বার্ড ফ্লু থেকে করোনা, কেন গত ২০ বছরে চিন থেকেই মারাত্মক রোগগুলির উদ্ভব হয়েছিল?
- Published by:Pooja Basu
Last Updated:
সার্স (SARS), এভিয়ান ফ্লু (Avian Flu), সোয়াইন ফ্লু (Swine Flu)এবং করোনাভাইরাস (Coronavirus) চিন থেকেই ছড়ায় বলে মনে করা হয়।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন বিপর্যস্ত বিভিন্ন দেশ, তখন আবারও এই প্রশ্নটি জোরালো হচ্ছে যে করোনাভাইরাস চিনের উহান ল্যাব (Wuhan Lab) থেকেই ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পও (Donald Trump) প্রকাশ্যে তা বলতেন, তবে এখন বিশ্বের অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীও এটা বলতে শুরু করেছেন। সর্বশেষ প্রতিবেদনে উহানের ল্যাব সম্পর্কে প্রকাশিত তথ্য অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর। অন্য দিকে এই অদৃশ্য ভাইরাস এতটা কী ভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা দেখে গোটা বিশ্বও অবাক। আমেরিকা বিগত ২০ বছরে নানা ভাবে প্রশ্ন তুলেছে চিনের বিরুদ্ধে-কেন চিন থেকেই বিশ্বের পাঁচটি বড় রোগ ছড়িয়েছিল? এই রোগগুলিতে আক্রান্ত হয়ে একটা বড় সংখ্যক মৃত্যুও ঘটেছিল। এই রোগগুলির মধ্যে চারটি ভাইরাস সার্স, এভিয়ান ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু এবং করোনাভাইরাস চিন থেকেই ছড়ায় বলে মনে করা হয়। যদিও সোয়াইন ফ্লুর চিন থেকে উদ্ভব হয়নি, তবে এটাও ঠিক যে বিগত বছরগুলিতে চিনের মাংস বাজারগুলি নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। সার্স, এভিয়ান ফ্লু এবং এখন করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বকে বিপন্ন করেছে। চিনের খাদ্য অভ্যাস সম্পর্কেও বহু বার প্রশ্ন উঠেছে। আর বন্যপ্রাণী ও বিষাক্ত প্রাণী হত্যা করে খাওয়ার নজিরও মিলেছে।
সার্স
সার্স (Sars) মহামারীটি ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে চিন থেকে ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষিণ চিনের গুয়াংডং এলাকায় প্রথম ভাইরাসটি পাওয়া যায়। বহু দেশে হাজার হাজার মানুষ এই মহামারী দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিল এবং অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায় এতে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল হংকংয়ে । ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) এর মতে এই মহামারীতে মৃত্যুর হার ছিল ৯.৬ শতাংশ। এই রোগটি বিশ্বের প্রায় ৩৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। করোনাভাইরাসও সার্সেরই প্রজাতি। উল্লেখ্য যে, আজও সার্স ভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিন বা ওষুধ তৈরি হয়নি। সার্স-এর সময় বিশেষজ্ঞরা জানায় যে, চিনের মাংসের বাজারে বিভিন্ন ধরণের প্রাণীর মাংস পাওয়া যায়। সুতরাং, নতুন ভাইরাসগুলি সেখান থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রামক ভাইরাস হওয়ার কারণে এগুলি সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নিশানায় রয়েছে বিশেষ করে চিনের সেই বাজারগুলি যেখানে বিষাক্ত প্রাণীদের মাংস বিক্রি হয়।
advertisement
এভিয়ান ফ্লু বা বার্ড ফ্লু
এভিয়ান ফ্লু (Avian flu) বা বার্ড ফ্লু (Bird flu) একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা পাখি থেকে পাখিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগটি সংক্রামিত মুরগি বা অন্যান্য পাখির মাধ্যমে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত মুরগির বিভিন্ন প্রজাতির প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে এই রোগটি মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসটি মুখ, চোখ এবং নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে ।
advertisement
advertisement
এই মহামারীটির অনেকগুলি রূপ দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বের কাছে ধরা পড়েছিল। তবে ১৯৯৬ সালে চিনে প্রথম ধরা পড়ে এট । এটি উচ্চ প্যাথোজেনেসিসের একটি ভাইরাস হিসাবে বিবেচিত হয়। ২০০০ সালের পরে, অনেক জায়গায় এভিয়ান ফ্লু ছড়িয়ে যাওয়ার ধরনটি H5N1-এর সঙ্গে খুব মিল ছিল এবং সম্ভবত এই কারণেই আমেরিকার অভিযোগ, চিন থেকেই এই মহামারী ছড়িয়েছে।
advertisement
সোয়াইন ফ্লু
সোয়াইন ফ্লু (Swine flu) একটি সংক্রামক রোগ, যা অবহেলা করলে গুরুতর পরিণতি ঘটতে পারে। গত বছর সারা দেশে সোয়াইন ফ্লুর বহু ঘটনা সামনে এসেছে। যদি সোয়াইন ফ্লুর চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি মারাত্মক হতে পারে। বিশেষত ফুসফুসের অসুখের রোগীদের জন্য এটি বেশ বিপজ্জনক হতে পারে। এছাড়া ছোট বাচ্চা,অসুস্থ রোগী, প্রবীণদেরও এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আমেরিকার দাবি ঠিক নয়। যদি সঠিক ভাবে দেখা যায় তবে এই রোগটি গত কুড়ি বছরে অনেক দেশে মারাত্মক আকার নিয়েছিল। ২০০৭ সালে, মহামারীটি ফিলিপাইনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল।
advertisement
করোনা ভাইরাস
করোনার ভাইরাসকে (Covid 19) এই শতাব্দীর সব চেয়ে বিপজ্জনক সংক্রামক রোগ বলে মনে করা হয়। যদিও এই মহামারীটিতে মৃত্যুর হার সার্স এবং সোয়াইন ফ্লু থেকে অনেক কম, তবে এই ভাইরাস থেকে অতি দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। এই কারণেই হয় তো এটি এমন এক মহামারী যা পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। প্রায় সমস্ত পশ্চিমি দেশগুলিই করোনার ভাইরাসের জন্য চিনের দিকে আঙুল তুলেছে এবং চিন মহামারী সম্পর্কে তথ্য লুকিয়ে রেখেছে, যার ফলে অন্যান্য দেশেও এই সংক্রমণটি ভয়ানক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বলা হচ্ছে।
advertisement
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে চিন থেকে নতুন নতুন রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল সেখানকার খাদ্য বাজার। চিনের শহরগুলিতে ফলমূল ও শাকসব্জি থেকে শুরু করে মাংসের পর্যন্ত বাজার রয়েছে। বিশেষত চিনের মাংসের বাজারগুলি নতুন রোগের ঠেক হয়ে উঠছে। চিনে অনেক ধরণের প্রাণীর মাংস পাওয়া যায়। চিনের লোকেরা সাপ-টিকটিকি সহ অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর মাংস খায়। এগুলি সবই চিনের শহরগুলির মাংস বাজারে প্রকাশ্যে পাওয়া যায়। চিনের শহরগুলির অধিক জনসংখ্যা এবং সেখানকার মাংসের বাজারের কারণে সেখান থেকে নতুন নতুন রোগ দেখা দিচ্ছে।
view commentsLocation :
First Published :
May 27, 2021 4:01 PM IST