শাহজাহান রিজেন্সি রিভিউ: চৌরঙ্গীর খাঁচায় সৃজিতের মন্দ-ভালো গল্প !

Last Updated:
#কলকাতা: হয়তো খুব কম বাঙালি পাওয়া যাবে যাঁরা শঙ্করের লেখা জনপ্রিয় উপন্যাস চৌরঙ্গী পরেননি ৷ হয়তো খুব কম বাঙালি পাওয়া যাবে যাঁরা উত্তম কুমার অভিনীত ‘চৌরঙ্গী’ দেখেননি ৷ আর এ যাবৎকালে হয়তো অনেক কম বাঙালি পাওয়া যাবে যাঁরা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি মুক্তি পেলে (নানা সমালোচনা উপেক্ষা করেও) একটি বার সিনেমা হলে যায়নি ৷ উপরের এই তিনটি পয়েন্টের মিলনই হল ‘শাহাজান রিজেন্সি’র ইউএসপি৷ একদিকে চৌরঙ্গী, উত্তমকুমারের অভিনীত ছবির নস্ট্যালজিয়া আর সৃজিত বাবু ঠিক কেমন করে এই ছবির রিমেক ঘটালেন ? তা দেখতে যাওয়ার কৌতুহল ৷
প্রথমেই বলে রাখা দরকার, এই ছবি মোটেই ‘চৌরঙ্গী’ ছবির রিমেক নয় ৷ হ্যাঁ, শঙ্করের উপন্যাস থেকে কাঠামো ধার করেছেন সৃজিত, তবে সেই কাঠামোতে নিজের মতো করে গল্পের প্রলেপ লাগিয়েছেন ৷ টাচ দিয়েছেন এই সময়ের ৷ আর তাই তো, ছবির শুরুতেই ‘রুদ্র’ চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, এই ছবির সব চরিত্রেরই অদলবদল ঘটে গিয়েছে ৷ আর এই অদলবদলেই সৃজিত হাত পাকিয়েছেন নিজের মতো করে ৷
advertisement
অটোগ্রাফ ছবিতে সৃজিত ‘নায়ক’কে অ্যাডপ্ট করেছিলেন, ‘এক যে ছিল রাজা’তে ‘সন্ন্যাসী রাজা’, আর এবার সেই উত্তমকুমারের ‘চৌরঙ্গী’কেই বেছে নিলেন সৃজিত৷ সে ভালো, ‘আজকাল তো আর বই পড়ার সময় হয় না !’ ছবিতে রুদ্র-র মুখ দিয়ে এই সংলাপ বলিয়ে, ১৯৬২-এর চৌরঙ্গীকে এই সময়ে নিয়ে আসলেন সৃজিত ৷ আর তারপর গল্প চলল, শাহজাহান রিজেন্সির কাঁচের দরজা থেকে প্রত্যেকটি রুমে, লবিতে, ব্যাংকুয়েটে ৷ তারপর দুম করে এসে চরিত্রগুলোর পতন বা অনিবার্য সমাপ্তি !
