Lajja Web Series : ক্ষমতাভেদে মহিলাদের সঙ্গে পুরুষদের আচরণ বদলে যায়: ‘লজ্জা’র পরিচালক অদিতি
- Published by:Sayani Rana
- news18 bangla
Last Updated:
Lajja Web Series : মৌখিক নিগ্রহ যাঁদের নিত্যসঙ্গী তাঁদের জীবনের গল্পকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন অদিতি রায়। সিরিজটি নিয়ে ইতিমধ্যেই দর্শক মহলে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন সিরিজ ‘লজ্জা’ নিয়ে কী বললেন অদিতি?
গালিগালাজ করা বা অশ্রাব্য কথা বলাই কেবল মৌখিক নিগ্রহ (ভার্বাল অ্যাবইউজ) নয়। ‘তোর দ্বারা কিছু হবে না’- আপাত ভাবে সামান্য এই কথাটা দিনের পর দিন কাউকে বলে গেলেও, ভেঙে যায় মনের মেরুদণ্ড। ‘এটা করো না’, ‘এখানে যেও না’ ইত্যাদি নানা কথা প্রতিনিয়ত শুনতে শুনতে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকা মানুষটা ভুলে যায় নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ। একটা সময় হারিয়ে যায় জীবনের মূলস্রোত থেকে। সেই সব মানুষদের না বলতে পারা কথাই জীবন্ত হয়ে উঠেছে অদিতি রায় পরিচালিত ‘লজ্জা’ সিরিজে। ‘হইচই’তে সিরিজটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই মৌখিক নিগ্রহের বিষয়টি নিয়ে বেড়েছে আলোচনা। অনেকের মতে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে এতদিন কোনও কথাই সেভাবে হয়নি। এটা যে আইনের চোখেও দণ্ডনীয় অপরাধ সেটাই বহু মানুষের কাছে অজানা ছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে অদিতি কোন ভাবনা থেকে এই বিষয়টি সিরিজের জন্য বেছে নিলেন? জানালেন নিউজ ১৮ বাংলা ডিজিটালকে।
মৌখিক নিগ্রহের (ভার্বাল অ্যাবইউজ) মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কাজের ভাবনা কী ভাবে মাথায় এল?
অদিতি: ‘লজ্জা’র চিত্রনাট্যকার সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায় মৌখিক নিগ্রহের বিষয়টি নিয়ে বহুদিন ধরে গবেষণা করেছেন। তা নিয়ে নানা সেমিনারও করেছেন। কিন্তু সাধারণত যে সব বিষয় নিয়ে সেমিনারে আলোচনা করা হয়, তা আমরা খুব গুরুগম্ভীর ভাবে দেখি, বলা ভাল সব স্তরের মানুষের কাছে গিয়ে তা পৌঁছয় না। সেই জায়গা থেকেই সম্রাজ্ঞীর মনে হয় যদি মূলস্রোতের গল্প হিসাবে এটি সকলের কাছে তুলে ধরা যায়। এই ভাবনার কথা ও হইচইতে এসে আমাদের কাছে জানায়। সবটা শুনে এই গল্পটার সঙ্গে খুব একাত্ম হয়ে পড়ি। মনে হয় আমরা নিজেরাও তো কোনও না কোনও ভাবে নানা সময়ে মৌখিক নিগ্রহের শিকার হয়েছি। ফলে সময় এসেছে এই নিয়ে কথা বলার, সেই জায়গা থেকেই ‘লজ্জা’র পথ চলা শুরু।
advertisement
advertisement
লজ্জা-র হাত ধরে তো এখন মৌখিক নিগ্রহের বিষয়টি অনেকের কাছেই আরও বেশি স্পষ্ট…
