Exclusive Interview | Soumitrisha Kundoo: টলিউডে প্রতিদ্বন্দ্বী কে? নাচ থেকে অভিনেত্রীর উড়ানে সওয়ার 'মিঠাই'! মনের খাতা খুললেন সৌমিতৃষা

সৌমিতৃষা: মিল আছে যে রকম, অমিলও আছে। তবে আমি বলব ৬০ শতাংশই মিল। মিঠাইয়ের মতোই হাসিখুশি থাকতে ভালোবাসি। মিঠাই যেমন সবার জন্যে ভাবে, আমিও তেমন। আমিও খুব পজিটিভ, মিঠাইয়ের মতো। কোনও কিছু হবে না বললেও, সেখানে করে দেখানোর চেষ্টা করি। মিঠাইয়ের মতোই আমার ইগো, মাথা গরম। তবে, মিঠাই সিডকে ভয় পায়, আমি আবার কাউকে ভয় পাই না। আর হ্যাঁ, মিঠাইয়ের মতোই আমি এক্কেবারে অগোছালো। বাড়িতেও মা সব গোছায়। (হাসি)

সৌমিতৃষা: না, সত্যি ভাবিনি। তবে কনসেপ্টটা ভালো লেগেছিল। আমার মনে হয়েছিল একটা ইউনিক স্টোরি। মিষ্টি নিয়ে, বাঙালিয়ানা নিয়ে। ভেবেছিলাম দর্শকের পছন্দ হবে। তবে শুরুর দিন থেকে এতটা ভালোবাসা পাব, এটা একদমই ভাবিনি। অবিশ্বাস্য।

মিঠাই ও উচ্ছেবাবু।

সৌমিতৃষা: আমি এভাবে কোনওদিনই ভাবিনি। আমি নিজে এক নম্বর, বাকিরা আমার পিছনে! আমি শুধু আয়নার সামনে যে মানুষটাকে রোজ দেখি, তাকে ছাপিয়ে এগোতে হবে ভাবি। কিন্তু ৩ নম্বরে গেলাম মানেই হারিয়ে গেলাম তা কিন্তু নয়। দর্শকের ভালোবাসাটাই আসল। টিআরপি থাকলেও, প্রত্যেকেই নিজের জায়গায় এক নম্বর। আর নম্বর তো পাল্টেই যায়।

সৌমিতৃষা: আমি অভিনেত্রী হতেই চাইনি। আমার স্বপ্ন ছিল কোরিওগ্রাফার হব, বম্বে যাব। ফ্যাশন ডিজাইনিং করব। এর মধ্যে নাচ শিখতে কলকাতায় আসা। একটা সূত্রে মডেলিং শুরু করি। সেখান থেকে একটি চ্যানেলের আমাকে পছন্দ হয় নেগেটিভ রোলের জন্য। কিন্তু আমি একদমই জানতাম না কী করব। আমার নিজের উপর কোনও আত্মবিশ্বাসই ছিল না। কিন্তু ওঁরা ততটাই কনফিডেন্ট ছিল। পরে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে শুরু করি। ২০১৭ সালে অডিশন ছাড়াই খুব অদ্ভুত ভাবে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল।

সৌমিতৃষা: দ্যাখো, আমি যখন কাজটা শুরু করি তখন নায়িকা হওয়ার কথা ভাবিনি। আমার নিজেকে প্রমাণ করার একটা জেদ ছিল। ভালো অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করতে দিনের পর দিন নিজেকে গ্রুমিং করেছি। তার পর কাজ ভালো হতে শুরু করল যখন, আমাকে অনেকেই বলত এবার হিরোইনের জন্য চেষ্টা কর। তুই পারবি। তখন ভাবলাম ঠিক আছে, এর পর সান বাংলা থেকে কনে বউয়ের অফার আসে হিরোইন হিসেবে। তার পর মিঠাই।

ছবি-- সায়ন্তন দত্ত

মেকআপ-- ভাস্কর বিশ্বাস

স্টাইল-- নীল সাহা

পোশাক-- শস্যা

সৌমিতৃষা: এটা কী ভাবে জানলে? এটা একদম সত্যি। আমি বাড়ির খুব আদুরে। বাড়িতে এসে শুধু বলি, চার্জারটা লাগিয়ে দাও, সুইচটা অন করো, এটা একটু করে দেবে? ওটা একটু করে দেবে? আমি বাবা-মা ছাড়া একদম অচল। বারাসতে তো সব সময় বাবা-মা পাশে থাকত। কলকাতায় এসে কাজ করা শুরুর বহুদিন পর আমি একা একা পথচলা শিখেছি। এখনও এমন হয় য়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে টাকা না দিয়ে বেরিয়ে গেছি। কারণ মা আছে তো, মা দেবে। আমি ভুলে গেছি টাকা দিতে! আমি এতটাই বাবা-মার উপর নির্ভরশীল। এখনও টাকার হিসেব রাখতে হিমশিম খাই।

সৌমিতৃষা: ইন্ডাস্ট্রি কেন, সারা পৃথিবীতেই, আয়নার সামনে যখন তাকাই, ওটাই আমার প্রতিযোগী।

সৌমিতৃষা: সত্যিই, সেই অর্থে বললে অনেক কম স্ট্রাগলই আমাকে করতে হয়েছে। অনেকের গল্প শুনে নিজেকে ব্লেসড মনে হয়েছে। তবে কষ্ট আমিও করেছি। বারাসত থেকে দিনের পর দিন টানা রাত পর্যন্ত এসে শ্যুটিং করে ফিরে যেতাম। বাবা-মা সেই সময় পাশে ছিল। ওঁরা আমার জন্য অনেক বেশি স্ট্রাগল করেছে। সবই ঈশ্বরের আশীর্বাদে। আর গোপালের 'হেলেপ'-এ।

.

