হোম /খবর /বিনোদন /
‘বাংলায় কাজ করতে চাই’, বললেন ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’’-এর এডিটর সঞ্চারী

The Elephant Whisperers: ‘বাংলায় কাজ করতে চাই’, এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ-তে বললেন ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’-এর এডিটর সঞ্চারী

ভাবতেই পারেননি অস্কার হাতে আসবে

ভাবতেই পারেননি অস্কার হাতে আসবে

The Elephant Whisperers: আমি ছোট থেকে চলচ্চিত্র দেখে বড় হয়েছি৷ সবরকমের ছবি৷ আমার মা-বাবা আমাকে সবরকমের ছবি দেখাতেন৷

  • Share this:

৫০০ ঘণ্টার বেশি ফুটেজ দেখতে হয়েছিল এই ছবিটি এডিট করার জন্য৷ পুরস্কার ঘোষণার মুহূর্তটায় যেন নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বেস্ট ডকুমেন্টারি শর্ট ক্যাটাগরিতে সেরা মনোনিত হয়েছে ছবি ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’৷ তিনিই কথা বললেন নিউজ১৮-এর সঙ্গে৷ জানালেন অনুভূতির কথা৷ কথা বললেন, সঞ্চারী দাশ মল্লিক

কেমন লাগছে এখন?

এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি৷ আমার মনে হয়, এখনও ছ’মাস লাগবে পুরো বিষয়টা বুঝতে৷ ছ’মাস বাদে যখন পিছন ফিরে তাকাব, তখন বুঝতে পারব, আসল অনুভূতিটা কী রকম৷ অবিশ্বাস্য বলা চলে৷ মনে হয় কিছুটা মিরাকল হয়েছে৷ আমরা উচ্ছ্বসিত৷ আমরা প্রতি মুহূর্তে একে অপরকে চিমটি কেটে বলছি যেন, সত্যি, এমনটা হয়েছে? এটা বাস্তব?

আমাদের সেই যাত্রাপথের কথা বলুন, যেখানে আপনি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তারপর সব যখন ঘটল, কেমন লাগল?

ঘটনাপ্রবাহের সূত্রপাত অনেকটা দিন আগে৷ আমরা সবাই লস অ্যাঞ্জেলেসে আসতে চেয়েছিলাম৷ প্রথমে ব্যপারটা বেশ কঠিন ছিল৷ তার পর নেটফ্লিক্সের তরফ থেকে দূতাবাসে একটি চিঠি লেখা হয়, আমরা সময়মতো ইন্টারভিউ দিয়ে ফেলি৷ এখানে আসি, আমরা খুবই আনন্দ পেয়েছিলাম৷ আমরা ‘এলএ’-এর চারদিকটা ঘুরে দেখছিলাম৷ অস্কারের আগে অন্য অনুষ্ঠানও ছিল৷

আমরা মনোনিত হওয়ায় ও এখানে আসতে পেরে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম৷ আমাদের মনে হচ্ছিল, আমরা এখনই বোধহয় জিতে গিয়েছি৷ আমরা জেতার আশা করেছিলাম, কিন্তু আমরা এসেই খুশি ছিলাম৷ এ বার তো ছিল শ্যাম্পেন কার্পেট৷ আমরা দেখছিলাম সবাইকে৷ তারপর মূল অনুষ্ঠান শুরু হল৷ একে একে সব বিভাগের পুরস্কার দেওয়া হল, আমাদেরটার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম৷ তারপর ওঁরা আমাদের বিভাগের পুরস্কার ঘোষণা করল৷ সে যে কী অনুভূতি, যখন ওই খাম খোলা হচ্ছিল! আমাদের নাম ঘোষণা হতেই আমরা লাফিয়ে উঠলাম, চেঁচিয়ে উঠলাম৷

সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, ঠিক কী মনে হয়েছিল৷ আমি এখন বলতে পারছি যে, ধোনি বিশ্বকাপের ম্যাচে যখন ছয় মেরে ভারতকে জেতালেন, তখন আমরা যেমন চেঁচিয়ে উঠেছিলাম, এটা অনেকটা তেমনই৷

আপনার তো সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যোগ আছে৷ আপনার ঠাকুরদা কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি তৈরি করেছিলেন৷ আপনার মা একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা, আপনি কী ভাবে ছবির সম্পাদক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?

আমি ছোটবেলায় একজন আর্কিটেক্ট হতে চেয়েছিলাম৷ আমি তার পর কলেজে মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করি৷ থার্ড ইয়ারে আমাদের সবাইকে একটি ছোট ছবি তৈরি করতে হত৷ আমি সেই ছবিটা এডিট করেছিলাম৷ সেই ছবির বিষয়বস্তু ছিল ‘বাংলা ব্যান্ড’৷ আমার সেই কাজটা ভাল লেগেছিল৷ তার পরেই এফটিআইআই-তে আমি এডিটিং পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷

আরও পড়ুন: শান্তনুর ফোনেই সব রহস্য, এবার বড় কিছু ঘটবে! শুভেন্দুর দাবিতে পাল্টা 'আপনি কোথায় থাকবেন'?

আরও পড়ুন: কলকাতার ৩ ক্যাফেতে ঘটেছে সেই বৈঠক, শান্তনুর সঙ্গে কোন নেতার? জেনে গেল ইডি

তাহলে এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়া?