অদিতি: হ্য়াঁ৷ তবে আমার মতে, শুধু যে গালিগালাজ করা বা অশ্রাব্য কথা বলাই মৌখিক নিগ্রহ, তা কিন্তু নয়। ‘তোর দ্বারা কিছু হবে না’ এই কথাটা দিনের পর দিন কাউকে বলে গেলেও, তার মনোবল ভেঙে দেওয়া যায়। আসলে কথার জোরে একটা মানুষের মনের জোর ভেঙে দেওয়া যায়, মানসিক ভাবে তাঁকে অশান্ত করে দেওয়া যায়। এমনকী ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করাটাও একপ্রকার মৌখিক নিগ্রহ। ধরুন আমি ব্যক্তিগত ভাবে একজনকে অপছন্দ করি, তিনি আমাকে রোজ তাঁর সঙ্গে কফি খেতে যাওয়ার কথা বলছেন। তিনি এমনই ব্যক্তি যাকে হয়তো না বলাটা কঠিন, বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে। এই ক্ষেত্রেও তো একটি মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। একজন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে কোথায় যাবেন? কী করবেন? এই বিষয়গুলি নিয়েও যখন কেউ মন্তব্য করেন সেটাও কিন্তু একটি মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে।
advertisement

কিন্তু কিছুদিন আগেই তো এক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন কী ভাবে মেয়েদের শাড়ি পরা উচিত…
অদিতি: তিনি ঠিক না ভুল সেই বিষয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাই না, কিন্তু আমি এই কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করি না। কোনও মানুষের সাজ-পোশাকটা তাঁর খুব ব্যক্তিগত বিষয়, এটা তাঁর ব্যক্তিগত অধিকারের জায়গা। অনেকেই বলেন, ‘সালোয়ার না শাড়ি পরতে হবে’, আবার অনেকে বলেন, ‘পেট দেখিয়ে শাড়ি পোরো না’ এটা কী ধরণের মন্তব্য? এটা অনেকে ভুলে যান যে পোশাকের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। তাই আমার মতে, যিনি যা মনে করবেন তাই পরবেন।
advertisement

‘লজ্জা’তো এরকম নানা বিষয়কে তুলে ধরেছে, সেক্ষেত্রে সমাজে এর কতটা ইতিবাচক প্রতিফলন দেখতে পাবেন বলে মনে করছেন?
অদিতি: সমাজের কথা আমি বলতে পারব না, সমাজ তো আমি বদলাতে আসিনি। আমার একটা কাজ দিয়ে সমাজ বদলেও ফেলতে পারব না। তবে দর্শকদের প্রসঙ্গে বলতে পারি, কারণ বহু মানুষের থেকে আমি অনেক ম্যাসেজ পেয়েছি। এমনটা নয় যে তাঁরা সকলেই সিরিজটি দেখে আমাকে জানিয়েছেন। এমন অনেকেই আছেন যারা সিরিজটির সামান্য কিছু অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছেন বা ট্রেলারটি দেখে আমাকে জানিয়েছেন, যে তাঁদের দেখার সাহস হচ্ছে না। তাঁরা বলেছেন, “আমার অসুবিধা হচ্ছে, আমার অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।” আমি তাঁদের একটা কথাই বলেছি এই মুহূর্তে দেখো না। যখন মনে হবে তুমি দেখার জন্য তৈরি তখনই দেখবে। আমার মতে, সিরিজটা যে দেখতেই হবে তা নয়, অনেকের সঙ্গে এই ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেছে, অনেকের পরিবারে এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোথাও গিয়ে তাঁরা এটা প্রকাশ করতে পারেন না। এমনকী অনেকে প্রিয়াঙ্কার চরিত্রে নিজেকে বা তাঁর মাকে খুঁজে পেয়েছেন। তাই মৌখিক নিগ্রহ নিয়ে কাজের ভাবনাটাকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে, আর একটা কথা না বললেই নয়, এক দর্শক এই সিরিজটি দেখে আমাদের লিখে জানান, যে এটা কেবল মৌখিক নিগ্রহ নয়, ‘মৌখিক ধর্ষণ’ও বটে। ফলে সবটা মিলিয়ে ‘লজ্জা’র ট্রেলারটা যে বহু মানুষের মনে দাগ কাটতে পেরেছে এটাই আমার এবং ‘লজ্জা’র টিমের বড় প্রাপ্তি।
advertisement
পর্দার জয়ার মধ্য়ে অনেকেই নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন। প্রিয়াঙ্কাকেই কেন বেছে নেওয়া?
