল করছি এমন নয়। প্রাকৃতিক নিয়মেই আমার চেহারা হয়েছে তাঁর মতো। ভাল লাগে, এমন একজন মানুষের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে যেতে দেখে সত্যিই বড় আনন্দ হয়। ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রনাথের গানের মধ্যে বড় হয়েছি। বাড়িতে তখন রেডিও ছিল, নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতাম। তারপর আস্তে আস্তে কেমন করে যেন জড়িয়ে গেলাম সবকিছুর সঙ্গে। ধীরে ধীরে আমার জীবনে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনু্ষ্ঠান আমাকে আরও কাছে নিয়ে গেল গুরুদেবের। এমন চুল দাড়ি আমার আজীবন ছিল, তাও কিন্তু নয়। আমাকে রামকৃষ্ণ মিশনের এক শীর্ষ মহারাজ একদিন বলেছিলেন দাড়ি না কাটতে। তারপর থেকে পাড়ার লোক, আত্মীয় পরিজনের কথা না শুনেই আমি দাড়ি রেখেছি। চুল বড় করেছি। প্রকৃতির টানেই আমাকে আজ এমন দেখতে হয়েছে।’
কিন্তু এ যে একেবারে অবিকল! কী করে এতটা মিল হল। সত্যিই জানেন না সোমনাথ বাবু। আজীবন সরকারি চাকুরে, ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবন, সেখানে স্বাভাবিক কারণে আর পাঁচজনের মতো তাঁর ভিতরেও রবীন্দ্র অনুরাগ হয়ত ছিলই। কিন্তু বাইরের চেহারায় এভাবে রবীন্দ্রনাথ উঁকি দেবেন, তা কে জানত? ধীরে ধীরে তাঁর রবীন্দ্রনাথ লুক তাঁকে অন্য পরিচয় দিয়েছে। এখন আমন্ত্রণ মেলে, সম্বর্ধনাও পেয়েছেন অনেক। লোকে রাস্তায় দেখলেই ভিড় করে আসে। সোমনাথ বাবু বলছিলেন, ‘বসন্ত উৎসবে রবীন্দ্রভারতীতে যাওয়ার পর প্রথম আধঘণ্টা আগে সবার আব্দার মেনে আমাকে ছবি তুলতে হয় সকলের সঙ্গে। এবারেও তাই হয়েছে। একদিন হল কী জানেন, ট্রেনে চড়েছি, রেলের কর্মীরা আলাদা যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে তাঁরা বললেন, রবীন্দ্রনাথ আমাদের সঙ্গে যাবেন।’ বলতে বলতেই হেসে ওঠেন সোমনাথ বাবু।
এখন আর তাঁকে সোমনাথ নামে বেশি লোকে ডাকে না। আসল পরিচয় আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে তাঁর। এখন তাঁকে সবাই চেনে রবীন্দ্রনাথ নামে। কারণ, তাঁকে অবিকল কবিগুরুর মতো দেখতে। সোমনাথ নামটা লোকে ভুলে যাচ্ছে, না, তা নিয়ে বিশেষ আফশোস নেই সোমনাথ বাবু। তিনি বললেন, ‘এ জীবনে সবই পেয়েছি। এত সন্মান, লোকের আদর, আর কী চাই। আমার কোনও দুঃখ নেই। আনন্দেই আছি। আর এই পরিচয়টা আমাকে গর্ব করার সুযোগ করে দিয়েছে।’
ছবি: সোমনাথ ভদ্র
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।