Explainer: সর্বনিম্ন দর দিয়ে সরকারি কাজের টেন্ডার পাওয়ার যুগ শেষ, বদল আসছে নিয়মে!
- Published by:Dolon Chattopadhyay
Last Updated:
মন্ত্রক বলেছে যে নতুন নির্দেশাবলী প্রণয়ন করেছে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (Central Vigilance Commission)।
#কলকাতা: যদি কাজ সম্পাদনের গুণমানকে সর্বদা ভারতে সরকারি কাজের শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা না হয়, তবে চুক্তি সবসময় সর্বনিম্ন দরদাতার কাছে যাবে। যাই হোক, এই শর্ত এল ওয়ান (L1) পদ্ধতি হিসাবে পরিচিত। আর এটা এখন আর সরকারি চুক্তি প্রদানের প্রাথমিক মাপকাঠি নয়। কারণ নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকার ক্রয় এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার (Procurement and Project Management Process) সংস্কারের জন্য নতুন নির্দেশিকা এনেছে, যাতে সরকারি কাজে গুণগত মানের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র টেন্ডার (Tender) কতটা কম দর দিচ্ছে সে দিকেই নজর দেওয়া হবে না, একই সঙ্গে কাজের গুণমানের উপরেও নজর দেওয়া হবে। ২৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় অর্থ ও ব্যয় নির্বাহ দফতরের সচিব টি ভি সোমনাথন (T.V. Somanathan) সরকারি সংগ্রহ এবং প্রকল্প পরিচালনা ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে নীতি-নির্দেশিকা প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়েই আমরা এই প্রতিবেদনে আলোচনা করব।
কেন্দ্রের প্রবর্তিত ক্রয় সংস্কারগুলি কী কী?
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সরকারি সংগ্রহ এবং প্রকল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যাতে সরকারি প্রকল্পগুলি দ্রুত, দক্ষ এবং স্বচ্ছভাবে শেষ করা যায়। মন্ত্রক বলেছে যে নতুন নির্দেশাবলী প্রণয়ন করেছে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (Central Vigilance Commission)। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিশদ পরামর্শ করেই এই নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই সংস্কার সরকারকে সময়মতো সরকারি প্রকল্পগুলি শেষ করতে সহায়তা করবে। আর এক্ষেত্রে অনুমোদিত খরচের সঙ্গে কাজের গুণগত মানের সঙ্গে আপোস করা হবে না। নির্দেশিকা ঘোষণা করার সময় মন্ত্রকয় যোগ করেছে, "অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অযৌক্তিক বাধাগুলি সরিয়ে ফেলা এবং করদাতাদের প্রদত্ত কর যাতে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তার জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবনের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পদ্ধতি এবং নিয়মগুলি পরীক্ষা করা অপরিহার্য।"
advertisement
advertisement
গত বছরের অক্টোবরে নীতি আয়োগ (NITI Aayog) বলেছিল যে ভারতকে তার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ করতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে প্রায় ৪.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। কিন্তু, তারা এটিও উল্লেখ করেছে যে পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলি প্রায়শই প্রকল্পগুলির মসৃণ বাস্তবায়নে বাধা দেয়, তার মানে ভারতে যে ভাবে প্রকল্পগুলি কার্যকর করা হয়, তাতে আমূল সংস্কার প্রয়োজন।
advertisement
নতুন ক্রয় বিধি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা কেন হল?
'প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট'-র সাধারণ নির্দেশাবলীতে নিয়মিত ব্যবহৃত ক্রয়ের পদ্ধতি ছাড়াও বিকল্প সংগ্রহ পদ্ধতি এবং অন্যান্য উদীয়মান ট্রেন্ড (Emerging Trends) ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। কয়েকটি মূল সংস্কারের উপর জোর দিয়ে মন্ত্রক বলেছে যে কাজের পেমেন্টের জন্য কঠোর সময়সীমা নির্ধারণ করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সময়ে সময়ে পেমেন্ট ঠিকাদারদের, বিশেষত মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগপতিদের হাতে অর্থের জোগান বাড়াবে। এই ভাবে, নতুন নির্দেশে বলা হয়েছে যে বকেয়া যোগ্য পরিমাণের ৭৫ শতাংশের কম নয়, এমন পেমেন্ট ঠিকাদারের বিল জমা দেওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে করা হবে। এই সময়ের মধ্যেই বিল যাচাই করা-সহ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। বাকি পেমেন্ট ২৮ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত খতিয়ে দেখার পরে মিটিয়ে দেওয়া হবে। বিল জমা দেওয়ার ৩০ কার্যদিবসের বেশি হওয়ার পরও পেমেন্ট না হলে বকেয়া বিলের উপরে প্রভিডেন্ট ফান্ডে যত শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হয়, সেই হারে সুদ দেওয়া হবে। নির্দেশে বলা হয়েছে যে চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করতে হবে কাজ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে।
advertisement
সরকারি সংগ্রহের জন্য L1 সিস্টেম কী? কোয়ালিটি এলিমেন্ট এখন কি চালু করা হয়েছে?
