Explained: Privacy Coins: বিপুল মুনাফার দাবি, এই গুপ্তমুদ্রা আসলে কী? কী ভাবেই তা কাজ করে?
- Published by:Suman Biswas
Last Updated:
Privacy Coins: গুপ্তমুদ্রা বা প্রাইভেসি কয়েনের লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে। এমনিতে এই মুদ্রার লেনদেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তদারকিতে থাকে না।
#নয়াদিল্লি: ক্রিপ্টোকারেন্সির (cryptocurrency) প্রচলন দ্রুত গতিতে বিকশিত হচ্ছে। বিশ্ব জুড়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে মানুষের অদম্য কৌতূহল নজরে পড়ছে। অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য সহ নতুন কয়েন এবং টোকেনগুলি প্রতিনিয়ত চালু হচ্ছে, নতুন নতুন অফার নিয়ে। কেউ এর মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন ডিজিটাল অর্থনীতির নয়া দিগন্ত, আবার কারও মতে এর প্রভাবে ধ্বংসের মুখে এগিয়ে যেতে পারে যে কোনও দেশের মূল অর্থনৈতিক কাঠামো। এই দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ নিয়ে দোলাচলতা থাকলেও এটাও স্বীকার করে নিতেই হয় যে অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে এখনও বিশেষ সাবলীল নয়। ঠিক তেমনই প্রাইভেসি কয়েন এখনই সমাজের সর্বত্র গ্রহণযোগ্যতা বিশেষভাবে অর্জন করতে পারেনি। প্রত্যাশিতভাবেই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ এই কারেন্সি ব্যবহার থেকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে রয়েছে।
ব্যবহারকারীরা লেনদেন ইচ্ছে করলে গোপন রাখতে পারেন বলে এর নাম রাখা হয়েছে প্রাইভেসি কয়েন। সব রকমের স্বীকৃত গোপনীয়তা বজায় রেখে এই কয়েন চালু করা হয়েছিল। কীভাবে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তরিত হয়েছে তার কোনও চিহ্ন না রেখেও অনায়াসেই লেনদেন করা যেত এই মুদ্রার। এই লেনদেন কীভাবে, কখন, কোথায় করা হয়েছে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেয়ে যাবেন শুধু এই কয়েনের মালিক।
advertisement
advertisement
গোপনীয়তা আদৌ সঠিক কি না:
গুপ্তমুদ্রা বা প্রাইভেসি কয়েনের লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে। এমনিতে এই মুদ্রার লেনদেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তদারকিতে থাকে না। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দু'জন নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করে সরাসরি এই লেনদেন করে। ২৭ থেকে ৩৪ অক্ষরের একটি আইডি-র ইন্টারনেটে অ্যাকাউন্ট খুলে এই মুদ্রা লেনদেন করা যায়। অনেকে বিশ্বাস করেন যে বেশিরভাগ প্রাইভেসি কয়েন অনেক বেশি আর্থিক মুনাফা দেয়। বেনামি প্রাইভেসি কয়েনেরও প্রচলন আছে বিশ্ব জুড়ে। সেই সঙ্গে এর গোপনীয়তা বজায় রাখা হয় চূড়ান্ত পর্যায়ে। ইচ্ছে করলে প্রাইভেসি কয়েন ব্যবহারকারীর পরিচয় প্রকাশ করা যেতে পারে, আবার গোপনও রাখা যেতে পারে। যা সম্পূর্ণভাবে প্রাইভেসি কয়েনের মালিকের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
advertisement
এই প্রসঙ্গে বিটকয়েনের কথা বলা যায়, অনেকে বিটকয়েন (Bitcoin) ব্যবহার করেন। এই মুদ্রার ব্লকচেইন ব্যবহার করা খুব সহজ। এর লেনদেনের রেকর্ড শুধুমাত্র একজন ব্যবহারকারীর পাবলিক ওয়ালেটে দেখা যায়। সেখানে ঠিকানাও দেখা যাবে। অর্থাৎ বিটকয়েনের ব্যবহারকারীর ঠিকানাও থাকবে তার নির্দিষ্ট ওয়ালেটে। নিজস্ব পরিচয় অর্থাৎ কেওয়াইসি (KYC) আধার কার্ড, প্যান (PAN) কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্কের সংযুক্তির পর ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং বিটকয়েনের আরও বেশি সুরক্ষিত ব্যবহার দেখা যায়।
advertisement
