#নয়াদিল্লি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড়ির মাধ্যমে গর্ভপাতের (Medication Abortion) সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বড়ি (Abortion Pill) খেয়ে গর্ভপাত করানো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়ে আইনগত বাধাও আছে, কোথাও আবার নেই। যদি মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তবে ওষুধের দ্বারা গর্ভপাত একটি বৃহত্তর ভূমিকা পালন করবে। ক্লিনিকে না গিয়ে মহিলারা বড়ি খেয়েই গর্ভপাত করাবে। তাতে পুরো বিষয়টাই ঘেঁটে যাবে। গর্ভপাত কমার বদলে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, আর সেটা হবে গোপনেই।
ওষুধের দ্বারা গর্ভপাত কী?
এটি একটি পদ্ধতি, যা মহিলারা বাড়িতেই করতে পারে। এটি সারা বিশ্বে ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত প্রোটোকল অনুযায়ী দু'টি ওষুধ রয়েছে। প্রথমটি মিফেপ্রিস্টোন (Mifepristone), এটি প্রোজেস্টেরন নামক একটি হরমোনকে ব্লক করে, যা গর্ভাবস্থা অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। দ্বিতীয়টি হল মিসোপ্রোস্টল (Misoprostol), এটি জরায়ুর সংকোচন (Uterine Contractions) ঘটায়।
এটা কখন ব্যবহার করা যাবে?
ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Food and Drug Administration) গর্ভাবস্থার ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত ওষুধের দ্বারা গর্ভপাতের অনুমোদন দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) নির্দেশিকা বলে যে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়িতেই ওষুধের দ্বারা গর্ভপাত করানো যায়। ১২ সপ্তাহ পরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে।
এটা কি কার্যকর ও নিরাপদ?
উভয় ক্ষেত্রেই উত্তর হল হ্যাঁ। মার্কিন গবেষণায়, এই বড়িগুলির সংমিশ্রণ ৯৯ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে রোগীর সম্পূর্ণ গর্ভপাত ঘটায়। এছাড়াও এটি ক্লিনিকে চিকিৎসক দ্বারা পরিচালিত প্রচলিত গর্ভপাত পদ্ধতির (Traditional Abortion Procedure) মতোই নিরাপদ। বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে ওষুধের দ্বারা গর্ভপাতের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার হার কম। ল্যানসেট (Lancet)-র সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে রোগীরা সাধারণত এতে সন্তুষ্ট হন। বিদেশ থেকে পাওয়া কয়েকটি গবেষণাতেও জানা গিয়েছে যে গর্ভপাতের বড়িগুলি মহিলাদের জন্য নিরাপদ, যাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য কাছাকাছি ডাক্তার নেই।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক অ্যাবিগেল আরএ আইকেন ওষুধের দ্বারা গর্ভপাতের উপর একটি গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, "কিছু লোক এখনও ধরে নেয় যে আমরা বিপজ্জনক কিছু সম্পর্কে কথা বলছি বা হতাশার কারণে করেছি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান এই তথ্যটি আরও মূলধারায় পরিণত হচ্ছে।"
আরও পড়ুন : নয়া নিয়ম চালু ভারতীয় রেলের! 'এই' কাজটি না করলে কিন্তু হবে না বুকিং
কারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের তিন-চতুর্থাংশ এলাকার বৈধ গর্ভপাত করানো মোট সংখ্যার প্রায় অর্ধেক বড়ি খেয়ে গর্ভপাত করায়। কোভিড অতিমারি চলাকালীন ওষুধের দ্বারা গর্ভপাত আরও সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ সংক্রমণের আশঙ্কায় ব্যক্তিগতভাবে ক্লিনিকে যাওয়ার ঝুঁকি কেউ নিতে চায়নি। এছাড়াও, ফেডারেল আইনের পরিবর্তন তাদের জন্য টেলিমেডিসিনের (Telemedicine) মাধ্যমে প্রেসক্রিপশন পাওয়া সহজ করে দিয়েছে। এটি সাধারণত রোগীদের ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে। ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির প্রসূতি ও গাইনোকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মারিয়া ইসাবেল রডরিগেজ বলেন, "কিছু লোক অস্ত্রোপচার পছন্দ করে, কারণ এটি দ্রুত কাজ হয়। অ্যানেস্থেশিয়া করার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয় অস্ত্রোপচার। ওষুধের দ্বারা গর্ভপাত আরও ব্যক্তিগত মনে হতে পারে, কেউ কেউ এটি তাদের নিজের বাড়িতেই করতে চায়, কেউ বলে যে এটি তাদের জন্য আরও স্বাভাবিক পদ্ধতি।"
যারা আইনি গর্ভপাতের ঝামেলা এড়াতে চায় বা যারা ক্লিনিকে যেতে পারে না তারা অবৈধভাবে ওষুধের দ্বারা গর্ভপাত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের হার সরকারি হিসেবের থেকে বেশি। কারণ লোকজন অনলাইনে বড়ি অর্ডার করে, বাড়িতেই বড়ি খেয়ে গর্ভপাত করায়। যার কারণে হিসেবহীন অদৃশ্য গর্ভপাতের হার বাড়তে পারে, যদি আরও রাজ্য গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে। কারণ, নিষেধাজ্ঞাগুলি অস্ত্রোপচার এবং ওষুধের দ্বারা গর্ভপাত, উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
কারা গর্ভপাতের বড়ি প্রেসক্রাইব করে?
রেজিস্ট্রেশন থাকা চিকিৎসকরা গর্ভপাতের বড়ি প্রেসক্রাইব করতে পারে। তবে সম্প্রতি নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাতে চিকিৎসকের সঙ্গে ব্য়ক্তিগতভাবে অ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রয়োজন নেই। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমেই চিকিৎসরা ওষুধের দ্বারা গর্ভপাতের পরামর্শ দিচ্ছে। চিকিৎসক মেল বা ডাকযোগের মাধ্যমেই রোগীর বাড়িতে বড়ি পাঠিয়ে দেয়। কয়েকটি ফার্মেসি সংস্থাকেও ওষুধ পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি এখনও সেই ভাবে চালু হয়নি। 'হে জেন' (Hey Jane) এবং 'জাস্ট দ্য পিল'-এর (Just the Pill) মতো নতুন স্টার্টআপগুলি গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কয়েকটি রাজ্যে পরিষেবা দিতে শুরু করেছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি রাজ্যে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে গর্ভপাতের প্রেসক্রাইব করা বা মেলের মাধ্যমে বড়ি পাঠানো নিষিদ্ধ। এইসব রাজ্যে রোগীকে সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। অন্যান্য রাজ্যগুলিতে নির্দিষ্ট সপ্তাহের পরে ওষুধের দ্বারা গর্ভপাত নিষিদ্ধ।
আরও পড়ুন : ব্লেডের এই নকশার আসল রহস্য জানেন? নেপথ্যের কারণ শুনলে চমকে যাবেন!
গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞা কীভাবে ওষুধের দ্বারা গর্ভপাতকে প্রভাবিত করবে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক রাজ্য গর্ভপাত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সংক্রান্ত আইনগুলি পদ্ধতিগত গর্ভপাত এবং বড়ি সহ সমস্ত গর্ভপাত পদ্ধতিকে প্রভাবিত করবে৷
বিদেশ থেকে বড়ি পাওয়া তো যেতে পারে, তাহলে কী হবে?