advertisement
advertisement
এই ছবির গল্প গুলোকে চ্যাপ্টারে ভাগ করেছেন সৃজিত ৷ চেক ইন থেকে চেক আউট! আর গোটা ছবিতে এই ভাবেই একের পর চরিত্রের ‘চেক ইন-চেকআউট’কেও বেঁধে দিয়েছেন সৃজিত ৷ মানে চরিত্রের ভবিতব্যকে বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি ৷
তা কমলিনী (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) হোক, কিংবা মিসেস সরকার (মমতা শংকর), আবার হোটেল ম্যানেজার সমীরণ (আবির চট্টোপাধ্যায়) মানে চৌরঙ্গীর সেই স্যাটা বোস ৷ রয়েছেন নিত্যহরিও তবে সৃজিতের ছবিতে তিনি শুচিবায়ুগ্রস্ত নন, বরং তাঁর ‘প্রান্তিক’ অবস্থান ৷ বাদ পড়ে না হোটেলের মালিক মকরন্দের (অঞ্জন দত্ত) উন্মুক্ত জীবনও ৷ তবে চৌরঙ্গীর সেই রোজি চরিত্র এখানে শুধুই সংলাপে ৷ বরং সেই জায়গাটা পুরো ফিলআপ করেছেন একা কমলিনীই ! চৌরঙ্গীর অনিন্দ্য পাকড়াসি এখানে অর্নব সরকার (অর্ণব ভট্টাচার্য) ৷
advertisement
মোটামুটি এই চরিত্র গুলোকেই হোটেলের ঝকঝকে দেওয়ালে সাজিয়েছেন সৃজিত৷ আর রুদ্র (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) ঠিক যেন কথক ঠাকুর, একের পর মোড়ক খুলেই যাচ্ছিলেন ৷
শাহাজান রিজেন্সি মাল্টিস্টারার ! একের পর এক দুঁদে অভিনেতাদের ফ্রেমে ভিড় ৷ কিন্তু তারই মাঝে সবাইকে সরিয়ে একাই নজরটা টেনে রাখলেন স্বস্তিকা ! অপূর্ব অভিনয় করেছেন তিনি ৷ স্বস্তিকার জন্যই বার বার দেখা যায় এই ছবি ৷ বরং, কিছুটা হলেও ম্লান আবির ৷ পরমব্রত নিজের জায়গায় একেবারে পারফেক্ট ৷ জাত অভিনেত্রীর প্রমাণ দিয়েছেন মমতাশঙ্কর ৷ অসাধারণ ৷ আগের সব ছবি থেকে আলাদা হয়ে একেবারে ঝকঝকে অর্নিবান ৷ অঞ্জন দত্ত, রুদ্রনীল, কাঞ্চন, সুজয়প্রসাদ যথাযথ ৷ তবে ঋত্বিকার চরিত্রটি বড্ড বেশি ন্যাকা ! ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নিজের মতো করে চরিত্রে মানিয়ে উঠেছিলেন ৷
advertisement
অনেকদিন পর সৃজিতের ছবিতে ভালো গানের ব্যবহার ৷ তবে কানে থেকে যায় ‘কিচ্ছু চাইনি আমি...’ গানটি ৷ যা ছবির আত্মাকে ধরে রাখে৷
তবে এত কিছু সত্ত্বেও সৃজিতের শাহাজান রিজেন্সিতে খামতিও প্রচুর ৷ প্রথমেই বলতে হয় সংলাপ ৷ বহু দৃশ্যতেই সংলাপ ‘জ্ঞান’-এ রূপান্তরিত হয়েছে ৷ ছবির সাবপ্লটকে যা বিরক্ত করে ৷ ঠিক যেমন, সুজয়প্রসাদের মুখে বার বার প্রান্তিক মানুষদের হতাশার বিবরণ৷ এটা হয়তো না বললেই চলতো ৷ সিনেমার দৈর্ঘ্য আরও একটু কম হতেই পারত, বিশেষ করে দ্বিতীয়ভাগে ৷
advertisement
‘শাহজাহান রিজেন্সি’দেখতে বসে এটা বার বার মনে হতে পারে, হোটেল এমন একটা বড় বাড়ি, যেখানে হাজারো স্মৃতির ভিড় ৷ একই চাদরে, একই বালিশে, একই রুমে না জানি কত গল্প ঘটে যায় রোজ ৷ চেক ইন, চেক আউটে থেকে নাম, তারিখ, ঠিকানা খাতায় বন্দি ৷ আর সেই খাতা থেকেই কয়েকটা পাতা ছিঁড়ে চরম ক্রাইসিসের গল্পই রয়েছে সৃজিতের শাহাজান রিজেন্সিতে ৷
বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
শাহজাহান রিজেন্সি রিভিউ: চৌরঙ্গীর খাঁচায় সৃজিতের মন্দ-ভালো গল্প !
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement