Explained: শরীর দুর্বল থাকলে বাড়তে পারে ব্লাড সুগার লেভেল, লাইফস্টাইল বদলান আজ থেকেই
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
Blood Sugar: একটুতেই সর্দি লেগে যাওয়া, জ্বর বা কমন কোনও ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার পিছনেও অনেকসময় ডায়াবেটিস থাকতে পারে।
#নয়াদিল্লি: সময় যত এগোচ্ছে, পাল্টাচ্ছে আমাদের লাইফস্টাইল। পাল্টাচ্ছে খাদ্যাভ্যাস, পাল্টাচ্ছে বিভিন্ন অভ্যাসও। তার উপর অতিমারী যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। ওয়ার্ক ফ্রম হোমে কাজের চাপ বেড়েছে অনেকেরই। রাতের পর রাত জেগে কাজ করা বর্তমানে অনেকটাই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে প্রায় সকলের কাছে। বাড়ি থেকে কাজ করার মানসিক চাপও কম নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যার মধ্যে ডায়বেটিস অন্যতম।
ডায়াবেটিস যেহেতু এখন নতুন কোনও রোগ নয় এবং প্রায় সকলেই এর সঙ্গে পরিচিত তাই এই নিয়ে আতঙ্ক অনেকটাই কম সকলের মধ্যে। তবে, এই রোগের বিষয়ে খুঁটিনাটি জানেন সেই মানুষের সংখ্যাও কম।
বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন ডায়াবেটিস শুধুই ব্লাড সুগার লেভেল বাড়ায় ও কমায়। কিন্তু এই ক্রনিক ডিজিস শরীরের আরও অনেক ক্ষতি করতে পারে। যেহেতু ক্রনিক ডিজিস তাই এর হাত ধরে শরীরে আসে অন্যান্য অনেক রোগ।
advertisement
advertisement
আরও পড়ুন- Coronavirus: বিটা, গামা, ডেল্টা, ওমিক্রন... পরবর্তী করোনাভাইরাস প্রজাতি আসবে?
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগলে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিস, নার্ভের সমস্যা ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও একটুতেই সর্দি লেগে যাওয়া, জ্বর বা কমন কোনও ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার পিছনেও অনেকসময় ডায়াবেটিস থাকতে পারে।
তাই চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। নিয়ম মানলে, স্বাভাবিক লাইফস্টাইলে বাঁচলে এই রোগ সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিসের জন্য হওয়া আনুসাঙ্গিক শারীরিক সমস্যাও ম্যানেজ করা যেতে পারে।
advertisement
যে কোনও শারীরিক সমস্যা থেকে সেরে উঠতে সময় লাগায় ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস থাকলে যে কোনও সমস্যায় শরীর দ্রুত এবং স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ হতে পারে। সমস্যা থেকে সেরে উঠতেও সময় লাগে অনেক বেশি সময়। এর কারণ যখনই শরীর দুর্বল থাকে তখনই স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ গ্লুকোজ তৈরি করে। যার ফলে ব্লাড সুগার লেভেলে তারতম্য ঘটে। যদি না সমস্যা বোঝা যায় তা হলে হতে পারে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (DKA) বা হাইপারস্মোলার হাইপারগ্লাইসেমিক সিন্ড্রোম (HHS)-এর মতো সমস্যা। এই সব সমস্যা শরীরকে আরও দুর্বল করে এবং সেরে উঠতে সময় লাগায়।
advertisement
কেন বাড়ে ব্লাড সুগার লেভেল?
কারও যদি ব্লাড সুগার থাকে, তা হলে শরীরের যে কোনও সমস্যা ব্লাড সুগার বাড়াতে পারে। এবিষয়ে Aakash Healthcare Dwarka-র এন্ডোক্রাইনোলজির কনসালটেন্ট ডা. চন্দন কুমার মিশ্র বলেন, যখন কোনও ডায়াবেটিক রোগী অন্য কোনও অসুখে ভোগেন বা কোনও সমস্যা তৈরি হয় শরীরে তখন স্ট্রেসের কারণে শরীর কাউন্টার রেগুলেটরি হরমোন উৎপন্ন করে।
advertisement
আরও পড়ুন- নতুন আতঙ্ক নিয়ে হাজির লাসা জ্বর, ঘটছে মৃত্যুও! জানুন এই জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন রোগ সারাতে স্টেরয়েডের মতো ওষুধের ব্যবহার করা হয়। যা রোগ সারাতে সাহায্য করে ঠিকই কিন্তু অন্য দিকে বাড়িয়ে দেয় ব্লাড সুগার লেভেলও। এক দিকে অসুস্থ অন্যদিকে স্টেরয়েডের ফলে ব্লাড সুগারে বিরাট তারতম্যও অনেক সময় লক্ষ্য করা যায়। ইনসুলিনের চাহিদা শরীরে বেড়ে যায় এবং এই ইনসুলিন নিঃসরণেই সমস্যা হতে শুরু করে। এটি শরীরের ফ্যাট বার্ন করতে শুরু করে ফুয়েল হিসেবে এবং এর ফলে কিটোনস তৈরি হয় যা বেশি পরিমাণে ব্লাড টক্সিক তৈরি করে।
advertisement
কীভাবে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে?
