Dry Eyes: Explained: দিনের পর দিন মাস্ক পরায় বাড়ছে চোখের সমস্যা, কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন চোখ?

Last Updated:

Dry Eyes: ড্রাই আইজ সিনড্রোম এমন একটি অবস্থা যেখানে যেখানে আমাদের চোখের জল চোখ ভিজিয়ে রাখতে সক্ষম হয় না।

মানসিক চাপ, বিভিন্ন অনিদ্রাজনিত সমস্যা, নার্ভের সমস্যা চোখের পাতা কাপার কারণ হতে পারে৷
মানসিক চাপ, বিভিন্ন অনিদ্রাজনিত সমস্যা, নার্ভের সমস্যা চোখের পাতা কাপার কারণ হতে পারে৷
#নয়াদিল্লি: করোনা সংক্রমণের কারণে ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা মাস্ক ব্যবহার করছি। তবে, মাস্ক পরার কারণে নানা সমস্যায় দেখা দিচ্ছে আজকাল। মাস্কের অত্যধিক ব্যবহারের কারণে অনেকেই দাঁতের (Dental Problems) সমস্যার কথা বলছেন। এখন আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে শুষ্ক চোখের (Dry Eyes Syndrome) পিছনেও মাস্কের অত্যধিক ব্যবহার দায়ী।
ড্রাই আইজ সিনড্রোম কী?
ড্রাই আইজ সিনড্রোম এমন একটি অবস্থা যেখানে যেখানে আমাদের চোখের জল চোখ ভিজিয়ে রাখতে সক্ষম হয় না। যার ফলে অস্বস্তি বোধ হয়। এটি ঘটতে পারে যখন চোখ পর্যাপ্ত অশ্রু তৈরি করতে পারে না বা তারা নিম্নমানের অশ্রু তৈরি করছে যা চোখকে ভিজিয়ে রাখতে পারছে না। দীর্ঘদিন শুষ্কভাবের কারণে চোখের প্রদাহ হতে পারে এবং চোখের পাতার ক্ষতি করতে পারে। এই অবস্থায় চোখ জ্বালা হতে পারে। যদিও এটি বিভিন্ন কারণেই ঘটতে পারে, বর্তমানে এটি মাস্কের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে বাড়ছে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে এই অবস্থাটিকে মাস্ক-অ্যাসোসিয়েটেড ড্রাই আই (Mask-Associated Dry Eye) নাম দেওয়া হয়েছে।
advertisement
কেন এই সমস্যা হয়?
নিজেকে রক্ষা করার জন্য চোখের নিজস্ব প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলি হল তিন স্তরবিশিষ্ট টিয়ার ফিল্ম (Three-Layer Tear Film) এবং পলক ফেলা (Blinking)। টিয়ার ফিল্মটি তিনটি স্তরের সমন্বয়ে গঠিত-একটি অভ্যন্তরীণ মিউসিন স্তর (Mucin Layer), এটি জেলির মতো পদার্থ, যা মূলত অন্য দুটি স্তরকে চোখের পৃষ্ঠে ধরে রাখে, জলের মতো মাঝের স্তরটি নিয়েই টিয়ার ফিল্মের বেশিরভাগ অংশ গঠন হয়। আর একেবারে বাইরের তৈলাক্ত স্তর রয়েছে, যা অন্য দুটি স্তরকে ঢেকে রাখে এবং বাহ্যিক আঘাত থেকে চোখকে রক্ষা করে। অন্য দিকে, চোখের পলক ফেলা গাড়ির উইন্ডশিল্ড ওয়াইপারের মতো কাজ করে। যে কোনও ধুলো বা ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করে এবং টিয়ার ফিল্মকে সতেজ করে। এই প্রক্রিয়া আমাদের চোখকে সবসময় পরিষ্কার এবং আর্দ্র রাখে। চোখে যথেষ্ট পরিমাণে জল তৈরি না হলে বা সেই জল লুব্রিক্যান্ট হিসেবে যথেষ্ট না হলে চোখ কড়কড় করে, জ্বালা ভাব অনুভূত হয়। ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টি।
advertisement
advertisement
শুষ্ক চোখের উপসর্গ:
অস্পষ্ট দৃষ্টি: শুষ্ক চোখের একটি সাধারণ উপসর্গ হল অস্পষ্ট দৃষ্টি। বেলা বাড়ার সঙ্গে শুষ্কতা বাড়ে, ফলে ঝাপসা দেখা যায়।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া: চোখের শুষ্কতার আর একটি লক্ষণীয় উপসর্গ হল চোখ লাল হয়ে থাকা। চোখের সাদা অংশে থাকা রক্তনালীগুলো ফুলে ওঠার ফলে চোখ লাল হয়ে যায়। চিকিৎসকরা বলেন, মূলত মেইবোমিয়ান গ্রন্থি ঠিকমতো কাজ না করার কারণে চোখের এই লালচে ভাব ও প্রদাহ হতে পারে।
advertisement
চোখ থেকে জল পড়া: চোখ থেকে অতিরিক্ত জল পড়াও শুষ্ক চোখের একটি উপসর্গ। চোখ থেকে জল পড়ার অর্থ হল টিয়ার ফিল্ম চোখকে যথেষ্ট আর্দ্র করতে পারছে না। তাই শরীর শুষ্ক চোখকে আর্দ্র করতে জরুরি ভিত্তিতে অশ্রু উৎপাদন করে। যাঁদের চোখ থেকে অতিরিক্ত জল পড়ে তাঁরা মূলত বাষ্পীভূত শুষ্ক চোখের সমস্যায় ভোগেন।
