১৪ বছর পর সন্ন্যাসীর বেশে ফিরে এসেছিলেন বর্ধমানের মহারাজা প্রতাপচাঁদ, কিন্তু মানল না পরিবার
- Published by:Simli Raha
- news18 bangla
Last Updated:
SARADINDU GHOSH
#বর্ধমান: রাজা ফিরে এসেছেন। কিন্তু তিনি আসল নাকি নকল? রাজা গড়গড় করে অতীতের সব কথা বলে গেলেও তাতে আমল দিতে নারাজ বর্তমান শাসকরা। তবে কি ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন রাজা? রাজা আসল না জাল প্রমাণ করতে মামলা উঠল হুগলি কোর্টে। ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর সাক্ষ্য দিলেন রাজার বিরুদ্ধে। জাল ঘোষিত হলেন রাজা প্রতাপচাঁদ। কিন্তু বর্ধমানের বাসিন্দাদের কাছে তিনিই ছিলেন আসল প্রতাপচাঁদ। বর্ধমান রাজ পরিবারের সেই কাহিনী আজও রহস্যে মোড়া। আজও বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফেরে প্রতাপচাঁদের কথা।
advertisement
তখন বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদ। তাঁর আট স্ত্রী থাকেন রাণিমহলে। তেজচাঁদের পর কে রাজা হবেন তা নিয়ে রাজবাড়ির অন্দরে রাজনীতি তুঙ্গে। রাজার একের পর এক বিয়ে হলেও সন্তান একটিই। প্রতাপচাঁদ। লোককথা, আত্মীয় পরাণচাঁদ কাপুর প্রথমে নিজের বোন ও পরে মেয়ের সঙ্গে মহারাজ তেজচাঁদের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতাপচাঁদ ছাড়া রাজার দ্বিতীয় কোনও সন্তান হয়নি। নিয়ম মাফিক, তেজচাঁদের পর রাজা হলেন প্রতাপচাঁদ। ১৮১৬ সাল থেকে ১৮২০ সাল পর্যন্ত চার বছর শাসন করেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন সাহসী রাজা। প্রজাদের কাছে তিনি বিশেষ প্রিয় ছিলেন। কিন্তু রাজবাড়ির অন্দরে তলে তলে তাঁকে সরানোর চক্রান্ত চলছিল অনেক আগে থেকেই। হঠাৎই একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন রাজা।
advertisement
advertisement
বর্ধমানের সেই রাজবাড়ি ৷ নিজস্ব চিত্র ৷
ইতিহাসবিদ রঙ্গনকান্তি জানা বলেন, চারিত্রিক দোষ দিয়ে তাঁকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল। সেই গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে তিনি সাধক কমলাকান্তের পরামর্শে হিমালয়ে চলে যান বলে অনেকে মনে করেন। আবার অনেকের মতে, তাঁর অজান্তে তাঁর শরীরে বিষ ঢুকিয়ে তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়।
advertisement
ইতিহাসের গবেষক সর্বজিত যশ জানান, প্রতাপ নিরুদ্দেশ হওয়ার পর পরানচাঁদ কাপুরের প্রভাব অনেকটাই বাড়ে রাজবাড়ির অন্দরে। তাঁর পুত্রকে দত্তক নেন তেজচাঁদ। সেই দত্তকপুত্র মহাতাবচাঁদ সিংহাসনে বসেন। ১৪ বছর পর সন্ন্যাসীর বেশে ফিরে আসেন প্রতাপচাঁদ। গোলাপবাগ অঞ্চলে তাঁকে প্রথম দেখা যায়। তিনি ফিরে আসায় আনন্দিত হয়ে ওঠেন প্রজারা। বর্ধমান জুড়ে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। খবর পৌঁছয় রাজবাড়িতে। প্রমাদ গোনেন বর্তমান শাসকরা। লেঠেল পাঠিয়ে প্রতাপকে তাড়ানোর চেষ্টা হয়। বর্ধমান শহরের পাশে একটি শিব মন্দিরে আশ্রয় নেন প্রতাপ। পরবর্তীকালে সেই এলাকার নাম হয় বাজেপ্রতাপপুর। প্রতাপকে রাজবাড়ি থেকে হঠানোর জন্য দেওয়ান নিযুক্ত করা হয়। সেই দেওয়ান থাকতেন আজকের দেওয়ানদিঘিতে। সেই দেওয়ান আবার বিজয় ও রাম নামে দুই লেঠেল রাখেন। তাঁরা যেখানে থাকতেন সেই এলাকার আজকের নাম বিজয়রাম।
advertisement
বর্ধমানের মহারাজা প্রতাপচাঁদ ৷ নিজস্ব চিত্র ৷
অবশেষে ইংরেজ বাহিনীর সহায়তায় কালনায় ভাগীরথীর তীর থেকে প্রতাপচাঁদকে আটক করা হয়। রাজবাড়ি থেকে তাঁকে নকল প্রতাপ ঘোষণা করা হয়েছিল। এই প্রতাপকে জাল প্রমাণ করতে প্রচুর অর্থ খরচ করেছিল রাজ পরিবার। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রতাপের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেন। অনেকেরই মতে, প্রচুর অর্থ ও ব্যবসায়িক কারণে প্রতাপের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন তিনি। প্রতাপের দুই স্ত্রীকে পরাণচাঁদ আটকে রাখেন রাজবাড়িতে। তাঁদের সাক্ষ্য দিতে যেতে দেওয়া হয়নি। প্রতাপচাঁদ নানান প্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে জাল ঘোষণা করা হয়। বাকি জীবন কলকাতায় কাটান প্রতাপচাঁদ।
view commentsLocation :
First Published :
December 16, 2019 12:15 PM IST



