কুম্ভ মেলায় রাজকীয় স্নান ঘিরে কেন নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় প্রবৃত্ত হন সাধুরা?
- Published by:Debalina Datta
Last Updated:
যত সময় প্রবাহিত হয়েছে, এই রাজকীয় স্নান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা দ্বন্দ্ব।
#হরিদ্বার: হরিদ্বারে শুরু হয়ে গিয়েছে কুম্ভমেলা। আর কিছু দিনের মধ্যেই রয়েছে মহাশিবরাত্রির পুণ্য লগ্ন। আর সেই দিনই হবে প্রথম রাজকীয় স্নান। এর পরে কবে কবে স্নান হবে, সেই দিন ও তারিখ ঘোষণা করাও হয়ে গিয়েছে। এই স্নানগুলির সময়ে সারা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে এসে উপস্থিত হন। তাই যাতে এই স্নান শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়, তাই স্নানের জায়গা আগে থেকে ঠিক করে রাখা হয়। এটা না করে রাখার দরুন এর আগে সাধুদের সঙ্গে খুব ঝগড়া হত। এই স্নানের মহিমা কী, অনেকেই জানেন না। তবে যে সব সাধু দীর্ঘ দিন ধরে তপস্যা করছেন, তাঁরা জানেন যে এই স্নানের গুরুত্ব ও মহিমা ঠিক কতটা!
শাহি বা রাজকীয় স্নান কী ভাবে শুরু হল?
১৩টি অঞ্চল নিয়ে এই রাজকীয় স্নান যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এটি কিন্তু বৈদিক সভ্যতার অঙ্গ নয়। বিশ্বাস করা হয় যে ১৪ থেকে ১৬ শতাব্দীর মধ্যে যখন মুঘলরা ভারত আক্রমণ করে, তখন বিদেশি শাসকদের হাত থেকে নিজেদের ধর্ম ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য হিন্দু শাসকেরা নাগা সাধু ও অন্যান্য সাধুদের সাহায্য নেন।
advertisement
advertisement
কিন্তু পরে দেখা গেল যে হিতে বিপরীত হচ্ছে। নাগা সন্ন্যাসীরা ধীরে ধীরে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে শুরু করলেন। তখন মধ্যযুগীয় রাজারা নাগা সাধুদের এক বিশেষ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ধর্ম এবং দেশ, সাধু ও রাজা, এই সবক'টিই যে সমান গুরুত্বপূর্ণ, সেই নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাধুরা যাতে নিজেদের অন্যদের চেয়ে আলাদা মনে করতে পারেন এবং যাতে সবাই একত্রিত হয়ে এই ধর্মীয় স্নান সারতে পারেন, তার জন্যই এই স্নানের প্রথা শুরু হয়। শোনা যায়, এই স্নান করতে এই সব সাধুরা না কি রাজার মতো জাঁকজমক করে সেজে আসতেন, তাই এটাকে রাজকীয় স্নান বলা হয়। তখন থেকেই এই ঐতিহ্য চলে আসছে।
advertisement
যত সময় প্রবাহিত হয়েছে, এই রাজকীয় স্নান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা দ্বন্দ্ব। সন্ন্যাসীরা এই স্নানের সঙ্গে যুক্ত করলেন নিজেদের সম্মান ও অস্তিত্ব। এই সম্মান অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে দেখতে দেখতে চরমে পৌঁছে যায়। ১৩১০ সালে মহানির্বাণী আখড়া এবং রামানন্দ বৈষ্ণব আখড়ার মধ্যে শুরু হয় লড়াই। দু'পক্ষই অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন এবং নদীর জল রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। ১৭৬০ সালে শৈব ও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যেও স্নান নিয়ে নানা বাগবিতণ্ডা দেখা দিয়েছিল। ব্রিটিশ আমলে শেষপর্যন্ত স্নানের জন্য আলাদা অঞ্চল স্থাপিত হয়।
advertisement
রাজকীয় স্নানে কী হয়?
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধুরা সোনা বা রুপোর পালকি এবং ঘোড়া বা হাতি চড়ে স্নানে আসেন। সকলেই তাঁদের শক্তি ও জাঁকজমক প্রদর্শনের চেষ্টা করেন। একে রাজযোগ স্নানও বলা হয়, যেখানে সাধু এবং তাঁদের অনুসারীরা নির্ধারিত সময়ে পবিত্র নদীতে ডুব দেন। এটি বিশ্বাস করা হয় যে শুভ মুহুর্তগুলিতে এই নিমজ্জন অমরত্বের উপহার নিয়ে আসে। সে কারণেই এটি কুম্ভ মেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাজকীয় স্নানের পরে সাধারণ মানুষকে নদীতে ডুব দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
advertisement
নির্দিষ্ট দিনে এই স্নান ভোর ৪টা থেকে শুরু হয়। এই সময়ের আগে ঘাটে আখড়ার সাধকরা জড়ো হন। তাঁরা হাতে অস্ত্র বহন করেন, তাঁদের দেহে যেন তখন অপার্থিব শক্তি ভর করে এবং তাঁরা ক্রমাগত স্লোগান দিতে থাকেন। এই মুহুর্তে, সাধুরা ন্যূনতম পোশাক পরে থাকেন বা নগ্ন অবস্থায় ডুব দেন। এর পরেই একমাত্র সাধারণ জনগণকে স্নান করার অনুমতি দেওয়া হয়।
advertisement
কুম্ভ মেলায় রাজকীয় স্নানের কিছু বিশেষ ক্রম আছে। প্রথমে রাজকীয় স্নান সম্পন্ন হয় জুনা, আহ্বান ও অগ্নি আখড়ার সাধুদের মধ্যে। তার পর নিরঞ্জনি ও আনন্দ আখড়ার স্নান গঙ্গায় সম্পন্ন হয়। এর পর মহানির্বাণী ও অটল আখড়ার সাধুরা হর কি পউরির ব্রহ্মকুণ্ডে স্নান করেন।
করোনার সংক্রমণের কারণে এবার স্থানীয় প্রশাসন একটি বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে। যা সাধারণ লোকের পাশাপাশি সাধুগণও অনুসরণ করবেন যাতে অতিমারীর ছড়িয়ে না যায়। এর আগে সমস্ত ভক্তদের কোভিড ১৯-এর রিপোর্ট আনতে বলা হয়েছিল বেশ কয়েকটি বৈঠকের পরে এই নিয়মটি সরানো হলেও অন্যান্য নিয়মে কোনও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
view commentsLocation :
First Published :
March 08, 2021 9:36 PM IST