সৌমিতৃষা: কেন প্রেম কি করতেই হবে? এরকমও তো হতে পারে যে, কেউ একজন ক্যাসুয়াল ডেটিংয়ে বিশ্বাস করে না। বা মনের মতো মানুষ পায়নি। আমি ভীষণই ওল্ড স্কুল। ভালোবাসলে বিয়ে অবধি ভাবি। আমি জাস্ট ডেটে বিশ্বাসী না, যতদিন না মনের মতো মানুষ পাচ্ছি, ততদিন কারও সঙ্গে নাম জড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। আমি ভালোবেসে ফেললে কিন্তু আলাদাই...

সৌমিতৃষা: আমার মতো হতে হবে। আমার চোখ দেখে বুঝতে হবে আমি অভিমান করেছি, রাগ করেছি। আমি খুবই রাগী তো। কিন্তু সেগুলোর পিছনে ভালোবাসা আছে, সেটা বুঝতে হবে।

সৌমিতৃষা: আমি না কনকাঞ্জলি দিয়ে মা-বাবাকে ছেড়ে যেতে পারব না। তাই এমন একটা ব্যবস্থা করতে হবে যে, এই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আমি যেন মা-বাবার ফ্ল্যাটে যেতে পারি। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাঁর পক্ষে, আমি তাঁকে সাহায্য করব। বাড়ি, ফ্ল্যাট যাইহোক, আমি যাঁকে বিয়ে করব তাঁকে বুঝতে হবে যে, আমি যেভাবে তাঁর পরিবারকে আপন করে নেব, তাঁকেও আমার পরিবারকে আপন করতে হবে। মেয়েরা কেন বাবা-মাকে ছেড়ে যাবে? ঘরজামাই কনসেপ্টেও মা-বাবা বিশ্বাসী নন। ফলে একটা মধ্যস্থতা করে তার পর বিয়ে। আর আমি নিশ্চিত, এমন ছেলে পাওয়া খুব মুশকিল।

.

সৌমিতৃষা: ট্রোল তাঁদেরকে নিয়েই করা হয়, যাঁদের দর আছে।

সৌমিতৃষা: আমার পুজো নিয়ে কোনও প্ল্যান নেই যবে থেকে আমার দিদা চলে গিয়েছেন। তিনি আমার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন। তাই পুজো বলে আলাদা করে কোনও উচ্ছ্বাস নেই আমার। পুজো এলেই মনটা ভার হয়ে যায়, মনে পড়ে যায়। তখন মনে হয় কেন এল পুজোটা? মা আসছে ভালো লাগে, চারিদিকে মায়ের গন্ধ পাওয়া যায়। তবে কোনও বিশেষ পরিকল্পনা আমার নেই। একটা দিন বারাসতের বাড়িতে যাব, পাড়ায় বসব আর একদিন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করব।

সৌমিতৃষা: ওটা আর হল না। আমি গ্যাস জ্বালাতেও শিখিনি। মা খুব ভয় পান। তবে মায়ের হাতের মাটন, পোলাও, লুচি, নিরামিষ আলুর দম দারুণ লাগে। ও হ্যাঁ, একবার পাটিসাপটা ভেজেছিলাম ইনডাকশনে, একটাও ভাঙেনি। মা পাশে ছিল দাঁড়িয়ে... সবাই বলেছিল ভালোই হয়েছে।

সৌমিতৃষা: হ্যাঁ, গ্র্যাজুয়েশনটা করতেই হবে। সে জন্যই ওপেন ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া। নইলে সামলাতে পারতাম না। কারণ, আমাকে ছাড়া কোনও সিনই হয় না এখন।

.

সৌমিতৃষা: এটা আমি একদম বুঝি না। আর যেটা বুঝি না, পারি না সেটা কেন করব? কোনও ইচ্ছেই নেই। অভিনয়টা পারি, ওটাই করব। আর নাচ করতে চাই।

সৌমিতৃষা: যিশু সেনগুপ্ত আর দেব।

সৌমিতৃষা: আপাতত মন দিয়ে মিঠাই। ছবি, ওয়েব করার ইচ্ছে আছে। একটা অফারও এসেছিল ছবির, কিন্তু আমার বয়সটা কম হয়ে যাচ্ছিল বলে হয়নি। ভালো ভালো গল্প ও ফাটিয়ে অভিনয় করার সুযোগ পেলেই করব, বিদ্যা বালনের মতো।

সৌমিতৃষা: সবাইকে বলব, করোনা কিন্তু এখনও যায়নি। তাই পুজোতে আনন্দ করুন তবে করোনাবিধি মেনে চলুন। আর এভাবেই ভালোবাসা দিতে থাকুন। আমি আরও ভালো করার চেষ্টা চালিয়ে যাব।