নির্দেশাবলীতে বলা হয়েছে, উপযুক্ত, স্বচ্ছ এবং ন্যায্য পদ্ধতিতে কোনও প্রস্তাব মূল্যায়নের সময় গুণগত মানের প্যারামিটারগুলিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই ধরনের একটি গুণমান সহ খরচ ভিত্তিক নির্বাচন (QCBS) পদ্ধতি প্রথাগত এল ওয়ান (L1)-র বিকল্প হিসাবে চালু করা হয়েছে। এল ওয়ান সিস্টেমের অধীনে চুক্তি সর্বনিম্ন দরদাতাকে দেওয়া হয়। QCBS রুট নেওয়া যেতে পারে যেখানে ক্রয়কে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা 'গুণমান-ভিত্তিক সংগ্রহ' (QOP) হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং অ-পরামর্শমূলক পরিষেবাগুলির জন্য যেখানে চুক্তির আনুমানিক মূল্য কর সহ ১০ কোটি টাকার বেশি নয়। এছাড়াও ক্রয়কারী সংস্থাগুলির মধ্যে একক দরপত্র প্রত্যাখ্যান করার এবং নতুন দরপত্র জারি করার প্রবণতা লক্ষ্য আছে। যা একটি নিরাপদ পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হয়। নতুন নির্দেশাবলী বলে যে প্রতিযোগিতার অভাব শুধুমাত্র দরদাতার সংখ্যার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে না। বিশেষ করে যখন দ্বিতীয়বার দরপত্র ডাকতে গেলে অতিরিক্ত খরচ হয়। সেক্ষেত্রে পরবর্তীকালে উচ্চতর দর জমা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে দরদাতাদের মধ্যে। নতুন নির্দেশাবলী বলে যে একক দরও বৈধ বলে বিবেচিত হবে, তবে কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে হবে। সেগুলি হল-বিড জমা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন, দরদাতাদের বিড জমা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময়, বাজারদর ইত্যাদির সঙ্গে কোনও আপোস করা হয়নি।
advertisement
আরও পড়ুন: মোটা টাকা রিটার্ন চাইলে এই ব্যাঙ্কে করুন এফডি, দেখে নিন কোন ব্যাঙ্ক দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি সুদ
অন্যান্য মূল সংস্কারগুলি কী কী?
নতুন নির্দেশিকাগুলি প্রকল্পের অগ্রগতি এবং মূল্যায়নের পর্যালোচনার উপর জোর দিয়েছে। বিশেষত ইলেকট্রনিক পরিমাপ বই (ই-এমবি) এর মতো আরও অন্য ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্যান্য আইটি ভিত্তিক সমাধানগুলিও ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের আশা, এই সংস্কার লাগু হলে একদিকে যেমন কনট্রাক্টরদের সময় মত পেমেন্ট দিতে সুবিধা হবে তেমনি প্রকল্পটিও স্বচ্ছ এবং সঠিক গুনমানসম্পন্ন হবে। প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। প্রত্যেকটি প্রকল্পের অগ্রগতির ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক রেকর্ডিং রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
advertisement
প্রকল্পের কাজের মান বা ঠিকাদার চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করলে সাধারণ ভাবে আইনি পথে হাঁটা হয়। নতুন নির্দেশিকায় আইনি পথে যাওয়ার আগে আলোচনা, মধ্যস্থতার উপরে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ, আইনি পথে গেলে প্রকল্পের টাইমলাইন এবং সামগ্রিক খরচের উপর মামলার প্রতিকূল প্রভাব পড়বে। আখেরে প্রকল্প শেষ করতে দেরি হবে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যখন কোনও সরকারি সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়া হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত ঠিকাদারের পক্ষে যায়। তাই নির্দেশিকা বলে যে ঠিকাদারের আপত্তি ও দাবি পর্যালোচনা করা উচিত। কারণ, মামলা হলে এটি সরকারকে বিশাল আর্থিক ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। যা প্রায়শই সরকারের তহবিলের খরচের চেয়ে অনেক বেশি।
view commentsLocation :
First Published :
November 13, 2021 12:09 PM IST