লাইফস্টাইল ঠিক রাখলে, খাওয়া দাওয়া ঠিক রাখলে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে Sir HN Reliance Foundation Hospital-এর এন্ডোক্রাইনোলজির কনসালটেন্ট অ্যান্ড সেকশন কোঅর্ডিনেটর ডা. ডেভিড শ্যান্ডি বলেন, যাঁদের সবেমাত্র ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে অর্থাৎ ডায়াবেটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে,তাঁরা সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ব্লাড সুগার লেভেল ঠিক নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। তাঁর কথায়, ডায়েট, ব্যায়াম, ওষুধ ও মনিটরিং এই ৪টি ঠিক রাখলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে।
advertisement
এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি নিয়ম মানার কথা বলছেন চিকিৎসকরা -
১) খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও ওজন নিয়ন্ত্রণ - একসঙ্গে বেশি পরিমাণে খাওয়ার পরিবর্তে বারে বারে অল্প অল্প খেতে হবে। কারণ একসঙ্গে অনেকটা খাবার খাওয়া রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এর পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ ও মেদ কমানোও প্রয়োজন। বিশেষ করে অ্যাবডোমেনের অংশে মেদ কমাতে হবে। কারণ এই অংশে মেদ ইনসুলিনে তারতম্য ঘটায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত বাড়তি ওজনের জন্যই হয়ে থাকে।
২) প্রত্যহ শরীরচর্চা - বাড়িতে বসে কাজ করার ফলে অনেকেরই হাঁটাচলা বা বাইরে বেরোনো হচ্ছে না। এতে ডায়াবেটিস হতে পারে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করলে, ব্যায়াম করলে এবং অ্যাকটিভ থাকলে ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমতে পারে। নাচ, অ্যারোবিকস, সাঁতার বা যোগ ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি দিনে ৩০ মিনিট অন্তত হাঁটলেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
৩) স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া - জাঙ্ক ফুড, প্রসেসড ফুড, মিষ্টিজাতীয় খাবার ও মিষ্টি যে কোনও পানীয় থেকে দূরে থাকতে হবে। ফ্যাটজাতীয় খাবার, খুব নুন আছে এমন খাবারও এড়িয়ে যাওয়া ভালো। এর পরিবর্তে চিকিৎসকরা বাড়িতে বানানো খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। পাশাপাশি, কার্বোহাইট্রেড আছে এমন খাবার খেলে ভালো। তাই ওটস, সবুজ শাক- সবজি ডায়েটে রাখতে হবে।
৪) ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকতে হবে - ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যেস থাকলে ডায়াবেটিসের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। যদি কারও ডায়াবেটিস থাকে, তা হলে এই অভ্যেস ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এই অভ্যেস বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে ঘন ঘন জল পানের প্রবণতা বাড়াতে হবে।
৫) ফ্যাড-ফুড থেকে দূরে থাকতে হবে - অনেক সময় লো-কার্বোহাইট্রেড যুক্ত খাবার সাময়িকভাবে আমাদের শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে। লো-কার্বোহাইট্রেড যুক্ত খাবার খাওয়ার জন্য প্রচার চললেও দীর্ঘ সময়ে এই নিয়মে চললে কিন্তু শরীরে খারাপ হতে পারে ও ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। তাই শরীরে কতটা কার্বোহাইট্রেডের প্রয়োজন, তা জানার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামার্শ নিতে হবে।
৬) জল পান ও ফাইবারজাতীয় খাবার - ঘন ঘন জল পান করতে হবে। ফাইবার আছে এমন খাবার খেতে হবে। তা হলে ইনসুলিনের মাত্রায় সেভাবে পরিবর্তন হবে না।
Location :
First Published :
February 17, 2022 5:13 PM IST