ক্রেতা-বিক্রেতা ব্যতীত কোনও ধরনের তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বাদ দিয়ে আজ ক্রিপ্টোকারেন্সি কিছু মানুষের কাছে খুবই আকর্ষণীয়, বিশেষত যাঁরা ঝুঁকি নিতে পারেন। যে কেউ তাঁর পরিচয় গোপন রেখে অনেকটা সাধারণ মুদ্রার মতোই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে পারবেন। ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট খুলতে ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা, প্যান-আধার ইত্যাদি তথ্যের দরকার হয় না। ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির ওয়ালেটে ‘ট্রান্সফার’ হয়, মাঝখানে কোনও ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকে না। ফলে বিনিয়োগ বা লেনদেনের সম্পূর্ণ ভাগীদার সেই ব্যক্তি নিজেই। ঠিক একই কারণে, বিপদে পড়লেও আবার নিজেকেই সামলাতে হবে। আরও স্পষ্টভাবে বললে, অজানা কোনও বিপদ এলে তা সামলানোর জন্য কোনও ক্রেতা সুরক্ষা দফতর বা সরকারি সংস্থার দায়বদ্ধতা থাকার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।
advertisement
ব্লকচেন টেকনোলজি ব্যবহার করে অতি দ্রুত তৈরি করে নেওয়া যায় ক্রিপ্টোকারেন্সি। ব্যাপারটা অনেকটা এরকমই। পরের ধাপে কিছু সংখ্যক গ্রাহক সংগ্রহ করতে হবে। তাঁরা এই বানানো ডিজিটাল কয়েন কিনবেন। তবে কয়েন কিন্তু সীমিত সংখ্যকই থাকবে।
ধরা যাক ১ লক্ষ কয়েন বানানো হয়েছে। তার একটা শুরুর দাম ধার্য করা হয়েছে। প্রতি কয়েন ১০ টাকা। তাহলে মোট মূল্য হবে ১০ লক্ষ টাকা। এবার তৃতীয় পর্যায়ে প্রচার শুরু করতে হবে। কিছু পণ্যবিক্রেতা রাজি হলে তৈরি করা কয়েনের বিনিময়ে ব্যবসা করা যেতে পারে। কারণ ততক্ষণে আরও বেশ লোক ওই কয়েন গ্রহণ করেছে, প্রচারের ফলে। পণ্যবিক্রেতা মনে করতেই পারেন, এই কয়েনের ব্যবহার তাঁর ব্যবসার পরিসর বাড়িয়ে তুলবে। দ্বিতীয় কারণ, বিনিয়োগ থেকে আয়। ঠিক যে কারণে আফগানিস্তানের বা পাকিস্তানের মুদ্রার তুলনায় ডলার কেনা বেশি পছন্দ করেন আর্থিক কারবারিরা। তাঁরা হয় তো বিশ্বাস করেন ডলারের দাম অন্যান্য মুদ্রার থেকে বাড়বে। এখানেই কয়েন প্রস্তুতকারকের, আর শুরুর দিকে যাঁরা তা কিনেছিলেন, তাঁদের পোয়াবারো। কারণ কয়েনের সংখ্যা যে সীমিত! অথচ চাহিদা বাড়ছে। ফলে দামও বাড়ছে। যে সর্বশেষে কয়েন পাচ্ছে সে ভাবছে আরও দাম বাড়বে। অতএব আরও গ্রাহক বাড়বে।
advertisement
প্রাইভেসি কয়েন কী?
২০২১ সালে এই কয়েনের গোপনীয়তা নিয়ে আলোচনা করা হয় দেশের অর্থনৈতিক সংস্থাগুলিত। প্রাইভেসি কয়েনের আকর্ষণটা হয় তো অন্য জায়গায়। এর গোপনীয়তা পদ্ধতি ঈর্ষণীয়। এক সময় সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার মালিকের নাম জানা যেত না। প্রাইভেসি কয়েনের মালিকের নামও আজ গোপন থাকে। আর যেখানেই গোপনীয়তা, সেখানেই করের হিসাব রাখা দুষ্কর। সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হল, কেউ কয়েন দিয়ে কী লেনদেন করছে, তা জানা প্রায় অসম্ভব। এত গোপনীয়তার একটা অবশম্ভাবী পরিণাম হল, কয়েন হারিয়ে যাওয়া। আসলে এই কয়েন থাকে ডিজিটাল লকারে। কেউ পাসওয়ার্ড ভুললেই বিপদ! সব শেষ! চিরকালের মতো কয়েন হারিয়ে যাবে। এইভাবে প্রচুর কয়েন হারিয়ে যায়। এটাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কয়েনের দাম বাড়ার একটা অন্যতম কারণ। সবসময় মনে রাখতে হবে, এই কয়েনের সংখ্যা কিন্তু সীমিত।
advertisement
কেন এই মুদ্রা এখনও ব্যাপকভাবে গৃহীত হয় না?
বর্তমানে এই মুদ্রার গোপনীয়তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের। এর বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। আর্থিক জালিয়াতির জন্য এই মুদ্রাগুলি ব্যবহার করা সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলিও ভাবিত করে বহু মানুষকে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো বেশ কয়েকটি দেশ এই মুদ্রার ব্যবসার অনুমতি দেওয়ার জন্য নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। জাপানেরও সরাসরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভালোই হয়েছে এই মুদ্রার প্রচলন। বেশিরভাগ দেশ তাদের প্রচলিত মানি লন্ডারিং বিরোধী আইনের অধীনে এই মুদ্রার জন্য তাদের KYC নিয়মগুলিকে কঠোর করছে।
এর সীমিত ব্যবহারের আরেকটি মূল কারণ হল ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব। ব্যবহারকারীরা তাদের মধ্যে লেনদেন করা অপেক্ষাকৃত প্রযুক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন, তাই এখনও এই মুদ্রার লেনদেনে সাবলীল নয় বিশ্বের বহু বাজার।
view commentsLocation :
First Published :
February 09, 2022 5:44 PM IST