advertisement
চোখ ভারী বা ক্লান্তি: চোখের শুষ্কতার অন্যতম উপসর্গ হল চোখ ভারী হয়ে আসা বা ক্লান্তি অনুভব করা। চোখে যখন জলের পরিমাণ অপর্যাপ্ত হয়ে যায় তখন চোখ বার বার পলক ফেলে চোখের পৃষ্ঠকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। ফলে চোখে ক্লান্তি অনুভূত হয়।
আলো সংবেদনশীলতা: চোখের শুষ্কতায় চোখ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এই সমস্যাকে ফটোফোবিয়াও বলা হয়। ফটোফোবিয়া আক্রান্ত রোগীরা হঠাৎ জোরাল আলো আলোতে আসলে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
advertisement
চোখে কিছু পড়ার অনুভূতি: চোখে আদ্রতা না থাকলে ন্যাচারাল লুব্রিকেশন বা প্রাকৃতিক মসৃণতা হারায়। ফলে চোখে কিছু পড়েছে এমন ধরনের অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়। বারে বারে চুলকাতে থাকে।
পলক ফেলতে অসুবিধা: চোখের শুষ্কতার কারণে ন্যাচারাল লুব্রিকেশনের অভাব হয়। চোখের পাতা ফেলার সময় অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।
জ্বালা-পোড়া: চোখের আরামের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ লুব্রিকেশন দরকার। চোখকে আর্দ্র রাখার জন্য মেইমবাম অর্থাৎ চোখের তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসরণ হয়। চোখের শুষ্কতায় ভোগা রোগীরা চোখে বা চোখের পাতায় জ্বালাপোড়া অনুভব করেন।
advertisement
কারা ঝুঁকিতে রয়েছেন?
যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে মাস্ক পরে থাকেন, তাঁদের এই অবস্থা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু সায়েন্টিফিক রিপোর্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চশমা এবং কন্টাক্ট লেন্স (Contact Lenses) পরা ব্যক্তিদের মধ্যে ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া যাঁরা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করেন, এয়ার কন্ডিশনারের মধ্যে এবং উত্তপ্ত পরিবেশে সময় কাটান, তাঁরাও ঝুঁকিতে থাকেন। বয়স্করাও এই অবস্থার কারণে সমস্যায় পড়তে পারেন। ধূমপান বা মদ্যপানও এক্ষেত্রে একটি ভূমিকা পালন করতে পারে।
চিকিৎসা কীভাবে হয়?
আরেকটি গবেষণায় আরও জানা গিয়েছে যে চোখ সম্পর্কিত সমস্যাগুলি গুরুতর কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও সমস্য়ায় ফেলতে পারে। যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে শুষ্ক চোখ একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে উঠতে পারে এবং চোখের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। যদি চোখের কোনও সমস্যা হচ্ছে এটা বুঝতে পারা যায়, তবে উপেক্ষা করা একদমই উচিত হবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
কী কী করতে হবে?
চোখের পাতার লোমে কোনও ধুলো বা ক্রাস্ট জমা হতে দিলে চলবে না। কারণ এটি টিয়ার ফিল্ম গঠনে বাধা দেয় এবং সংক্রমণের আধার হিসাবে কাজ করে। যাঁরা চোখের মেকআপ ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। রাসায়নিক-বর্জিত পণ্য ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহারের পর ভালভাবে চোখের পাতা পরিষ্কার করতে হবে। এর জন্য় নরম কাপড় বা তুলোর ব্যবহার করতে হবে।
যদি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়, তবে দিনে ৬-৭ ঘন্টার বেশি সেগুলি পরা যাবে না। হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লুব্রিকেন্ট ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।
