#নয়াদিল্লি: দীর্ঘ ৫৬ বছরের অটুট দাম্পত্য! আর ঠিক এক বছর আগে আজকের দিনেই দীর্ঘ দিনের সেই সঙ্গীর সঙ্গে চিরবিচ্ছেদ! সেই স্মৃতি আঁকড়েই এখন দিন কাটছে বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সায়রা বানুর (Saira Banu)! গত বছর ৭ জুলাই দীর্ঘ রোগভোগের পরে প্রয়াত হয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা দিলীপ কুমার (Dilip Kumar)। আর স্বামীকে হারানোর পর এক বছর কেটে গেলেও যেন এখনও সেই শোকেই ডুবে রয়েছেন স্ত্রী সায়রা বানু! তিনি জানিয়েছেন, “প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙে, আর মনে হয় আমার জীবনের সব কিছুই চলে গিয়েছে। প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি কই!”
আসলে সম্পর্ক কিংবা বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ঘটনা আমরা আজকাল সব সময়ই দেখে থাকি। আর সেখানে দিলীপ কুমার এবং সায়রা বানুর জুটি কিন্তু সত্যিই একটা দৃষ্টান্ত! নিজেদের এই অটুট সম্পর্কের রহস্য এবং দিলীপ কুমারের প্রেমে পড়ার সেই গল্পই নিজে মুখে বলতে গিয়ে যেন স্মৃতির পাতায় সেই সময়ে পৌঁছে গেলেন সুন্দরী অভিনেত্রী।
সায়রা বানুর কথায়, “আমরা ৫৬টা বছর একসঙ্গে কাটিয়েছি এবং স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই যেন বেড়ে উঠেছি। আর প্রত্যেকেই বোধহয় জানেন যে, ছোটবেলাতেই আমি তাঁর প্রেমে পড়েছিলাম। তখন আমি ১২। আর সেই সময় থেকেই স্বপ্নের পুরুষ হিসেবে আমার মনকে ঘিরে ফেলেছিলেন উনি। আর যখন সেই স্বপ্নটা সত্যি হল, তখন থেকে আমি জানতাম যে, আমি আর শুধু তাঁর প্রণয়ী নই। সেই সঙ্গে যে-সব মেয়েরা দিলীপ কুমারকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, সেই সব মেয়েদের দলেও আমি পড়ে গিয়েছি। অবশ্য আমি তাঁদের মধ্যে হয়তো সবথেকে ভাগ্যবতী ছিলাম। কারণ আমি একসঙ্গে তাঁর স্ত্রী, মা, বন্ধু এবং ভক্ত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। আর সেই সব স্মৃতি আমি আমার মনের মণিকোঠায় তুলে রেখেছি। সেই স্মৃতিতেই বেঁচে রয়েছেন তিনি।”
আরও পড়ুন: বড় খবর, করোনার কারণে নোটিশ জারি কলকাতার একাধিক স্কুলের! যা করতে হবে পড়ুয়াদের...