এটা ঠিক স্বপ্নের পরিধিও নয়৷ এটা যে স্পর্শের বাইরে, মনে হচ্ছে কেউ এটা করেনি৷ মানে, খুব কম মানুষ এই সম্মান পেয়েছেন৷ আমরা ভেবেছিলাম, হতে পারে কান বা বার্লিন অথবা টরোন্টো চলচ্চিত্র উৎসব, এগুলো স্বপ্ন ছিল৷ কিন্তু অস্কার, স্বপ্নেরও অতীত৷

মহিলা পরিচালক, প্রযোজকের একটা দারুণ টিম বলা চলে...

কার্তিকি আমাকে প্রথমবার এই কাজের প্রস্তাব দেন, আমার নাম নেটফ্লিক্স থেকে পেয়েছিলন৷ আমার আগের ছবি 'নাল'ও দেখেছিলেন৷ যে ছবিটির নির্দেশক আমার স্বামী৷ সেই ছবির গল্পটা ছিল একটি বাচ্চাকে নিয়ে যে জানতে পেরেছিল যে তার মা আসলে তার মা নয়৷ আমার মনে হয় ওঁর (কার্তিকি) মনে হয়েছিল, আমি এই কাজের প্রতি অবহেলা করব না, আর আমি পশু ভালবাসি৷

মুম্বইয়ে অন্যভাবে কাজ করার জন্য খ্যাতি ছিল গুনিত মোঙ্গার৷ তাঁর চেতনা প্রতিষ্ঠিত ছিল কাজে৷ ও আমাদের ক্ষেত্রে একজন পাওয়ার হাউজ৷ এটা কার্তিকির প্রথম ছবি, কিন্তু তিনি জানতেন ছবিটি থেকে ঠিক কী চাইছেন৷ একাগ্রতা ছিল ওঁর সঙ্গী৷ অন্য ভাবনা ওকে বুলডোজ করতে পারেনি৷ সেই কারণেই ও আলাদা৷

আপনারা জেতার পর কী কথা বললেন?

গোটা দল একে বারে শকে ছিল৷ আমরা কিছু ভাবতেই পারছিলাম না৷ সংবাদমাধ্যমের ভিড় ছিল৷ ওঁরা এখনও স্থির হতে পেরেছেন বলে মনে হয় না৷ গুনিত সবসময় ভেবেছিলেন, আমরা পুরস্কার পেতে পারি৷ মুম্বইয়ে বলেছিলেন, আমরা অস্কার ঘরে ফিরিয়ে আনব৷

৫০০ ঘণ্টার ফুটেজ দেখা, এ ভাবেই তো গোয়াতে কাজ শুরু হয়?

এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া, আমরা সারা বছর ধরে কাজ করেছিলাম৷ কার্তিকি জানতেন আমাদের শ্যুটিং কী হয়েছে, আর আমার গোটা ফুটেজটা দেখা দরকার ছিল৷ তারপর আমরা নোটস তৈরি করলাম, আলোচনা করলাম৷ তার পর ধীরে ধীরে এটি আকার পেল৷ কার্তিকি প্রথম থেকেই ভীষণ পরিষ্কার ছিলেন যে তিনি কী বলতে চান৷

আপনার কী মনে হয়েছিল এটা আলাদা পদ্ধতি, এবং এটাই ঠিক রাস্তা?

আমার এটা আলাদা মনে হয়েছিল কারণ, আমি প্রাণীদের ভালবাসি৷ আর এটা আমার প্রথম ডকুমেন্টারি৷ আর ক্যামেরার কাজ খুব ভাল ছিল৷ ক্যামেরা হাতির খুব কাছে চলে গিয়েছিল৷ ওদের ওই হাতির সঙ্গে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল৷ ওঁরা হাতির দৈনন্দিন কাজকর্ম ধরে রেখেছিলেন ক্যামেরায়, যেটা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না৷

আপনার মা একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা, আপনার স্বামী একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, তাঁরা আপনার উৎসাহের কারণ?

আমি ছোট থেকে চলচ্চিত্র দেখে বড় হয়েছি৷ সবরকমের ছবি৷ আমার মা-বাবা আমাকে সবরকমের ছবি দেখাতেন৷ আমি বাড়ি ফিরে গেলে আমার মা-বাবা জিজ্ঞাসা করতেন, এই ছবিটা দেখেছো? তাঁরা আমাকে যা দিয়েছেন, তাঁর মূল্য হয় না৷ আমি দেখেছি আমার মা-কে তাঁর হৃদয় নিংড়ে ছবি বানাতে৷ এটা আমার কাছে বড় একটা অনুপ্রেরণা৷ আমার স্বামীও আমার অনুপ্রেরণা৷ আমরা যখন নমিনেশন পেলাম, ভিসা ছিল না৷ ও বলেছিল, তোমাকে যেতেই হবে, তোমরাই জিতবে৷ ওই আমাকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল৷

পশ্চিমবঙ্গে এসে কাজ করার ইচ্ছা আছে?

হ্যাঁ, অবশ্যই৷ আমার ইচ্ছা আছে বাংলায় কাজ করার৷ ওটাই তো আমার জায়গা৷ এখনও হয়নি৷ তবে আমার কথা হল, যে গল্পের সঙ্গে আত্মীয়তা গড়ে ওঠে, সেই গল্প বলো৷ দর্শক এমনিতেই তোমার গল্পে প্রবেশ করবে৷ কঠিন পরিশ্রম করলে স্বপ্ন সত্যি হবেই৷

কমলিকা সেনগুপ্ত

Published by:Uddalak B
First published:

Tags: Oscar 2023, The Elephant Whisperers