শীতকালে চোখের পাতার উপর উষ্ণ কম্প্রেস আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। পাশাপাশি পাতা থেকে তেল নিঃসরণকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। যা টিয়ার ফিল্মের তৈলাক্ত স্তরের জন্য অপরিহার্য। এয়ার হিউমিডিফায়ারের ব্যবহার ঘরে আর্দ্রতার মাত্রা সঠিক বজায় রাখতে সাহায্য করে। যা শুষ্ক চোখ প্রতিরোধ করে এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও উপকার হয়।
এই আবহাওয়ায় বাইরে বেরোনোর সময় এটা নিশ্চিত করতে হবে যে চোখ সরাসরি ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে আসছে না। দু'চাকার গাড়ি চড়লে অবশ্যই চশমা বা হেলমেট পরতে হবে।
দীর্ঘ সময় কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ না রেখে মাঝে মাঝে বিরতি নিতে হবে। সুযোগ পেলেই সবুজ গাছপালার দিকে তাকাতে হবে। যা শুধুমাত্র চোখের জন্যই নয়, ঘাড় এবং পিঠের জন্যও ভালো।
ঘন ঘন ও জোরে জোরে চোখের পাতা ফেলতে হবে। এতে চোখের তরল পদার্থগুলি বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে কর্নিয়াকে ভিজিয়ে রাখবে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে না থেকে ঘন ঘন পলক ফেলার অভ্যাস করতে হবে।
প্রয়োজনীয় লুব্রিকেন্ট আই ড্রপগুলি ব্যবহার করতে হবে। এই ড্রপগুলি টিয়ার ফিল্মকে পরিপূরক এবং পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে।
সঠিক আলোর ব্যবহার প্রয়োজন। খুব কম আলো বা অন্ধকারে যেমন কাজ করা যাবে না, তেমনই অযথা কম্পিউটার ও মোবাইলের ব্রাইটনেস বাড়ালে হবে না। চোখের লেভেলে মনিটর রাখতে হবে। যাতে চোখ ও ঘাড় সোজা থাকে।
কম্পিউটার মনিটরে ও চশমায় অ্যান্টিগ্লেয়ার স্ক্রিন এবং চশমায় অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ গ্লাস ব্যবহার করাও জরুরি।
ধূমপান শুষ্ক চোখের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ধূমপায়ীদের শুষ্ক চোখের প্রবণতা বেশি থাকে। পারলে একেবারের ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে।
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। শোওয়া সময় ফোন ব্যবহার করা এড়িয়ে চলতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন ঘুম চোখের পাশাপাশি মন ও শরীরের জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। জল খেলে শরীর আর্দ্র থাকে। অতিরিক্ত কফি অ্যালকোহল এবং ক্যাফিনযুক্ত অন্যান্য পানীয় শরীরের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। সেগুলি পান করা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে জলযুক্ত ফল যেমন তরমুজ, শসা, স্ট্রবেরি, পিচ ইত্যাদি খেতে হবে।
খাদ্য তালিকায় ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার রাখতে হবে। প্রাকৃতিক তেল চোখের আর্দ্রতা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ডিম, তেলযুক্ত মাছ, আখরোট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ অ্যাসিড থাকে।
বাংলা খবর/ খবর/Explained/
Dry Eyes: Explained: দিনের পর দিন মাস্ক পরায় বাড়ছে চোখের সমস্যা, কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন চোখ?
Next Article
advertisement
West Bengal Weather Update: ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে, উত্তরেও দুর্যোগ ! উইকেন্ডে আবহাওয়া কেমন থাকবে?
ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে, উত্তরেও দুর্যোগ! উইকেন্ডে আবহাওয়া কেমন থাকবে?
  • ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে

  • দুর্যোগ চলবে উত্তরবঙ্গেও

  • উইকেন্ডে গিয়ে আবহাওয়ার উন্নতি

VIEW MORE
advertisement
advertisement