অদিতি: আমি শুরু থেকেই জয়ার চরিত্রে প্রিয়াঙ্কাকে চেয়েছিলাম। এই চরিত্রটার জন্য আমার আশেপাশে প্রিয়াঙ্কা ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। নিঃসন্দেহে ও খুব ভাল একজন অভিনেত্রী। এক্ষেত্রে অনেকে বলতে পারেন, এমন ভাল অভিনেত্রী তো অনেকেই আছেন। কিন্তু আমাকে সব থেকে বেশি যেটা আকর্ষণ করেছিল সেটা হল ওঁর মুখ। ওঁর মুখে ও চেহারায় একটা ব্যপার রয়েছে যেটা জয়ার চরিত্রটার সঙ্গে খুব ভাল যায়। জয়ার চরিত্রে যে অসহায়তাটা চেয়েছিলাম সেটা প্রিয়াঙ্কার মতো করে কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারত বলে আমার মনে না।
advertisement

আপনার কী মনে হয় মেয়েরাই কেবল মৌখিক নিগ্রহের শিকার হন? আর সেটা কি ছেলেদের দিক থেকেই বেশি আসে?
অদিতি: আমাদের চারপাশটা দেখলেই বোঝা যাবে, যে যতটা সহজে একটি মেয়েকে মৌখিক নিগ্রহ করা যায়, একটি ছেলেকে অতটা সহজে করা যায় না। কিন্তু শুধু যে মেয়েরাই মৌখিক নিগ্রহের শিকার হন, তা কিন্তু নয়। ছেলেদেরও এর সম্মুখীন হতে হয়, তবে তুলনায় কম। আসলে সবটাই ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাঁরা অনেক সময় স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। কিন্তু অফিসে তাঁর মহিলা বসের সঙ্গে সেই একই আচরণ করতে পারেন না। দু’জনেই মহিলা কিন্তু জায়গা আর ক্ষমতা ভেদে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার ধরণটাও পাল্টে যায়। তবে শুধু একটা দিক দেখলে চলবে না। ছেলেদেরও অফিসে, বাড়িতে নানা মৌখিক নিগ্রহের শিকার হতে হয়। এমনকী মেয়েদের দিক থেকেও অনেক সময় মেয়েদের দিকে নানা তির্যক মন্তব্য ধেয়ে আসে।
advertisement
সিরিজেও দেখা গিয়েছে জয়ার মা-শাশুড়ি তার সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক আচরণ করছে! ‘মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু’র প্রবাদে কি আপনি আদৌ বিশ্বাসী?
অদিতি: ‘মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু’ কথাটা খুবই হালকা কথা, আমি এটা মানি না। আসলে মায়েদের একধরনের বড় হওয়া থাকে। ছোট থেকে অনেকেই শিখে বড় হন যে ‘মেনে নিতে হয়’, ‘মানিয়ে নিতে হয়’। আর আমাদের গল্পেও মা তার মেয়েকে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। সংসারে সবটা পেয়েও জয়ার অখুশি হওয়াটা তার শাশুড়ির কাছে খুব অস্বাভাবিক। তাই তারা যা জেনে বড় হয়েছে সেটাই জয়ার ভালর জন্যই তাকে শেখানোর চেষ্টা করছে। এটা করতে গিয়ে যে তারা জয়ার ক্ষতি করে ফেলছেন, এই ভাবনাটা কিন্তু তাদের মাথায় একেবারেই নেই, থাকলে হয়তো এমনটা হতো না।

ছোট থেকেই কী ভাবে একটি শিশুকে মৌখিক নিগ্রহের বিষয়টি সম্পর্কে বাবা-মায়েরা শিক্ষা দিতে পারেন বলে মনে করেন?
অদিতি: একবারেই বাড়ি থেকেই সবটা শুরু হয়। যেমন এই গল্পেই দেখানো হয়েছে যে বাবাকে দেখে জয়ার মেয়ে শিখেছে যে মাকে অত গুরুত্ব না দিলেও চলবে। তাকে যা ইচ্ছে বলা যায়। এই জায়গাতেই আসলে সংযত হবে হবে, শিশুদের সামনে নিজের আচরণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি শিশুদের বোঝাতে হবে কোন কথা বলা যায় আর কোন কথা বলা যায় না। তবে এটাও ঠিক যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মা ছোট থেকে শেখান যে, ‘খারাপ করে কথা বলবে না’, বা ‘কাউকে দুঃখ দিয়ে কথা বলবে না’। কিন্তু ‘মৌখিক নিগ্রহ’ কথাটা হয়তো ব্যবহার করেন না। আসলে একটা শিশুকে ছোট থেকে সংবেদনশীলতা নিয়ে অবগত করলে সে খারাপ কিছু বলার বা করার আগে হয়তো দু’বার ভাববে, যে যাকে সে খারাপ কথা বলছে ‘লজ্জা’টা তাঁর নাকি নিজেরই?
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
April 08, 2024 6:07 PM IST