বর্ষীয়ান অভিনেত্রী আরও বলে চলেন, “যখন আমার সবথেকে প্রিয় মানুষ মানে আমার দিদা শামশাদ বেগম সাহিবা (হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের গায়িকা) মারা গিয়েছিলেন, তখনও আমাকে সান্ত্বনা দেওয়া যায়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই শোক কাটিয়ে আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি ছিলেন আমার আম্মাজি - মানে একাধারে দিদা এবং অন্য দিকে আবার আমার মা-ও বটে! কারণ ইংল্যান্ডে তিনিই আমাকে ও আমার ভাইকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে মায়ের কথাও বলি। আমার মা নাসিম বানু ছিলেন ভারতের প্রথম বিউটি ক্যুইন। তিনি এক জন দারুণ অভিনেত্রীও ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ওই সময়কার সাহসী সিঙ্গেল মা-ও ছিলেন তিনি। যখন মায়ের মৃ্ত্যু হয়, তখন আমি ভেঙে পড়েছিলাম। সেই শোক কাটিয়েও আমি এগিয়ে গিয়েছি। আবার কয়েক বছর আগেই আমি আমার ভাই সুলতান আহমেদকেও হারিয়েছি। ওর তেমন বয়সও ছিল না, খুবই ভালো মানুষ ছিল ও। আসলে আমাদের পরিবারে একটা দারুণ বন্ধন ছিল, ফলে ওর মৃত্যুও আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ও সেই শোক কাটাতে পেরেছিলাম, কারণ আমার পাশে ইউসুফ সাব (দিলীপ কুমার) ছিলেন। তিনি আমাকে প্রতি মুহূর্তে শক্তি জুগিয়েছেন। আসলে উনি নিজের মতো করে আমাকে সান্ত্বনা দিতেন। তবে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে প্রতিদিন যখনই ঘুম থেকে উঠি, বিছানায় আমার পাশের ফাঁকা জায়গাটা আমাকে তাঁর কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে পড়ে, আমরা প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক একসঙ্গে কাটিয়েছি। যতক্ষণ না রাত হচ্ছে, এই ভাবনাগুলো মনে জড়ো হতে থাকে। তবে কখনও কখনও মনে হয়, আমাকে এটা ভেবেই বাঁচতে হবে যে, আমি সৌভ্যাগ্যবতী ছিলাম। কারণ ৫৬ বছর আমার কাছে ইউসুফ সাব ছিলেন। সেই কোন ছোটবেলায় তাঁর প্রেমে পড়েছিলাম। তাই এখনও তিনি আমার মনে জীবিত।”
সায়রা বানুর কথায়,” যখন তিনি আমার দিদার সঙ্গে হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং ঊর্দু কবিতা নিয়ে আলোচনা করতেন, তখন তাঁর চোখ দুটো অদ্ভুত ভাবে চকচক করত। এখনও তাঁর সেই ভালবাসা এবং উষ্ণতা আমি অনুভব করি। আবার তাঁকে বিশেষ পাত্রে একটা বিশেষ চা দেওয়া হত। আর চায়ের সেই বিশেষ পাত্র তাঁর জন্যই আমার মা আলাদা করে সরিয়ে রাখতেন। আবার মনে পড়ে, তিনি নিজের পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের বিষয়ে সদা তৎপর থাকতেন। ফলে এখনও আমি রোজ যা-যা দেখি, বা যে জিনিসগুলোকে ছুঁই, মনে হয় যেন সেই সবের মধ্যেই রয়েছেন তিনি। যা আমাকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে। আর আমিও এই শোক কাটিয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনও আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমি তাঁকে মনে করি এবং আমার চোখ ভিজে আসে। আজকাল হয়তো আমাদের বাড়ির কোনও কর্মচারী কিংবা অন্য কেউ টিভিটা চালিয়ে দিয়েছেন, আর সেই সময়ই হয়তো টিভিতে ভেসে উঠল তাঁর ছবি অথবা গান। এই সময়টাই নিজেকে ধরে রাখতে পারি না আমি। টিভি-র ঘর থেকে উঠে বেরিয়ে যাই আমি। বহু ভক্তই আমার কাছে তাঁর ট্যুইটার অ্যাকাউন্টটি রিঅ্যাক্টিভেট করার অনুরোধ জানিয়েছেন। আর ভক্তদের সেই অনুরোধ রাখার চেষ্টা করছি আমরা। কারণ ভক্তদের কাছেও ওই মানুষটা এখনও জীবিত।”
মৃত্যু বার্ষিকীর প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সায়রা বানু জানিয়েছেন যে, এই দিনটা প্রয়াত স্বামীর আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনার মাধ্যমেই কাটাবেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি জানি, তিনি তাঁর কাছের মানুষদের সঙ্গে এখন শান্তিতেই রয়েছেন!”
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Dilip Kumar, Saira Banu