বিদেশে অনলাইন ফার্মেসিগুলি বড়ি বিক্রি করে। এইড অ্যাকসেস (Aid Access) নামে একটি সংস্থা ৫০টি রাজ্যের মহিলাদের ভারত থেকে বড়ি পাঠায়। তবে বড়ি পাঠানোর আগে ইউরোপীয় চিকিৎসকদের পরামর্শ এবং প্রেসক্রিপশন দেয়। কয়েকটি রাজ্যে গর্ভপাত করানো কঠিন হয়ে যাওয়ার কারণে এই চ্যানেলগুলি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। টেক্সাস সেপ্টেম্বরে একটি আইন এনে ছয় সপ্তাহ পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেছিল। তারপরই এইড অ্যাক্সেস থেকে গর্ভপাতের জন্য বড়ি আনানোর আবেদন তিনগুণ বেড়েছে। ওকলাহোমার রিপাবলিকান-নেতৃত্বাধীন রাজ্য আইনসভা সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গর্ভপাত বিরোধী নিষেধাজ্ঞা (Anti-Abortion Restrictions) বিল পাস করেছে। ওকলাহোমার গভর্নর কেভিন স্টিট প্রায় ছয় সপ্তাহের গর্ভাবস্থার পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার বিলে স্বাক্ষর করেছেন। গর্ভপাত বিরোধী আইন প্রণেতারা আশাবাদী যে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টও এই নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করবে। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ১৫ সপ্তাহের গর্ভধারণের পরে গর্ভপাতের উপর মিসিসিপি প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করবে।
এছাড়াও, আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের একটি গোপন খসড়া নথি ফাঁস হয়ে গিয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগেই। তাতেই মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার খর্ব করার কথা বলা রয়েছে বলে দাবি কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমের। ওই খসড়া নথিতে ১৯৭৩ সালে ওই মামলার রায়ে মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার দেওয়াকে ভুল সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও খসড়া অনুযায়ী এবার থেকে গর্ভপাত মার্কিন প্রদেশগুলির নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে। যদিও এখনও পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয় বলেই জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : সূর্যের দিকে শুধুমাত্র এই সময়েই তাকান, অন্য সময় ভুল করলে চরম মূল্য চোকাতে হবে...
বিদেশ থেকে বড়ি আনা কি বৈধ?
না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা বেআইনি। কিন্তু বিদেশি থেকে আনার ক্ষেত্রে কোনও সমস্য়া নেই। কারণ, আমেরিকানরা অন্য অনেক ওষুধই বিদেশ থেকে অর্ডার করে আনে। অন্য ওষুধের সঙ্গে গর্ভপাতের বড়ি আনা তাই সহজ। এই ওষুধ বিক্রি বন্ধ করাও কঠিন হবে, কারণ সবই ওষুধই সাধারণত প্যাকেজে আসে, আর সেই প্যাকেজের বাইরে কিছুই লেখা থাকে না।
গর্ভপাতের বড়ি খাওয়ার প্রক্রিয়াটি কেমন?
প্রথম পিল মিফেপ্রিস্টোন সাধারণত রোগীদের উপর কোন স্পষ্ট প্রভাব ফেলে না। দ্বিতীয় পিল মিসোপ্রোস্টল ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পরে নেওয়া হয়। যা ক্র্যাম্পিং (Cramping) এবং রক্তপাত (Bleeding) ঘটায়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তীব্রতাও বাড়ে। প্রক্রিয়াটি প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং প্রায় ১ ঘন্টার জন্য সবচেয়ে তীব্র হয়। রদ্রিগেজ অন্যান্য বাধ্যবাধকতা ছাড়া রোগীদের বাড়িতে থাকারই পরামর্শ দেন। আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) এবং একটি হিটিং প্যাড (Heating Pad) পরারও সুপারিশ করা হয়। কারণ ব্যথা মারাত্মক হতে পারে এবং আর এর রক্তপাত পিরিয়ডের তুলনায় অনেক বেশি হয়। গর্ভাবস্থা কেটে যাওয়ার পরে ক্র্যাম্পিং এবং জমাট বাঁধা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও মহিলাদের সাধারণত পিরিয়ডের মতোই প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রক্তপাত হয়।
বিরল ক্ষেত্রে একজন রোগীর প্রত্যাশিত থেকে বেশি রক্তপাত হয় এবং তার চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। একইভাবে খুব কমই ক্ষেত্রেই গর্ভপাত সম্পূর্ণ হয় না এবং অন্য ডোজ বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। যেসব মহিলার এই জটিলতা রয়েছে তাদের গর্ভপাতের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা রয়েছে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। একবার ওষুধের দ্বারা গর্ভপাত শুরু হয়ে গেলে এটিকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।